যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব হারানো আইএস বধূ শামীমা বেগমসহ আরও দুই কিশোরীকে সিরিয়ার ইসলামিক স্টেট নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পাচার করেছিল কানাডার এক গুপ্তচর।
শামীমার আইনজীবীর করা এমন দাবির মুখে এবং বিবিসির তদন্তে বিষয়টি ফুটে ওঠায় এবার নড়েচড়ে বসেছে কানাডা সরকার।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, নিয়ম মানা হয়েছিল কি না তা তিনি দেখবেন।
তিনি শামীমার ঘটনার প্রতি আলোকপাত করে বলেন, অতীতের কিছু ঘটনা বা অপারেশন নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।
বুধবারের এক কনফারেন্সে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো
যদিও একই সঙ্গে ট্রুডো গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের প্রতি নমনীয় ভাবও পোষণ করে বলেন, গোয়েন্দারা খুব বিপজ্জনক বিশ্বে দেশকে সুরক্ষিত রাখেন।
ট্রুডোর মতে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কাজ করতে কানাডীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে স্বাধীনতা ও নিজের মতো করে সৃজনশীল উপায়ে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।
একই সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রে নীতি ও মূল্যবোধের প্রতি দায়বদ্ধ থাকার প্রয়োজনীয়তার কথাও তিনি বলেছেন।
কানাডার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনওয়ালেস কোনো গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।
কানাডীয় সিকিউরিটি ইন্টিলিজেন্স সার্ভিসের মুখপাত্রও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘সিআইইএসের তদন্ত, অপারেশনের স্বার্থ, পদ্ধতি ও কার্যাবলি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য, স্বীকার কিংবা অস্বীকার করতে পারেন না।’
কোথায় আছেন শামীমা
শামীমা বেগম এখন আছেন উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার একটি শরণার্থী ক্যাম্পে। ২০১৯ সালে তথাকথিত আইএস খেলাফতের পতনের পর শরণার্থী শিবিরে যখন তাকে পাওয়া যায়, ব্রিটিশ সরকার তার নাগরিকত্ব বাতিল করে।
যা বলছে বিবিসির তদন্ত
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থার এক তদন্তে জানা গেছে, শামীমা বেগম যিনি কিশোরী থাকা অবস্থায় আরও দুই কিশোরী বন্ধুকে নিয়ে সিরিয়ার ইসলামিক স্টেটে যোগ দিয়েছিলেন, তাদের পাচার করেছিল মূলত কানাডার এক গুপ্তচর। যার নাম রাশেদ। তিনিই শামীমা ও তার বাকি দুই সঙ্গীকে সিরিয়া পাঠান।
রাশেদ জর্ডানে থাকা কানাডীয় দূতাবাসে রিপোর্ট করতেন। পরে তুরস্কের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
রাশেদ সম্পর্কে শামীমা বলেন, ‘তুরস্ক থেকে সিরিয়ার পুরো ট্রিপটি তিনিই সাজিয়েছিলেন। আমার মনে হয় না পাচারকারীদের সাহায্য ছাড়া কেউ তখন সিরিয়ায় যেতে পারত।
শামীমা বেগমের আইনজীবী তাসনিম আকুঞ্জি শামিমার নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, মূল যুক্তিগুলোর একটি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বিবেচনা করেননি, আর তা হলো শামীমা পাচারের শিকার হয়েছিলেন।
সিআইইএসের তদন্ত, অপারেশনের স্বার্থ, পদ্ধতি ও কার্যাবলি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য, স্বীকার কিংবা অস্বীকার করতে পারেন না।
কানাডার গোয়েন্দা সংস্থার বিষয়ে তিনি বলেছেন, পশ্চিমা গোয়েন্দাদের সম্পদ ছিলেন রাশেদ, তার এমন একজন হওয়ার কথা ছিল, যিনি ব্রিটিশ শিশুদের যুদ্ধক্ষেত্রে পাচার করার পরিবর্তে আমাদের জনগণকে রক্ষা করবেন।