বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১৩ বছরেই ফিলিপের প্রেমে ভেসে যান এলিজাবেথ

  •    
  • ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৭:৫৬

এলিজাবেথ ও তার পরিবারের সদস্যরা ১৯৩৯ সালে গিয়েছিলেন ডার্থমাউথের রয়্যাল নেভাল কলেজ পরিদর্শনে। সেখানেই নৌবাহিনীর তরুণ ক্যাডেট ফিলিপের ওপর ছিল রাজকন্যাদের দেখভালের দায়িত্ব। প্রিন্স ফিলিপ রাজকন্যাদের জিঞ্জার বিস্কুট দিয়ে আপ্যায়ন করেন, খেলনা রেলগাড়ি দিয়ে কিছুক্ষণ খেলাধুলাও করেন। টেনিস কোর্টে দেখান নিজের দক্ষতা। এসবই জয় করে নেয় টিনএজ এলিজাবেথের হৃদয়।

দীর্ঘ ৭০ বছর ব্রিটিশ রাজত্বের মুকুট মাথায় ধারণ করা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেছেন গত ৮ সেপ্টেম্বর। এর প্রায় দেড় বছর আগে ২০২১ সালের ৯ এপ্রিল মারা যান তার জীবনসঙ্গী প্রিন্স ফিলিপ।

১৯৪৭ সালে বিয়ে হয় তখনকার প্রিন্সেস এলিজাবেথ এবং ডেনমার্ক ও গ্রিসের প্রিন্স ফিলিপের। দ্বিতীয় এলিজাবেথের বয়স তখন ২১ বছর, আর তার চেয়ে পাঁচ বছরের বড় ছিলেন ফিলিপ। বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৫২ সালে দ্বিতীয় এলিজাবেথ হন ইংল্যান্ডের রানি আর ফিলিপ হন কুইন কনসর্ট।

ফিলিপের সঙ্গে তার প্রায় ৭৪ বছরের দাম্পত্য জীবনের শুরুটা ত্রিশের দশকের শেষে।

দ্বিতীয় এলিজাবেথ মাত্র তখন কৈশোর ছুঁইছুঁই। ১৯৩৯ সালের ২২ জুলাই ১৩ বছর বয়সে তিনি প্রেমে পড়েন প্রিন্স ফিলিপের।

পরম কাঙ্ক্ষিত ফিলিপও রাজবংশের সদস্য। এলিজাবেথের ভাষায়, ‘উজ্জ্বল চুলের একটা ছেলে, অনেকটা ভাইকিংদের মতো, চোখা চেহারা, হৃদয়ভেদী গভীর চোখ।’

ভালোবাসার এই মানুষটি ছিলেন গ্রিস ও ডেনমার্কের প্রিন্স। এলিজাবেথের মতো তিনিও রানি ভিক্টোরিয়ার প্রোপৌত্র।

এলিজাবেথ ও তার পরিবারের সদস্যরা ১৯৩৯ সালে গিয়েছিলেন ডার্থমাউথের রয়্যাল নেভাল কলেজ পরিদর্শনে। সেখানেই নৌবাহিনীর তরুণ ক্যাডেট ফিলিপের ওপর ছিল রাজকন্যাদের দেখভালের দায়িত্ব।

প্রিন্স ফিলিপ রাজকন্যাদের জিঞ্জার বিস্কুট দিয়ে আপ্যায়ন করেন, খেলনা রেলগাড়ি দিয়ে কিছুক্ষণ খেলাধুলাও করেন। টেনিস কোর্টে নিজের দক্ষতা দেখান। টেনিস কোর্টে তিনি সারাক্ষণ নেটের ওপর দিয়ে লাফঝাঁপ করছিলেন। এসবই জয় করে নেয় টিনএজ এলিজাবেথের হৃদয়।

রাজকন্যাদের দেখভালকারী ম্যারিয়ন ক্রফোর্ডকে এলিজাবেথ ভালোবেসে ক্রফি ডাকতেন। পরে এক আত্মজীবনীমূলক বইয়ে ওই সময়ের ঘটনা নিয়ে ম্যারিয়ন লেখেন, ‘সে (এলিজাবেথ) তার (ফিলিপ) ওপর থেকে চোখ সরাতে পারছিল না।’

ম্যারিয়নকে মুগ্ধকণ্ঠে এলিজাবেথ বলেছিলেন, ‘ও (ফিলিপ) কী দারুণ ক্রফি! কতটা উচুঁতে লাফাতে পারে!’

দ্বিতীয় এলিজাবেথও পরে তার বাবা রাজা ষষ্ঠ জর্জকে নিয়ে লেখা বইয়ে বলেছিলেন, তিনি প্রথম দেখাতেই ফিলিপের প্রেমে পড়েন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেন জড়িয়ে যাওয়ার পর ফিলিপ নৌবাহিনীর হয়ে যুদ্ধে চলে যান। তবে এলিজাবেথ ও ফিলিপের চিঠি বিনিময় চলত। আর ছুটির সময়টা ফিলিপ রাজপরিবারের সঙ্গে কাটাতেন।

১৯৩৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী নেভিল চেম্বারলিন জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার সময় এলিজাবেথ ও তার বোন মার্গারেট বালমোরালের কাছে ক্র্যাথি চার্চে কাজ করতেন। বড়দিনের পর এলিজাবেথ ও মার্গারেট উইন্ডসরে চলে আসেন। ওই এলাকা লন্ডনের চেয়ে অনেকটাই নিরাপদ ছিল।

