ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে নেতৃত্ব দিতে জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিনকে নতুন কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে ক্রেমলিন। ইউক্রেনের পাল্টা অভিযানে একের পর এক এলাকা হাতছাড়া হওয়া ও ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত নিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
রাশিয়ার দুই সিনিয়র সামরিক কমান্ডারকে বরখাস্ত করার পরদিন শনিবার নতুন কমান্ডারকে নিয়োগের ঘোষণা দেয়া হয় বলে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়।
ইউক্রেনের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণে রাশিয়ার কাছে হারানো অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধার করেছে কিয়েভ। ভয়াবহ বিস্ফোরণে আংশিক ধসে গেছে ক্রিমিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার সংযোগ রক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ সেতু। বিশেষত সেতু ধসের ঘটনায় বড় ধাক্কা খেয়েছে রাশিয়া। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে নেয়ার পর এই সেতু নির্মাণ করে মস্কো। কৌশলগত অবস্থান বিবেচনায়ও এই সংযোগ সেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কিয়েভ বাহিনীর এই আক্রমণ প্রতিরোধে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রাশিয়া প্রতিবেশী দেশটিতে তার বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে রদবদল আনল।
কে এই জেনারেল সুরভিকিন?
সের্গেই সুরোভিকিনি ১৯৬৬ সালে সাইবেরিয়ান শহর নোভোসিবিরস্কে জন্মগ্রহণ করেন। আশির দশকে তিনি সোভিয়েত বাহিনীর হয়ে আফগানিস্তানেও যুদ্ধ করেছেন।
জেনারেল সুরোভিকিনকে একজন নির্মম জেনারেল হিসেবে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা নীতি থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক জেমসটাউন ফাউন্ডেশন।
সংস্থাটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০০৮ সালের পর জেনারেল স্টাফ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পদে তিনি দুর্দান্ত একটি ক্যারিয়ার তৈরি করেছিলেন। সেনাবাহিনীতে আমূল সংস্কার আনতে গিয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন, যে দায়িত্বটি পালনের জন্য নির্মমতার প্রয়োজন ছিল।’
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর জুনে রাশিয়ার দক্ষিণ সামরিক গোষ্ঠীর প্রধান হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল জেনারেল সুরোভিকিনকে।
সিরিয়ায় ২০১৭ সালে রুশ সামরিক অভিযানে নেতৃত্ব দেন এই জেনারেল। রুশ বিমান বাহিনীর ওই অভিযানে কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য তাকে ‘রাশিয়ার হিরো’ উপাধি দেয়া হয়।
সুরোভিকিনকে দু’বার কারাগারেও যেতে হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন পর্বের অবসানের আগে ১৯৯১ সালের আগস্টে মস্কোতে অভ্যুত্থানের সময় তার নেতৃত্বাধীন সৈন্যরা তিন বিক্ষোভকারীকে হত্যা করে। এজন্য তাকে ছয় মাসের জন্য কারাগারে যেতে হয়। অবশ্য পরে তাকে বিনাবিচারেই ছেড়ে দেয়া হয়। ওই ঘটনার চার বছর পর অবৈধ অস্ত্র ব্যবসার জন্য তাকে সাজা দেয়া হয়, যা পরে বাতিল করা হয়েছিল।
এই জেনারেলের বিরুদ্ধে সিরিয়ায় নৃশংস বোমা হামলায় নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগও ওঠে। রুশ বিমান বাহিনীর ওই অভিযানে সিরিয়ার আলেপ্পো শহরের বেশিরভাগই ধ্বংস করে দেয়া হয়। অথচ ওই সময় রাশিয়া বাশার আল-আসাদের পক্ষে হস্তক্ষেপ করেছিল।
সিরিয়ায় নিয়োজিত ওয়াগনার ভাড়াটে সেনা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিনকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা লাইভ২৪ সুরোভিকিনকে একজন কিংবদন্তি হিসেবে উল্লেখ করেছে। প্রিগোজিন বলেন, ‘রুশ সেনাবাহিনীতে সুরোভিকিন সবচেয়ে দক্ষ কমান্ডার।’
পুতিনের পরিকল্পনা কী?
প্রশ্ন উঠেছে, ইউক্রেনে নতুন কমান্ডার নিয়োগের নেপথ্যে কী পরিকল্পনা এঁটেছেন পুতিন।
কিছু পর্যবেক্ষক বিশ্বাস করেন, সুরোভিকিনের এই নিয়োগ ইঙ্গিত দেয় যে রাশিয়া তার যুদ্ধাভিযানকে একটি এলাকায় কেন্দ্রীভূত করতে চায়। সেটি লুহানস্ক বা দোনেস্ক হতে পারে। আবার দক্ষিণেও হতে পারে।
সুইস মিলিটারি রিভিউ থেকে আলেকজান্দ্রে ভাউট্রাভার্স বলেন, ‘আমরা যা দেখছি তা হচ্ছে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের সংকোচন।’
রুশ বাহিনী সেপ্টেম্বরের শুরুতে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণের মুখে উত্তর-পূর্ব খারকিভ অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। আর সে সুযোগে কিয়েভ বাহিনী হাজার হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা পুনরুদ্ধারের পথ সহজ করে দেয়।
রুশ সৈন্যরা খেরসনের দক্ষিণাঞ্চলের পাশাপাশি পূর্ব ইউক্রেনে লাইমান পরিবহন কেন্দ্রের এলাকাও হারিয়েছে।
শনিবার খেরসনে ক্রেমলিন-সমর্থিত এক কর্মকর্তা দক্ষিণ প্রদেশ থেকে বেসামরিক লোকজনকে আংশিক সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন।
কিরিল স্ট্রেমাসভ নামের এই কর্মকর্তা রাশিয়ার রাষ্ট্রচালিত আরআইএ নভোস্তি সংস্থাকে বলেন, ‘খেরসনের জন্য সামনে কঠিন সময় আসার আশঙ্কায় শিশু ও তাদের মা-বাবা এবং বয়স্ক লোকজনকে দুটি দক্ষিণ রাশিয়ান অঞ্চলে স্থানান্তর করা হতে পারে।’