খারকিভ থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে রাশিয়া, ইউক্রেনের দাবি রুশ সেনারা অস্ত্রশস্ত্র রেখে পালাচ্ছে। চলতি মাসেই ইউক্রেনীয় সেনারা প্রায় ৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা পুনর্দখল করেছে বলে দাবি করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি।
এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার বিষয়ে সতর্ক করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
সানডে’স সিক্সটি মিনিটের প্রোগ্রামের প্রিভিউতে দেখা যায়, উপস্থাপক স্কট পেলি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যদি রাশিয়া ইউক্রেনে রাসায়নিক ও কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করে তবে রাশিয়াকে উদ্দেশ্য করে বাইডেনের বার্তা কী হবে।
জবাবে বাইডেন বলেন, ‘করবেন না (পারমাণবিক বোমা ব্যবহার)। করবেন না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আপনি যুদ্ধের চেহারা (পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করলে) পরিবর্তন করবেন।’
তবে রাশিয়া যদি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে, সে ক্ষেত্রে আমেরিকার কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন বাইডেন।
কিন্তু আমেরিকা যে প্রতিক্রিয়া জানাবে তা নিশ্চিত করে বাইডেন বলেন, ‘এবং তারা কী করবে, তার ওপর নির্ভর করবে, কী প্রতিক্রিয়া ঘটবে।’
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভ্লাদিমির পুতিনকে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন যে রাশিয়া যদি ইউক্রেনে পারমাণবিক বা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে 'পরিণাম' ভোগ করবে।
এদিকে রাশিয়া বারবার বলে এসেছে, দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের নীতি হলো রাশিয়ার অস্তিত্ব হুমকিতে পড়লেই কেবল পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে দেশটি।
ইউক্রেন পরিস্থিতিতে পারমাণবিক যুদ্ধ কতটা বাস্তব?
ইউক্রেনে রুশ বাহিনী কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসছে, এমন দাবি পশ্চিমাদের। এদিকে ইউক্রেনকে সহায়তায় ন্যাটোভুক্ত দেশ ট্যাংকের মতো আক্রমণাত্মক অস্ত্র সরবরাহ করছে।
যদিও সরাসরি ন্যাটোভুক্ত কোনো দেশ ইউক্রেন যুদ্ধে জড়ায়নি, এরপরও ইউক্রেনকে অস্ত্র দেয়ার বিষয়টি ভালো চোখে দেখছে না রাশিয়া। এমন অবস্থায় যে কৌশলগত পরমাণু বোমা ব্যবহারকে একসময় অসম্ভব ভাবা হতো, তার সম্ভাবনা এখন বাড়ছে।
এবং তারা কী করবে, তার ওপর নির্ভর করবে, কী প্রতিক্রিয়া ঘটবে।
১৯৯১ সালে স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রগুলো আর কৌশলগত চিন্তার অংশ নয়। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধে এই অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কা ক্রমে বাড়ছে।
১৯৬২ সালে কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিয়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক সংঘাতে জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। এখন প্রায় ৫০ বছর পর এসে আবারও ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান পারমাণবিক সংঘাতের বিষয়টি আবারও সামনে নিয়ে আসছে।
রাশিয়ার পারমাণবিক হামলায় পশ্চিমা প্রতিক্রিয়া কী হবে?
রাশিয়া যদি ইউক্রেনে সীমিত পরিসরেও পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার করে, তাতে পশ্চিমাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে? তা বলা মুশকিল।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রাশিয়া যদি পারমাণবিক, রাসায়নিক বা জীবাণু অস্ত্রের হামলা চালায়, যুক্তরাষ্ট্র চুপ করে বসে থাকবে না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এখন পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার হয়নি। এদিকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে ওয়ারশোতে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা ওয়ারশো মেমোরেন্ডাম নামে পরিচিত।
রাশিয়ার কৌশলগত পরমাণু বাহিনী
যদিও সেই চুক্তি পশ্চিমারাই লঙ্ঘন করেছে ও পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত ব্লকের অনেকেই এখন ন্যাটো সদস্য। এমনকি ইউক্রেনের সঙ্গে প্রাথমিক বিরোধও ন্যাটোর সদস্য হওয়া নিয়েই।
এখন প্রশ্ন হলো ইউক্রেনকে পরাজিত করতে পুতিন কী পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা থেকে বেরিয়ে আসবেন?