যুদ্ধের সময় রাজকন্যাদের ভূমিকা সে সময় নিরলসভাবে ছেপে গিয়েছিল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে ছিল উদ্ধার করা ফরাসি শিশুদের মাঝে চকোলেট বিতরণ এবং যুদ্ধরত সৈনিকদের সিগারেট সরবরাহের জন্য ওভার সিজ লিগ টোব্যাকো ফান্ডে অর্থ সহায়তা করা।

১৯৪০ সালের এপ্রিলে এলিজাবেথের ১৪তম জন্মদিনে কাটা হয় আইসিং ছাড়া একটি সাধারণ স্পিঞ্জ কেক। এ থেকে সংযমের সঙ্গে আনন্দ উদ্‌যাপনের নতুন এক ধারা শুরু হয়।

ওই বছর যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে রাজা-রানি উইন্ডসর প্রাসাদে বেশি বেশি সময় কাটাতে থাকেন। তারা রাতে সেখানে থাকতেন। জনগণকে আশ্বস্ত করতে লন্ডনের বাকিংহাম প্রাসাদে রাজার পতাকা উড়ত ঠিকই।

নিরাপত্তার খাতিরে এলিজাবেথ ও মার্গারেটের বাইরে বের হওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

তবে ডাচ ও নরওয়েজিয়ান রাজপরিবারের সদস্যদের মতো যুদ্ধের সময়টা কানাডায় কাটানোর মতো সিদ্ধান্তের ঘোর বিরোধী ছিলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথের মা।

রাজপরিবারের সুরক্ষায় উইন্ডসর ক্যাসেলের ব্রুনসউইক টাওয়ারের নিচে বিমান হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশেষ আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হয়। সেখানে ছিল দীর্ঘ দেয়াল এবং চার ফুট পুরু কংক্রিট ও গার্ডারের ছাদ।

অক্টোবরে জার্মান বিমান হামলার মাঝেই বিবিসি রেডিওর চিলড্রেনস আওয়ারে বক্তব্য রাখেন এলিজাবেথ। নিরাপত্তার কারণে পরিবার থেকে দূরে থাকা শিশুদের উদ্দেশে দেয়া তার এ বক্তব্য বিশ্বজুড়ে প্রচারিত হয়।

১৯৪২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজা জর্জ তার মেয়ের ১৬তম জন্মদিনের উপহার হিসেবে তাকে গ্রেনাডিয়ার গার্ডস রেজিমেন্টের কর্নেল হিসেবে নিয়োগ দেন।

এসবের মাঝেই রাজপরিবারের সঙ্গে ফিলিপের কাটানো সময়টুকু উপভোগ করতেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ১৯৪২ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি ম্যারিয়নকে লেখেন, ‘তিনিই (ফিলিপ) তার বিশেষজন।’

১৯৪৩ সালের বড়দিন উইন্ডসর প্রাসাদেই কাটান ২২ বছর বয়সী ফিলিপ। ম্যারিয়ন পরে লিখেছেন, ১৭ বছর বয়সী এলিজাবেথ ফিলিপের সফরের পুরো সময়টা খুশিতে ‘ঝলমল’ করছিলেন।

তবে তার মা-বাবা বিষয়টিকে তখনও গুরুত্ব দেননি। ১৯৪৪ সালের মার্চে রাজা তার মাকে লেখেন, ‘এলিজাবেথ বিয়ের জন্য এখনও ছোট।’

পরের মাসে এলিজাবেথ ১৮ পূর্ণ করেন। ব্রিটিশ সৈন্যদের যুদ্ধে সহায়তায় নামতে তিনি জোরাজুরি করছিলেন। তবে রাজা ষষ্ঠ জর্জ চাচ্ছিলেন, তার মেয়ে সিংহাসনের জন্য প্রস্তুত হোক। দেশের যেকোনো কর্মকাণ্ডের চেয়ে সেটাই বেশি জরুরি মনে হচ্ছিল।

জনসম্পৃক্ত কাজে খুব শিগগির দ্বিতীয় এলিজাবেথ যোগ দিতে শুরু করেন। তার মায়ের নামে তৈরি কুইন এলিজাবেথ হসপিটাল ফর চিলড্রেনে তিনি ভাষণ দেন এবং ন্যাশনাল সোসাইটি ফর প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েলটি টু চিলড্রেনের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য রাখেন।

দ্বিতীয় এলিজাবেথের ১৯তম জন্মদিনের কয়েক সপ্তাহ পর ব্রিটেন যুদ্ধে জয়ী হয়।

উৎফুল্ল জনতা

বাকিংহাম প্রাসাদের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় এলিজাবেথ উৎফুল্ল জনতার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ওই রাতে মার্গারেট ও দ্বিতীয় এলিজাবেথ প্রাসাদ থেকে পালিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে উৎসবে যোগ দেন। বহু বছর পর রানি এলিজাবেথ ওই রাতটিকে তার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় হিসেবে উল্লেখ করেন।

পরের সন্ধ্যাতেও দুই বোন প্রাসাদ ছেড়ে বেরিয়ে যান। এলিজাবেথ তার ডায়েরিতে লিখেছেন, ‘ট্রাফালগার স্কয়ার, পিকাডিলি, পলমল, মাইলের পর মাইল হেঁটেছি। রাত সাড়ে ১২টায় মা-বাবাকে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। খেলাম, পার্টি করলাম। ঘুমাতে গিয়েছি রাত ৩টায়।’

এ বিভাগের আরো খবর