কলকাতার গার্ডেন রিচসহ একাধিক জায়গায় শনিবার তল্লাশি চালিয়েছে ভারতের অর্থসংক্রান্ত গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
তল্লাশিকালে এক পরিবহন ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে ১৭ কোটির বেশি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছেন ইডির তদন্তকারীরা।
এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তার ভাষ্য, তল্লাশির নামে তৃণমূলকে চাপে রেখে বাংলার অর্থনীতিকে ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পার্ক স্ট্রিট থানায় হওয়া এফআইআরের সূত্র ধরে শনিবার কলকাতার ৬টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালায় ইডি।
তল্লাশি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গার্ডেন রিচের পরিবহন ব্যবসায়ী নিসার খানের ছেলে আমির খান ই-নাগেটস নামে একটি মোবাইল গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
ওই দিন সকালে নিসার খানের ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে খাটের তলা থেকে প্লাস্টিকে মোড়া ৫০০ ও ২ হাজার টাকার বিপুল পরিমাণ নোট উদ্ধার করে ইডি। টাকা গোনার জন্য ইডিকে বাইরে থেকে মেশিন আনতে হয়।
প্রাথমিকভাবে ১৫ কোটি গণনা করা হয়। রোববার সকাল পর্যন্ত গণনা শেষে ১৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা পাওয়া যায়।
ওই বাসা থেকে উদ্ধার হয় সোনার গয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ নথি। নিসার খান ও তার ছেলে আমির খানকে আটক করে ইডি।
এ নিয়ে বিজেপির সমালোচনা করে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ইডির হানার দুটি কারণ রয়েছে। এক আমাদের ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা। এসব করে তৃণমূলকে বার্তা দেয়া হচ্ছে, যাতে তারা আর বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই না করে।
‘নয়তো ব্যবসায়ীদের ভয় পাইয়ে দেয়া, যাতে তারা বাংলায় ব্যবসা না করে অন্য রাজ্যে গিয়ে ব্যবসা করে। রেইড রেইড আতঙ্ক তৈরি করে বিজেপি বাংলার অর্থনীতিকে ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করছে বলে আমার ধারণা।’
অন্যদিকে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘তৃণমূলের রাজত্বে আপনি যেখানে হাত দেবেন, টাকা পাবেন। বাংলায় কালো টাকা উড়ছে। পশ্চিমবঙ্গে লুটের রাজত্ব চলছে। কখনও ব্যবসায়ী তো, কখনও মাছ ব্যবসায়ী।
‘মন্ত্রী পার্থ ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। অনুব্রতর নামে বেনামের টাকা, সম্পত্তি উদ্ধার হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্বে গোটা বাংলার সর্বনাশ হয়ে গেছে।’
সম্প্রতি বিভিন্ন দুর্নীতি ইস্যুতে রাজ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো রাজ্যের কোথাও না কোথাও প্রায় দিন তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছেন। এতে কোটি কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত হচ্ছে।
কিছুদিন আগে রাজ্যের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করে ইডি। তার ঘনিষ্ঠ, মডেল অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়।
গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়, যার মেয়ে এবং স্বজনদের নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির খোঁজ পান তদন্তকারীরা।
তৃণমূল নেতার বাড়ি থেকে চিটফান্ডকাণ্ডের টাকা উদ্ধার হয়েছে, মাছ ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে কোটি কোটি উদ্ধার হয়েছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বারবার গরু ও কয়লা পাচারকাণ্ডে তদন্তকারীদের জেরায় পড়তে হচ্ছে। কয়লা পাচারকাণ্ডে রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটককে ইডির তদন্তকারীরা দীর্ঘ জেরা করেছে সম্প্রতি।
বিরোধীরা এ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে রাজ্যজুড়ে ‘চোর ধরো, জেল ভরো’ কর্মসূচি নিয়ে শাসকদল তৃণমূলকে ‘চোরদের দল’ আখ্যা দেয়ার চেষ্টা করছে। এমন বাস্তবতায় চাপে রয়েছে তৃণমূল।