আলোচনার মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার আহ্বান জানিয়েছে ভারত ও চীন। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে শনিবার এ আহ্বান জানায় দিল্লি ও বেইজিং।
চলতি অধিবেশনের শুরু থেকেই চাপেই ছিলেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। অবশেষে শনিবার তিনি ইউক্রেন ইস্যুতে কথা বলেন। জানান, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘জঘন্য’ প্রচারণা চালাচ্ছে পশ্চিম।
তবে এদিন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সমর্থন দিতে দেখা যায়নি গুরুত্বপূর্ণ কোনো দেশকে। ফেব্রুরায়িতে ইউক্রেন অভিযানের কদিন আগে যে চীন রুশ প্রেসিডেন্টের কাছে ‘অটুট’ বন্ধনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারাও মুখে কুলুপ আঁটেন।
সংকট যেন উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রভাবিত না করে সেদিকে নজর রাখতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
ওয়াং বলেন, ‘ইউক্রেন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সহায়ক সব প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে চীন। শান্তি জন্য প্রয়োজন আলোচনা।
‘মৌলিক সমাধান হলো সব পক্ষের বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগকে মোকাবিলা করা এবং একটি ভারসাম্যপূর্ণ, কার্যকর এবং টেকসই নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করা।’
২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবার সঙ্গে দেখা করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
চলতি মাসের শুরুতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে এক বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং ইউক্রেন ইস্যুতে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন।
চীনের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ ভারত। তবে মস্কোর সঙ্গে দিল্লির সম্পর্কও পুরোনো। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানিতে রাশিয়ার ওপর অনেকটায় নির্ভর করতে হয় ভারতকে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বলেন, ‘ইউক্রেনের সংঘাত ক্রমাগত উত্তপ্ত হওয়ার কারণে আমাদের এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় যে আমরা আসলে কার পক্ষে আছি।
‘আমাদের উত্তর সবসময় সোজা এবং সৎ... ভারত শান্তির পক্ষে আছে এবং দৃঢ়ভাবে সেখানে থাকবে। আমরা সেই পক্ষে আছি, যে পক্ষ সংলাপ এবং কূটনীতির পক্ষে।
যুদ্ধের জন্য চীনের জোরালো সমর্থনের ঘাটতি দেখেন না আমেরিকান কর্মকর্তারা। তারা চীনের এই অবস্থানে দারুণ খুশী। জানিয়েছে, বেইজিং সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করায় রাশিয়াকে এখন উত্তর কোরিয়া এবং ইরানের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য করেছে।
আক্রমণাত্মক রাশিয়া
একটি সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেন ইস্যুতে চীনের পক্ষ থেকে কোনো চাপ এসেছে কি না এমন প্রশ্ন এড়িতে যান রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ। এসবের চেয়ে পশ্চিমের নিন্দা করতে বেশি ব্যস্ত ছিলেন তিনি।
ল্যাভরভ বলেন, ‘পশ্চিমে রুসোফোবিয়া নজিরবিহীন। তারা আমাদের দেশে কেবল সামরিক পরাজয় ঘটাতে নয়, রাশিয়াকে ধ্বংস ও ভেঙে ফেলার অভিপ্রায় ঘোষণা করতেও পিছপা হচ্ছে না।
‘স্নায়ুযুদ্ধ শেষের পর যুক্তরাষ্ট্র এমন ভান করা শুরু করে যে তারা পৃথিবীতে ঈশ্বরের পাঠানো দূত। যখন যেখানে যা করতে ইচ্ছা করে, তা করা যেন পবিত্র দায়িত্ব তাদের।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ‘স্বৈরাচারী, কঠোর, দখলদার সত্তা’ বলে বর্ণনা করেছেন। বলেছেন, সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস আনাস্তাসিয়াদেসকে মস্কোর সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করতে বাধ্য করেছে ব্লকটি।
ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে না থাকায় পশ্চিমের কড়া সমালোচনা করেন ল্যাভরভ। বলেন, ‘যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে আমরা কখনই দূরে সরে যাইনি।’
রিজার্ভ সেনা তলব এবং পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়ায় রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার কথা ভাবছে পশ্চিম। তারা ইতোমধ্যে পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার আয়োজিত গণভোটের ফলকে স্বীকৃতি না দেয়ার অঙ্গিকার করেছে।