বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যুদ্ধবিরোধী কবিতা: রুশ কবিকে ‘ধর্ষণ করল দাঙ্গা পুলিশ’

  •    
  • ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২৩:২১

কবির আইনজীবী বলেন, ‘মস্কো পুলিশ আর্টেম কামারদিনের ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে তাকে এবং তার বান্ধবীকে মারধর করে। পরে একটি ডাম্বেল দিয়ে তাকে ধর্ষণ করে।'

২৭ সেপ্টেম্বর, মস্কো সময় বেলা ২টা। মস্কোর টভারসকোই জেলা অফিস থেকে বেরিয়ে আসছেন রুশ কবি ও মানবাধিকারকর্মী আর্টেম কামারদিন। তার সঙ্গে চিকিৎসক ও পুলিশ। বাইরে তার জন্য অপেক্ষা করছে অ্যাম্বুলেন্স।

কামারদিনের আইনজীবী বলেন, ‘মারধরের ফলে আহত হয়েছিলেন কামারদিন। এ জন্য পুলিশ অ্যাম্বুলেন্স ডেকেছিল। তবে চিকিৎসকরা তেমন গুরুতর আঘাত পায়নি।’

পরদিন সকালে রাশিয়ার টেলিভিশনে বলা হয়, গুরুতর আঘাত না থাকায় কামারদিনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। তাকে আপাতত আটকে রেখেছে পুলিশ।

কামারদিনকে ২৬ সেপ্টেম্বর চরমপন্থা মামলায় (ফৌজদারি বিধির ২৮২ ধারার অংশ ২) সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

এর আগে রুশ দৈনিক নভায়া গেজেটা কোনো উৎসের উদ্ধৃতি ছাড়া জানায়, গ্রেপ্তারের পর আইন প্রয়োগকারীরা কারমারদিনকে ভীষণ মারধর করে। একপর্যায়ে তার মলদ্বারে একটি ডাম্বেল ঢুকিয়ে দিয়েছিল।

কী ঘটেছিল সেদিন

২৬ সেপ্টেম্বর সাব-মেশিনগান হাতে একদল দাঙ্গা পুলিশ কামারদিনের অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালায়। বাড়িটিতে তখন কামারদিনের সঙ্গে তার বান্ধবী আলেকজান্দ্রা পপোভা ও মানবাধিকারকর্মী আলেকজান্দ্রার মেনিউকভ ছিলেন। কামারদিনের গ্রেপ্তারের ফুটেজ টেলিগ্রাম চ্যানেল ‘১১২’ সম্প্রচার হয়েছিল

রুশ দৈনিক নোভায়া গেজেটা বলছে, অভিযানের সময় কামারদিনকে তার কবিতা পাঠের জন্য ক্যামেরার সামনে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছিল।

২৫ সেপ্টেম্বর মস্কোর ট্রাইমফালনায়া স্কোয়ারে ফিউচারিস্ট আন্দোলনের নেতা ও কবি ভ্লাদিমির মায়াকভস্কির স্মৃতিস্তম্ভে যুদ্ধবিরোধী কবিতা সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত হয়ে কামারদিন বলেছিলেন, ‘গ্লোরি টু কিভান রুশ, নভোরোসিয়া- সাক ইট!’ যার অর্থ, কিভান রুশের জয় হোক, চুলোয় যাক নভোরোসিয়া।

আদি রুশরা পূর্ব স্লাভীয় উপজাতি থেকে এসেছিল, তাদের সাংস্কৃতিক পূর্বপুরুষদের ভিত্তি কিভান রুশে। আর নতুন রাশিয়াকে ডাকা হয় নভোরোসিয়া।

টেলিগ্রাম চ্যানেল ‘১১২’ প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, কামারদিন একটি অ্যাপার্টমেন্টে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন, হাত দুটি পেছনে বাঁধা। তার মুখে মারধরের চিহ্ন ছিল।

এ সময় তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার ভুল হয়েছে, ক্ষমা চাই। আমি যা করেছি তার জন্য অনুতপ্ত।

কিল মি, মিলিশিয়াম্যান!- কবিতাটি আর কখনো পড়ব না, কথা দিলাম।’

কামারদিনের বান্ধবী আলেকজান্দ্রা পপোভা বলেন, ‘অভিযানের সময় আমিও নিপীড়নের শিকার হয়েছি। আমার চুল কেটে দিয়েছিল ওরা। চেহারা, মুখ স্কচটেপ এবং সুপারগ্লু দিয়ে আটকে দিয়েছিল।

‘আমাকেও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তারা আমাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের হুমকিও দেয়। পরে কামারদিনকে মারধর করার ভিডিও আমাকে দেখায়। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ৬০০ ডলার খোয়া গেছে।’

গ্রেপ্তারের পর কামারদিন এবং পপোভাকে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মানবাধিকারকর্মী আলেকজান্দ্রার মেনিউকভকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

রাশিয়ান সেনাবাহিনীকে ‘অসম্মান’ করার বিষয়ে একটি প্রশাসনিক প্রতিবেদন পপোভার বিরুদ্ধে তৈরি করা হয়েছিল। পরে অবশ্য তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তিনিই এখন চরমপন্থা সংক্রান্ত ফৌজদারি মামলার সাক্ষী।

চিকিৎসকরা পপোভার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছেন। অভিযানের সময় মারধরের শিকার আলেকজান্দ্রার মেনিউকভও ফৌজদারি মামলার সাক্ষী। তার ডান কান, বাম হাতের কবজি ও পিঠে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

ওই আয়োজনে অংশ নেয়া অন্য দুজনকেও চরমপন্থার ফৌজদারি মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন ২৬ বছর বয়সী নিকোলাই ডেনেকো এবং ২১ বছর বয়সী ইয়েগর শেটাভবা। তারাও ক্যামেরার সামনে সেদিনের ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন।

ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ মায়াকভস্কি ছিলেন রুশ এবং সোভিয়েত কবি, নাট্যকার, শিল্পী এবং মঞ্চ ও চলচ্চিত্র অভিনেতা। বিশ শতকের প্রথম দিকের রুশ ফিউচারিজমের প্রতিনিধিদের একজন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর