ভারতের চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রীর আপত্তিকর ‘ফাঁস হওয়া ভিডিও’ নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে। ক্যাম্পাসে চলছে বিক্ষোভ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন হয়েছে বাড়তি পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, সবকিছুই গুজব। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তার পরও পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
মেয়েদের হোস্টেলের বাসিন্দাদের মধ্যে একজন আপত্তিকর ভিডিও তৈরি করছেন... শনিবার রাতে অধ্যক্ষের কাছে এমন অভিযোগ করেন তিন ছাত্রী। পরে অভিযুক্ত ছাত্রীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ছাত্রী নিজেই নিজের একটি ভিডিও শেয়ার করেছিলেন হিমাচল প্রদেশের এক ব্যক্তির সঙ্গে। পুলিশ এখন ওই ব্যক্তির খোঁজে আছে।
হোস্টেলের কয়েকজন ছাত্রীর ব্যক্তিগত ভিডিও ফাঁস হয়েছে এবং একজন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন... এমন খবরে শনিবার রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। রোববার সকালে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হলেও সন্ধ্যায় তা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কালো পোশাকে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা ক্যাম্পাস। তাদের অভিযোগ, ঘটনাটি আড়াল করতে চাইছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিক্ষোভের আগে প্রশাসন অবশ্য সতর্ক করেছিল জনসাধারণকে। তারা বলেছিল, গুজবে যেন কেউ কান না দেয়।
মোহালির জ্যেষ্ঠ পুলিশ সুপার বিবেক শীল সোনি জানিয়েছিলেন, কোনো ছাত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা তাদের নজরে আসেনি। এ ঘটনায় কারও মৃত্যু হয়নি বলেও জানান শীল সোনি।
বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনাও একই দাবি করেছে। তারা বলছে, কয়েকজন ছাত্রী কেবল ‘অজ্ঞান’ হয়ে পড়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৈরি করা হয়েছে। হোস্টেল অধ্যক্ষ তিন ছাত্রীর অভিযোগ খতিয়ে দেখেছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করেছি, কোনো আপত্তিকর ভিডিও পাইনি।
‘ক্যাম্পাসে কোনো আত্মহত্যার চেষ্টা হয়নি, বরং কিছু ছাত্রী তাদের আপত্তিকর ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ক্যাম্পাসে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এখন পুলিশ বিষয়টি দেখছে।’
এর আগে মোহালির এসএসপি বিবেক সোনি বলেছিলেন, এখন পর্যন্ত অভিযুক্তের কাছে অন্য কোনো মেয়ের আপত্তিকর ভিডিও পাওয়া যায়নি। আমরা ক্যাম্পাসে একটি কেন্দ্র খুলেছি। যাদের এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ আছে, তারা এখানে যোগাযোগ করতে পারবেন।
Protest breaks out in Chandigarh University after someone secretly recorded videos of girls from hostel bathroom and leaked them online. University administration is trying to muzzle the protest, according to a student : @PunYaab pic.twitter.com/BIi1jTBPCN
— Yogita Bhayana योगिता भयाना (@yogitabhayana) September 17, 2022ডিজিপি গৌরব যাদব বলেন, ‘ভিডিও বানানোর অভিযোগে এক ছাত্রীকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। আপত্তিকর যেকোনো ভিডিও ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সবাইকে অনুরোধ করছি, গুজবে কান দেবেন না।
চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর সাতনাম সিং সান্ধু বলেন, ‘গত রাতে একটি বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। শিক্ষার্থীদের সবকিছুর ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। পুলিশের সহায়তায় এটিকে এখন ক্রসচেক করছি।’
