ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সোমবার দেশটির অনেক অঞ্চল বিদ্যুৎহীন হয়ে গেছে। ফলে আসন্ন শীতের কারণে এই বিদ্যুৎবিভ্রাট গভীর আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে।
ইউক্রেনের জরুরি সেবা বিভাগ এখন পর্যন্ত ৪টি অঞ্চলে সাময়িক বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ার বিষয়টি জানিয়েছে। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ বেসামরিক নাগরিকদের, ব্যবসায়ীদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি শক্তি ব্যবহার সীমিত করতে বলেছে।
এ ছাড়া দেশটির জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় হামলার পর দেশটি ইউরোপীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছে।
কিছু এলাকায় এরই মধ্যে পেট্রল স্টেশনে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।
টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে প্রেসিডেন্টের অফিসের ডেপুটি হেড কিরিলো টিমোশেঙ্কো বলেছেন, ‘এটা এখন স্পষ্ট যে বেশির ভাগ ক্ষেপণাস্ত্র বিভিন্ন শহরের পাওয়ার সিস্টেমে আঘাত করেছে।’
তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘আপনাদের এই ধরনের গোলাগুলির পরিণতি রোলিং ব্ল্যাক আউটের (ধারাবাহিকভাবে বিদ্যুৎহীন অবস্থা) জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর পশ্চিম ইউক্রেনের লেভিভে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু করা সম্ভব হলেও অন্যান্য অঞ্চল বিশেষ করে পশ্চিমে তারনোপিল, উত্তর-পূর্বে সুমি এবং মধ্য ইউক্রেনের পোল্টাভায় বিদ্যুৎ কবে দেয়া সম্ভব হবে, তা স্পষ্ট নয়।
এমন পরিস্থিতিতে কিয়েভ শহর কর্তৃপক্ষ বিকেল ৫টা থেকে বিদ্যুতের ব্যবহার সীমিত করার জন্য বাসিন্দাদের ও ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানিয়েছে।
রাত ১০টা পর্যন্ত বিজ্ঞাপন বিলবোর্ডের মালিকদের এই সময় লাইট বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পৌর কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলছে, ‘আমরা কিয়েভের বাসিন্দাদের কাছে যখনই সম্ভব বেশি শক্তি খরচ করে এমন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার জন্য আবেদন করছি। শহরকে পাওয়ার গ্রিডের গুরুতর লোড থেকে বাঁচতে সাহায্য করুন।’
সামনে ভয়াবহ শীত
যুদ্ধের অবসান না হওয়ায় এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণে দেশটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার কারণে সামনের ভয়াবহ শীতের বিষয়ে সতর্ক করেছে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ। সোমবারের হামলা সেই উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে।
ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দারা বলেছেন যে হামলার মূল লক্ষ্য ছিল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ধ্বংস করার পাশাপাশি ‘ইউক্রেনীয়দের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা এবং ইউরোপীয় জনগণকে ভয় দেখানো।‘
যদিও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তিনি ক্রিমিয়া সেতুতে হামলার প্রতিশোধ চাইছিলেন। কিন্তু ইউরোপে মেরিন সেনাদের নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অবসরপ্রাপ্ত আমেরিকান জেনারেল বেন হজেস বলছেন এর উল্টো কথা।
তার মতে, হামলার তীব্রতা এবং পরিমাণ ইঙ্গিত করে যে ক্রিমিয়া সেতুতে বিস্ফোরণের আগে থেকেই এর পরিকল্পনা করা ছিল।
রয়টার্সকে হজেস বলেন, ‘আজকের মতো অনেক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা, এটি এমন কিছু নয় যে আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
যুদ্ধ এরই মধ্যে ইউক্রেনের এনার্জি নেটওয়ার্কের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। এমনকি রাশিয়ার সেনাদের দখলে থাকা দক্ষিণ ইউক্রেনে ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপোরিজ্জা বন্ধ রয়েছে। এই কেন্দ্রটি পুরো ইউক্রেনের পাঁচ ভাগের এক ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করত।
কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ইউক্রেনীয়দের জ্বালানি কাঠ জোগাড় করে রাখতে বলেছে। হোম হিটিংয়ে কোনো বিপর্যয়কর পরিস্থিতি হলে যাতে কাঠ পুড়িয়ে ঘর গরম রাখা যায়।