ইতালির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে উগ্র ডানপন্থি ব্রাদার্স পার্টির নেতা জর্জিয়া মেলোনি। ২৫ সেপ্টেম্বরের ভোটে মেলোনির দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায়, সাত দশকের বেশি সময় পর ইতালির ক্ষমতায় আসছে উগ্র ডানপন্থিরা।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ইতালি। উগ্র ডানপন্থিরা ক্ষমতায় এলে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ বিপদে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও ভোটের পর মেলোনি জানিয়েছিলেন, তারা সবার জন্য সরকার গঠন করবেন, জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে না।
তিনি বলেন, ‘ব্রাদার্স অফ ইতালির নেতৃত্বে ডানপন্থি সরকারের পক্ষে রায় দিয়ে ইতালীয়রা নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।’
মেলোনির দল পেয়েছে ২৬ শতাংশ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এনরিকো লেটার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভোট ১৯.৬ শতাংশ।
ভোটের এই ফলে সামনে দুঃসময় দেখছেন মধ্য-বামপন্থি এনরিকো। তিনি বলেন, ‘উগ্র ডানপন্থিদের বিজয় ইতালি এবং ইউরোপের জন্য দুঃখজনক অধ্যায়। তারপরও আমরা শক্তিশালী একটি বিরোধীদল দেশকে উপহার দেব।’
উগ্র ডানপন্থি ব্রাদার্স পার্টির নেতা জর্জিয়া মেলোনি
মাত্তেও সালভিনির লিগ ফর সালভিনি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলুসকোনির সেন্টার রাইট ফোর্জা ইতালিয়া দলের সঙ্গে জোট বেঁধেছিলেন মেলোনি। ভোটে সালভিনির দল পেয়েছে ৮.৮৭ শতাংশ ভোট; বারলুসকোনির পক্ষে গেছে ৮.১২ শতাংশ।
সব মিলিয়ে প্রায় ৪৪ শতাংশ ভোটারের সমর্থন নিয়ে পার্লামেন্টের সিনেট এবং চেম্বার- দুই কক্ষেরই নিয়ন্ত্রণ পাচ্ছে ডানপন্থি এই জোট।
চার বছর আগে হওয়া নির্বাচনে মেলোনির ব্রাদার্স পার্টি পেয়েছিল মাত্র ৪ শতাংশ ভোট। এবার জাতীয় ঐক্য সরকারে নিজেদের না জড়িয়ে বাজিমাত করেছে উগ্র ডানপন্থি দলটি।
ভোটে বাদার্স পার্টির অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে বিরোধী দলগুলোর বিভেদও কাজ করেছে। এক মাস আগেও ইতালির বাম এবং মধ্যপন্থি দলগুলো উগ্র ডানপন্থি মেলোনি জোটকে শক্ত চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত ছিল। তবে শেষপর্যন্ত তারা সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। বলা হচ্ছে, এতেই কপাল খুলেছে মেলোনির জোটের।
জোট বেঁধে ক্ষমতায় এলেও প্রধানমন্ত্রী পদে মেলোনির আসা এখনও কিছুটা অনিশ্চিত। কারণ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট মাতারেলা, যিনি ইতালির সংবিধান অনুসারে গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে অক্টোবরের শেষদিকে।
ন্যাটোর সদস্য ইতালি ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ইইউতে মেলোনির দেয়া বিভিন্ন বক্তব্যের কারণে তাকে হাঙ্গেরির জাতীয়তাবাদী নেতা ও প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে।
মেলোনির দুই জোটসঙ্গীর সঙ্গে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ভোটের কিছুদিন আগে বারলুসকোনি দাবি করেছিলেন, ইউক্রেনে আক্রমণ চালাতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বাধ্য করা হয়েছে। মস্কোর ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি।
ইতালির ডানপন্থি দলগুলোকে অভিনন্দন জানিয়েছেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক পরামর্শক বালাজ অরবান। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন অনেক বন্ধু প্রয়োজন, যারা ইউরোপের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে সক্ষম।’
মেলোনি জোটকে স্বাগত জানিয়েছেন ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থিরাও। ন্যাশনাল র্যালির নেতা জর্ডান বারডেলা বলেন, ‘ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডার লেয়েনকে মোলায়েম শিক্ষা দিয়েছে ইতালীয়রা।’