পাঞ্জাবের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী গুরমিত সিং মিত হায়ার শিক্ষার্থীদের ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মোহালির ডিসি এবং এসএসপি ঘটনায় পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করবেন। কাউকে রেহাই দেয়া হবে না।’
1/2 ਚੰਡੀਗੜ੍ਹ ਯੂਨਿਵਰਸਿਟੀ ਵਿਚ ਵਾਪਰੀ ਮੰਦਭਾਗੀ ਘਟਨਾ ਬਾਰੇ ਜਾਣ ਕੇ ਬਹੁਤ ਦੁੱਖ ਹੋਇਆ ਹੈ। ਇਹ ਮਾਮਲਾ ਬਹੁਤ ਸੰਵੇਦਨਸ਼ੀਲ ਹੋਣ ਕਰਕੇ ਮੇਰੀ ਸਭ ਨੂੰ ਗੁਜ਼ਾਰਿਸ਼ ਹੈ ਕਿ ਅਣ-ਪ੍ਰਮਾਣਿਤ ਖ਼ਬਰਾਂ ਨੂੰ ਅੱਗੇ ਭੇਜਣ ਤੋਂ ਗੁਰੇਜ਼ ਕੀਤਾ ਜਾਵੇ। ਕਿਸੇ ਵੀ ਵਿਦਿਆਰਥਣ ਦੀ ਖ਼ੁਦਕੁਸ਼ੀ ਦੀ ਕੋਈ ਖ਼ਬਰ ਨਹੀਂ ਹੈ।
— Gurmeet Singh Meet Hayer (@meet_hayer) September 18, 2022চণ্ডীগড় ইউনিভার্সিটি হোস্টেলের অনেক বাসিন্দা শনিবার রাতের পরিস্থিতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দুষছেন। তাদের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে রাত থেকেই চলে বিক্ষোভ।
হোস্টেলের এক বাসিন্দা বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলছিল। তবে তারা যখন আটক ছাত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়ার চাপ দেয়, তখন পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়।
‘তাদের উচিত ছিল কাউকে দোষারোপ না করে প্রথমে বিষয়টি তদন্ত করা। ভিডিওটি যদি উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৈরি করা হয়, তবে কী সেই উদ্দেশ্য?’
রোববার সকালে ক্যাম্পাসের বাইরে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বিপুল পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। একটি ফরেনসিক দল মোবাইল ফোন পরীক্ষা এবং প্রমাণ সংগ্রহে কাজ করছে। তাদের কাছে হোস্টেলের সব বাসিন্দার মোবাইল ফোন জমা দেয়া হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর সান্ধুর ঘনিষ্ঠতার বিষয় এখন সামনে আসতে পারে। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে পারে অনেকেই।
এদিকে রোববার জারি করা একটি সরকারি বিবৃতিতে চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-চ্যান্সেলর ড. আর এস বাওয়া বলেন, ‘হোস্টেলের সাতজন মেয়ে আত্মহত্যা করেছে- এমন একটি গুজব ছড়িয়েছে। আসলে এমন পদক্ষেপ কেউ নেয়নি। এ ঘটনায় কোনো মেয়েকে হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়নি।
‘সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো আরেকটি গুজব হচ্ছে, বিভিন্ন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৬০টি আপত্তিকর এমএমএস পাওয়া গেছে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক তদন্তে কোনো শিক্ষার্থীর আপত্তিকর ভিডিও পাওয়া যায়নি; একটি মেয়ের নিজের ধারণ করা একটি ব্যক্তিগত ভিডিও ছিল, যা সে তার প্রেমিকের সঙ্গে শেয়ার করেছিল।’
‘অন্যান্য ছাত্রী-ছাত্রীর আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করার বিষয়টি গুজব, সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন৷ শিক্ষার্থীদের অনুরোধের ভিত্তিতে চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঞ্জাব পুলিশ বিভাগকে বিষয়টি জানিয়েছে। তারা সন্দেহভাজন এক ছাত্রীকে হেফাজতে নিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তার বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে।’
প্রো-চ্যান্সেলর বলেন, ‘একটা বিষয়ে সবার স্বচ্ছ ধারণা থাকা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব শিক্ষার্থীর, বিশেষ করে মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সক্ষম।’