চলমান বিক্ষোভে দমনে ইরানের ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নারীদের শ্লীলতাহানির মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এক বিক্ষোভকারী নারীকে গ্রেপ্তারের পর তার স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিচ্ছে। এই ভিডিওটি এরই মধ্যে সারা বিশ্বের ইরানিদের ক্ষুব্ধ করেছে।
ভিডিওর সত্যতার বিষয়টি অস্বীকার করেনি ইরানি কর্তৃপক্ষ। বরঞ্চ বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ায় অভিযুক্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা না বলে ইরানের বাসিজ আধাসামরিক বাহিনীর সাইবারস্পেস সদর দপ্তরের প্রধান মোসলেম মঈন উল্টো ভিডিও প্রকাশকারীদের দুষছেন।
তার মতে, ভিডিওটি ভিন্নমতাবলম্বীরা জনগণের আবেগকে উস্কে দেয়ার জন্য প্রকাশ করেছে।
ভিডিওটিতে হয়রানির ঘটনা পুরোই স্পষ্ট এবং ইরানি কর্তৃপক্ষ এটিকে বেশ স্বাভাবিকভাবেই দেখছে।
রেভল্যুশনারি গার্ডের সাথে সম্পৃক্ত ফার্স নিউজ এজেন্সি পুলিশের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলেছে যে ‘দাঙ্গার সময় এরকম কিছু এনকাউন্টার অনিবার্য।’
নিরাপত্তা বাহিনীর অনেক নারী সদস্যও নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এ ধরনের শ্লীলতাহানির ঘটনা আরও ঘটেছে।
কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেপ্তার করে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি।
পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই মাহসা অসুস্থ হয়ে পড়েন, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়। পুলিশ মাহসাকে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরিবারের অভিযোগ গ্রেপ্তারের পর তাকে পেটানো হয়।
মাহসার মৃত্যুর পর রাস্তায় বিক্ষোভের পাশাপাশি ফেসবুক ও টুইটারে #mahsaamini এবং #Mahsa_Amini হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে চলছে প্রতিবাদ।
মাহসা আমিনির মৃত্যুর সঙ্গে এক পুলিশ কর্মকর্তার হাতে বালুচ কিশোরীর ধর্ষণের ঘটনা ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের চাবাহার শহরের পুলিশপ্রধানের হাতে ওই কিশোরী ধর্ষণের প্রতিবাদ জানাতে সেখানেও চলছে প্রবল বিক্ষোভ।
ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পরই নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়। বাধ্যতামূলক এই পোশাকবিধি মুসলিম নারীসহ ইরানের সব জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মের নারীদের জন্য প্রযোজ্য।
একেবারে শুরু থেকেই বিভিন্ন সময়ে পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন করছেন ইরানি নারীরা।
হিজাব আইন আরও কঠোরভাবে প্রয়োগের জন্য চলতি বছরের ৫ জুলাই ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি একটি আদেশ জারি করেন। এর মাধ্যমে ‘সঠিক নিয়মে’ পোশাকবিধি অনুসরণ না করা নারীদের সরকারি সব অফিস, ব্যাংক এবং গণপরিবহনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।