রাশিয়ার মূল ভুখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে যাওয়া ইউক্রেনীয় অঞ্চলগুলোকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে রুশ সেনারা।
এমনটাই জানিয়েছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমানে দেশটির নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা দিমিত্রি মেদভেদেভ।
তিনি বলেন, ‘মস্কোর অস্ত্রাগারে থাকা কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র সহ যে কোনো অস্ত্র ইউক্রেন থেকে রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হতে যাওয়া অঞ্চলগুলো রক্ষা করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।’
নিজস্ব টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেয়া এক বার্তায় মেদভেদেভ ইউক্রেনীয় অঞ্চলে গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথাও বলেছেন। একই সঙ্গে বলেছেন, এরপরে সেখানে (ইউক্রেনের সঙ্গে পুনরায় যুক্ত হওয়ার) ফিরে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে গত বুধবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ভৌগলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সব উপায় ব্যবহার (পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারে প্রচ্ছন্ন হুমকি) করা হবে। ইউক্রেনে লড়তে ৩ লাখ রিজার্ভ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
রাশিয়ায় যোগদানের জন্য আজ থেকেই ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন, জাপোরিজ্জা ও মাইকোলাইভে ভোট গ্রহণ শুরু হতে যাচ্ছে।
এই অঞ্চলগুলো যদি রাশিয়ার মূল ভুখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়, তাহলে রাশিয়ার পারমাণবিক নীতি অনুযায়ী ভৌগলিক অখণ্ডতা হুমকিতে পড়লে দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে।
তবে রাশিয়ার এই পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহারের প্রচ্ছন্ন হুমকির মধ্যেই ইউএস স্ট্রাটেজিক কমান্ডের প্রধান অ্যাডমিরাল চার্লস রিচার্ড বুধবার মেরিল্যান্ডে আয়োজিত এক কনফারেন্সে বলেন, ‘স্নায়ুযুদ্ধের পর এই প্রথমবারের মতো সমকক্ষ প্রতিপক্ষের সঙ্গে পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা মোকাবেলা করছে যুক্তরাষ্ট্র।’
রাশিয়ার হাতে কতটি পরমাণু অস্ত্র
কোন দেশে কতটি পরমাণু অস্ত্র আছে, সে তথ্যগুলো আনুমানিক। ফেডারেশন অফ আমেরিকান সায়েন্টিস্টের হিসাব অনুযায়ী, রাশিয়ার কাছে আছে ৫ হাজার ৯৭৭টি পরমাণু ওয়ারহেড। ওয়ারহেড হলো পরমাণু অস্ত্রের অগ্রভাগ, যেটা পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটায়।
সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, রাশিয়ার এসব ওয়ারহেডের মধ্যে প্রায় দেড় হাজারকে বাতিল হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। দেশটির কাছে থাকা বাকি সাড়ে চার হাজারের মতো অস্ত্র কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র হিসেবে পরিচিত।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা রকেট, যা দিয়ে অনেক দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা যায়। এই অস্ত্রগুলো পরমাণু যুদ্ধে ব্যবহার হয়।
রাশিয়ার হাতে থাকা বাকি অস্ত্রগুলো ছোট, কম ধ্বংসাত্মক পরমাণু অস্ত্র। এগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে স্বল্পপাল্লার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে কিংবা সমুদ্রে ব্যবহার করার উপযোগী। এ ছাড়া সাবমেরিন থেকেও রাশিয়ার আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সক্ষমতা রয়েছে।
ইউক্রেন পরিস্থিতিতে পারমাণবিক যুদ্ধ কতটা বাস্তব?
ইউক্রেনে রুশ বাহিনী কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসছে, এমন দাবি পশ্চিমাদের। এদিকে ইউক্রেনকে সহায়তায় ন্যাটোভুক্ত দেশ ট্যাংকের মতো আক্রমণাত্মক অস্ত্র সরবরাহ করছে।
যদিও সরাসরি ন্যাটোভুক্ত কোনো দেশ ইউক্রেন যুদ্ধে জড়ায়নি, এরপরও ইউক্রেনকে অস্ত্র দেয়ার বিষয়টি ভালো চোখে দেখছে না রাশিয়া। এরই মধ্যে পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহের ওপর ভর করে যুদ্ধে বেশ সফলতা দেখিয়েছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার দখলকৃত সব অঞ্চল পুনরুদ্ধারের আগ পর্যন্ত সেনারা থামবে না।
এমন অবস্থায় যে কৌশলগত পরমাণু বোমা ব্যবহারকে একসময় অসম্ভব ভাবা হতো, তার সম্ভাবনা এখন বাড়ছে।
১৯৯১ সালে স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রগুলো আর কৌশলগত চিন্তার অংশ নয়। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধে এই অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা ক্রমে বাড়ছে।
১৯৬২ সালে কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিয়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক সংঘাতে জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। এখন প্রায় ৫০ বছর পর এসে আবারও ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান পারমাণবিক সংঘাতের বিষয়টি আবারও সামনে নিয়ে আসছে।
রাশিয়ার পারমাণবিক হামলায় পশ্চিমা প্রতিক্রিয়া কী হবে?
রাশিয়া যদি ইউক্রেনে সীমিত পরিসরেও পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার করে, তাতে পশ্চিমাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে? তা বলা মুশকিল।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রাশিয়া যদি পারমাণবিক, রাসায়নিক বা জীবাণু অস্ত্রের হামলা চালায়, যুক্তরাষ্ট্র চুপ করে বসে থাকবে না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এখন পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার হয়নি। এদিকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে ওয়ারশোতে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা ওয়ারশো মেমোরেন্ডাম নামে পরিচিত।
যদিও সেই চুক্তি পশ্চিমারাই লঙ্ঘন করেছে ও পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত ব্লকের অনেকেই এখন ন্যাটো সদস্য। এমনকি ইউক্রেনের সঙ্গে প্রাথমিক বিরোধও ন্যাটোর সদস্য হওয়া নিয়েই।