বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডায়ানাকে নিয়ে নিরুত্তাপ ছিলেন রানি এলিজাবেথ

  •    
  • ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৩:৪৩

প্রকাশ্যে কেউই কখনও মুখ খোলেননি কাউকে নিয়ে। অবশ্য রাজপরিবারে এটি ঘটবার সুযোগও নেই। তবু বারবারই রানির সঙ্গে তার জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূর হাসিমুখের ছবিতে ধরা পড়েছে দূরত্বের ছাপ।

রাজতন্ত্রের নিয়মে বাঁধা এক বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ আর প্রিন্সেস ডায়ানা। সব আলোচনা পেরিয়ে এই বউ-শাশুড়ির সম্পর্কের রসায়ন পৃথিবীকে আজও ভাবায়।

প্রকাশ্যে কেউই কখনও মুখ খোলেননি কাউকে নিয়ে। অবশ্য রাজপরিবারে এটি ঘটবার সুযোগও নেই। তবু বারবারই রানির সঙ্গে তার জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূর হাসিমুখের ছবিতে ধরা পড়েছে দূরত্বের ছাপ।

বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডের বালমোরাল দুর্গে যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি সময় সিংহাসনে থাকা ৯৬ বছর বয়সী রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর নতুন করে এসব বিষয় উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। রানির জ্যেষ্ঠ ছেলে, তার উত্তরসূরি ও নতুন রাজা ৭৩ বছর বয়সী চার্লস বিবৃতিতে মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সহজ সম্পর্ক বলতে যা বোঝায় তা নয়, বরং অনেক উত্থান-পতনসহ নানা সমীকরণের জটিল ছকে আঁকা এক সম্পর্ক ছিল রানির সঙ্গে ডায়ানার। চার্লসের সঙ্গে প্রেমের সময় ১৯৮০ সালে হবু শাশুড়ির সঙ্গে দেখা করেন তিনি। এর পরের বছর বিয়ে হয় চার্লস আর ডায়ানার।

রাজকীয় জীবনীকার অ্যান্ড্রু মর্টনের মতে, রাজকুমারী এবং রানির মধ্যে সম্পর্কটা শুরুই হয়েছিল অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্য দিয়ে। ‘ডায়ানা: হার ট্রু স্টোরি- ইন হার ওন ওয়ার্ডস’–এ তিনি লিখেছেন, প্রথম দিকে শাশুড়িকে নিয়ে বেশ ভয়ে ভয়ে থাকতেন ডায়ানা। রানির সঙ্গে দেখা হওয়ার সময় শিষ্টাচার বজায় রাখতেন তিনি। ডায়ানা সব সময়ই একটু দূরত্ব বজায় রাখতেন।

১৯৮২ সালের প্রথম দিকে প্রিন্স উইলিয়ামসের জন্মের পর ডায়ানা ধীরে ধীরে রাজপরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী ভূমিকা নিতে শুরু করেন। এ সময় রানির সঙ্গে তার বন্ধন জোরালো হতে থাকে।

রাজকীয় বিশেষজ্ঞ ইনগ্রিড সেওয়ার্ড তার ২০০২ সালের বই দ্য কুইন অ্যান্ড ডি-তে লিখেছেন, রানি এলিজাবেথ ডায়ানার অসুবিধাগুলো বুঝতে শুরু করেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে একটি শক্তিশালী বন্ধন তৈরি হয়। ডায়ানা এমনকি একবার লেখককে বলেছিলেন, বিশ্বের সেরা শাশুড়ি পেয়েছেন তিনি।

ডায়ানার সঙ্গে বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় ক্যামিলা পার্কার-বোলসের সঙ্গে চার্লসের সম্পর্কের গুজব ছড়াতে শুরু করে। এরপর পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে থাকে। এরই জেরে চার্লস ও ডায়ানার বিবাহবিচ্ছেদ হয় ১৯৯৬ সালে। ২০০৫ সালে বিয়ে হয় প্রিন্স চার্লস ও ক্যামিলার।

