অনেক আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখা সিএনএনের একটি সাক্ষাৎকার থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি।
একদম শেষ মুহূর্তে সিএনএনের প্রধান আন্তর্জাতিক উপস্থাপক ক্রিশ্চিয়ান আমানপোর মাথায় স্কার্ফ পরার দাবি প্রত্যাখ্যান করার পর ইব্রাহিম রাইসি এই সিদ্ধান্ত নেন।
এর মাধ্যমে নারী পোশাকের স্বাধীনতার বিষয়ে ইরানে চলমান আন্দোলনের মধ্যেই পোশাক বিধির বিষয়ে আপোষ না করার ইংগিত দিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট।
ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন উপলক্ষে এখন নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন। সেখানেই তার সাক্ষাৎকার নেয়ার কথা ছিল আমানপোরের।
তবে নির্ধারিত সময়ে তা শুরু না হয়ে ৪০ মিনিট ধরে চলে টানাপড়েন। প্রেসিডেন্ট রাইসির একজন সহকারী আমানপোরকে মাথায় স্কার্ফ দিতে বলেছিলেন। তবে আমানপোর তা প্রত্যাখ্যান করেন।
আমানপোর জানান, তিনি প্রেসিডেন্ট রাইসির জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট আর সাক্ষাৎকার দিতে আসেননি।
ইরানি বংশোদ্ভুত সিএনএন সাংবাদিক ও উপস্থাপক ক্রিশ্চিয়ান আমানপোর
সিএনএনের সাংবাদিক ও উপস্থাপক আমানপোর ইরানের রাজধানী তেহরানেই বেড়ে উঠেছেন। ফার্সি ভাষায় তার বেশ দখলও রয়েছে।
ইরানে সাংবাদিকতা করার বিষয়ে স্থানীয় আইন ও রীতিনীতি মেনে প্রতিবেদন করার সময় মাথায় স্কার্ফ দিতে তার আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন আমানপোর। তিনি বলেছেন, এ ছাড়া একজন সাংবাদিক হিসেবে সেখানে (ইরানে) কাজ করার সুযোগ নেই।
একই সঙ্গে ক্রিশ্চিয়ান আমানপোর স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, ইরানের বাইরে কোনো ইরানি কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য তিনি নিজের মাথা ঢাকবেন না।
সিএনএনের ‘নিউ ডে’ প্রোগ্রামে আমানপোর বলেন, ‘এখানে নিউ ইয়র্কে বা ইরানের বাইরে অন্য কোথাও, আর কোনো ইরানি প্রেসিডেন্ট আমাকে জিজ্ঞাসা (মাথায় স্কার্ফের বিষয়ে) করেননি। আমি ১৯৯৫ সাল থেকে তাদের (ইরানি প্রেসিডেন্ট) সাক্ষাৎকার নিয়েছি- ইরানের ভেতরে বা বাইরে, কখনোই পোশাক পরতে (মাথার স্কার্ফ) বলা হয়নি।’
ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদানিজাদের সাক্ষাৎকার নেয়ার সময়ও মাথায় স্কার্ফ ছিল না আমানপোরের
আমানপোর বলেন, ‘আমি খুব বিনয়ের সঙ্গে নিজের, সিএনএন ও সব নারী সাংবাদিকের পক্ষে তা (মাথায় স্কার্ফ) প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ এর দরকার নেই।’
তবে এক টুইটবার্তায় আমানপোর স্বীকার করেন, যেহেতু ইরানে (পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে) বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে এবং মানুষ মারা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট রাইসির সঙ্গে তার কথা বলাটা (এ সময়) গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট রুহানির সাক্ষাৎকারের সময়ও মাথায় স্কার্ফ দেননি আমানপোর
কতটা সত্যি আমানপোরের দাবি
আগের ইরানি প্রেসিডেন্টদের সাক্ষাৎকারের বিষয়ে আমানপোর যে দাবি করেছেন, তার সত্যতা রয়েছে। তিনি সাবেক ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন, তাকে স্কার্ফ দিয়ে মাথা ঢাকতে হয়নি। এমনকি সাবেক রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদানিজাদের সাক্ষাৎকার নেয়ার সময়ও মাথা ঢাকেননি রাইসি।
এখানে নিউ ইয়র্কে বা ইরানের বাইরে অন্য কোথাও, কোনো ইরানি প্রেসিডেন্ট আমাকে জিজ্ঞাসা (মাথায় স্কার্ফের বিষয়ে) করেননি। আমি ১৯৯৫ সাল থেকে তাদের (ইরানি প্রেসিডেন্ট) সাক্ষাৎকার নিয়েছি- ইরানের ভেতরে বা বাইরে, কখনোই পোশাক পরতে (মাথার স্কার্ফ) বলা হয়নি।
ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামির সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় আমানপোরকে একটি কাপড়ে মাথা ঢাকতে দেখা গেলেও সাক্ষাৎকারটি নেয়া হয়েছিল তেহরানে। মোহাম্মদ খাতামিকে সাক্ষাৎকারের সময় বেশ হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়।
মোহাম্মদ খাতামির সাক্ষাৎকারে আমানপোরের মাথায় কাপড় থাকলেও সাক্ষাৎকারটি নেয়া হয়েছিল তেহরানে
নারীদের পোশাক সম্পর্কে যা আছে ইরানের আইনে
ইরানে নারীদের পোশাক নিয়ে বিধি নিষেধ দেয়া শুরু হয় ১৯৭৯ সালে দেশটিতে হওয়া ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে। দেশটিতে শরিয়াহ ভিত্তিতে করা আইনের আলোকে একজন নারীকে জনসমক্ষে মাথা ঢেকে রাখতে হয় ও ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হয়। এই আইন ইরানে অবস্থান করা সকল মুসলিম, অমুসলিম, নারী পর্যটক, বিদেশি সাংবাদিক সবার জন্য প্রযোজ্য।
ইসলামি বিপ্লবের আগে, পশ্চিমাপন্থি শাসক শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভিকে উৎখাত করার আগে তেহরানের রাস্তায় মিনিস্কার্ট ও খোলা চুল কোনো অস্বাভাবিক দৃশ্য ছিল না।
পাহলভির স্ত্রী ফারাহও পশ্চিমা পোশাকে অভ্যস্ত ছিলেন।