ইউক্রেনীয় অবস্থান থেকে ছোড়া ৪টি আর্টিলারির গোলা জাপোরিজ্জা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানির মজুতে আঘাত হেনেছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনের রুশ নিয়ন্ত্রিত শহর এনারগোদারের কর্তৃপক্ষ।
একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, শুক্রবার আঘাত করা এই গোলার আঘাতের পরও তেজস্ক্রিয় বিকিরণ স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে।
রাশিয়া ও রাশিয়ার নিয়োগ করা স্থানীয় কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত ড্রোন, আর্টিলারি দিয়ে জাপোরিজ্জায় বারবার আঘাত করছেন ইউক্রেনীয় সেনারা।
ইউক্রেন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিয়েভ দাবি করছে, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়া এবং ইউক্রেনকে খারাপ হিসেবে উপস্থাপনের জন্য নিজেরাই সেখানে গোলা বর্ষণ করছে।
বৃহস্পতিবারও গোলাগুলির ফলে এনারগোদারের দক্ষিণে দাবানল শুরু হয়ে যায়, পরিস্থিতি সামাল দিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া নিরাপত্তা পরিষদে ইউক্রেনীয় গোলাবর্ষণের প্রমাণ সরবরাহ করেছেন। সেখানে জড়িত ইউক্রেনীয় সেনা ইউনিটের নাম ও অবস্থানও তুলে ধরা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রসি জাপোরিজ্জায় যেতে চান। মস্কোর পক্ষ থেকে এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো হলেও কিয়েভ এতে খুব একটা আগ্রহী নয়।
ইউক্রেন চায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অঞ্চলকে অসামরিকীকরণ করতে। রাশিয়া এতে আগ্রহী নয়। ক্রেমলিন বলছে, এমনটা করা হলে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আরও ঝুঁকিতে পড়বে।
এদিকে জাতিসংঘ বারবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, জাপোরিজ্জায় যেকোনো বিপর্যয় পুরো ইউরোপে বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, জাপোরিজ্জা নিয়ে যেকোনো সম্ভাব্য ক্ষতি আত্মহত্যার শামিল।
তুরস্কের প্রেসিডেন্টও জাতিসংঘপ্রধানের সুরেই কথা বলেছেন। তিনি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আরেকটি চেরনোবিল বিপর্যয়ের বিপদ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
১৯৮৬ সালে ইউক্রেনের চেরনোবিলে সোভিয়েত আমলে এক পারমাণবিক দুর্ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পারমাণবিক প্রযুক্তির ইতিহাসে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা।
২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর ২০ বছরে তেজস্ক্রিয়তার পরোক্ষ প্রভাবে প্রায় ৪ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।
গত মার্চে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা বলেছিলেন, জাপোরিজ্জা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লি গলে যাওয়া চেরনোবিলের থেকে ১০ গুণ বেশি ভয়াবহ হতে পারে।
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর মার্চের শুরুতেই ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নেন রুশ সেনারা। এরপর থেকে রাশিয়ান ন্যাশনাল গার্ড ও বিশেষজ্ঞ সেনারা প্রকল্পটি পাহারা দিচ্ছেন এবং ইউক্রেনীয় কর্মীরাও সেখানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।