অভিজাত পরিবারের মেয়ে ডায়ানা যখন রাজপরিবারের বউ হয়ে আসেন, তখন তার বয়স মাত্র ২০। প্রাণোচ্ছল, খোলামেলা স্বভাবের সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ মেয়েটির কাঁধে চেপে বসেছিল রাজপরিবারের শতেক নিয়ম। মেপে হাসা, কথা বলা- মানিয়ে নেয়া শুরুও করেছিলেন ডায়ানা। তবে সুখ বেশি দিন সয়নি তার।

স্বামীর দ্বারা প্রতারিত হওয়ার সময় দুর্দিনে শাশুড়িকে কাছে চেয়েছিলেন ডায়ানা। অ্যান্ড্রু মর্টনের মতে, ডায়ানা রানির প্রাসাদে সম্ভবত একজন অসম্ভাব্য মিত্রকে খুঁজে পেয়েছিলেন, যার বোঝাপড়া এবং সহায়ক মনোভাব তাকে একজন সৈনিক হতে উৎসাহিত করতে অনেক কিছু করেছিল।

নিজের দুঃসময়ে রানির কাছে সমর্থন প্রত্যাশা করেছিলেন ডায়ানা। কিন্তু আশানুরূপ সমর্থন না পেয়ে নীরবে কষ্ট পেতে পেতে বছরের পর বছর কেটে যায় তার। পুত্রবধূকে সাহায্য করার পথ না পেয়ে তার মানসিক প্রতিক্রিয়া দেখে ক্লান্ত হয়ে পড়েন রানি এলিজাবেথ।

১৯৯২ সালে চার্লস এবং ডায়ানা প্রকাশ্যে আলাদা হয়ে যান। এর তিন বছরের মাথায় রানি তাদের বিয়েবিচ্ছেদের আহ্বান জানান। ওই মুহুর্তে ডায়ানা ব্যক্তিগত এক সাক্ষাৎকারে ‘নিজের পথ’ বেছে নেয়ার কথা জানিয়েছিলেন।

বিয়েবিচ্ছেদের পর প্যারিসে ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ৩৬ বছর বয়সী ডায়ানা ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু দোদি ফায়েদে। ছবি তোলার জন্য মোটরসাইকেলে করে পিছু নেয়া পাপারাজ্জিদের হাত থেকে বাঁচার জন্যই তাদের গাড়িটি প্রচণ্ড বেগে চলতে শুরু করে। এতে কংক্রিট পিলারের সঙ্গে গাড়িটির সংঘর্ষে ঘটে দুর্ঘটনা।

ডায়ানা যখন মারা যান, তখন তার ছেলে প্রিন্স উইলিয়ামের বয়স মাত্র ১৫ বছর ও প্রিন্স হ্যারির বয়স ১২ বছর। পরে ২০০৫ সালে চার্লস যখন দ্বিতীয়বার বিয়ের আয়োজন করেন, সেখানে উপস্থিত হননি দ্বিতীয় রানি এলিজাবেথ।

ডায়ানার জনপ্রিয়তা ব্রিটিশ রাজপরিবারের যেকোনো সদস্য থেকেই অনেক বেশি ছিল। রাজপরিবারের সঙ্গে সম্পর্কের ওঠানামার কথা যখনই সামনে এসেছে, প্রিয় যুবরানির সমব্যথী হয়েছে ব্রিটিশ জনগণ। অনেক বারই প্রশ্ন উঠেছে রাজপরিবার ও রানির ভূমিকায়।

১৯৯৭ সালে ডায়ানার মৃত্যুতে রানির নিরুত্তাপ অবস্থাকে ভালোভাবে নেয়নি যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমগুলো। এ প্রেক্ষাপটে শেষ পর্যন্ত সাবেক পুত্রবধূর শেষকৃত্যের আগে নজিরবিহীনভাবে এক টেলিভিশন বার্তায় মুখ খোলেন রানি। সময়ের সঙ্গে রাজপরিবারে বদল আনার অঙ্গীকার করেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর