ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার ওপর একের পর অবরোধ দিতে থাকে পশ্চিমারা। তাই ইউরোপকে চাপে ফেলতে রাশিয়াও গ্যাসকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে সরবরাহ কমিয়ে দেয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম হুহু করে বাড়ছেই। এমন পরিস্থিতিতে জানা গেছে, রাশিয়া ব্যাপক পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়াচ্ছে।
ফিনল্যান্ড সীমান্তের কাছে একটি প্ল্যান্টে প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ৪.৩৪ ঘন মিলিয়ন গ্যাস পোড়ানো হচ্ছে। বিবিসি নিউজের এক বিশ্লেষণে এমনটাই বলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুড়িয়ে ফেলা এই গ্যাস জার্মানিতে রপ্তানি করার কথা ছিল।
একই সঙ্গে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, এই গ্যাস পোড়ানোতে বায়ুমণ্ডলে যে কার্বন ডাই-অক্সাইড ছড়িয়ে পড়ছে তা আর্কটিক অঞ্চলে বরফ গলানো ত্বরান্বিত করতে পারে।
এই গ্যাস পোড়ানোর ঘটনাটি প্রথম চোখে পড়ে রাশিয়া সীমান্তের কাছে ফিনল্যান্ডের অধিবাসীদের। এই গ্রীষ্মেই তারা রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের উত্তর-পশ্চিমে বড় আগুনের শিখা দেখতে পান। সেখানে একটি নতুন তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) প্ল্যান্ট রয়েছে।
এই প্ল্যান্টটির অবস্থান ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করার সবচেয়ে বড় পাইপলাইন নর্ড স্ট্রিম ১ এর কাছাকাছিই।
যদিও প্রক্রিয়াগত কারণে প্ল্যান্টে গ্যাস পোড়ানো স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্ল্যান্টে অতিরিক্ত পোড়ানো হচ্ছে।
দূর থেকেও গ্যাস পোড়ানোর অগ্নিশিখা দেখা যাচ্ছে
ওহাইওর মিয়ামি ইউনিভার্সিটির স্যাটেলাইট ডেটার বিশেষজ্ঞ ড. জেসিকা ম্যাককার্টি বলেন, ‘আমি কোনো এলএনজি প্ল্যান্ট এতটা জ্বলতে দেখিনি।
‘জুন থেকে শুরু করে আমরা অগ্নিকাণ্ডের বিশাল চূড়াটি দেখছি, এটি কেবল চলে যায়নি। এটি খুব অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ রয়ে গেছে।’
১৯ আগস্ট রাশিয়ার রাষ্ট্র মালিকানাধীন জ্বালানি কোম্পানি গ্যাজপ্রম জানায়, ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের মূল পাইপলাইন নর্ড স্ট্রিম ১ নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩ দিন বন্ধ থাকবে।
অনলাইনে দেয়া এক বিবৃতিতে গ্যাজপ্রম বলেছে, পশ্চিম রাশিয়া ও জার্মানিকে সংযুক্তকারী নর্ড স্ট্রিম ১ আগস্টের ৩১ থেকে সেপ্টেম্বরের ২ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। রক্ষণাবেক্ষণের কাজে তাদের অংশীদার জার্মানির সিমেন্স এনার্জির বিশেষজ্ঞরাও জড়িত থাকবেন।
সবশেষ রাশিয়া রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নর্ড স্ট্রিম সাময়িক বন্ধ রেখে চালু করার পর থেকে এই পাইপলাইনের সক্ষমতার মাত্র ২০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করছে রাশিয়া।
রাশিয়া বলছে, সরবরাহ কমে যাওয়ার প্রধান কারণ প্রযুক্তিগত সমস্যা, তবে জার্মানির দাবি রাজনৈতিক কারণেই মস্কো এমন পদক্ষেপ নিয়েছে, যাতে জ্বালানির মাধ্যমে ইউক্রেন সংঘাতকে প্রভাবিত করা যায়।
প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় ইউরোপে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, ফলে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি বর্তমান পরিস্থিতি ইউরোপকে অর্থনৈতিক মন্দার দিকেও নিয়ে যেতে পারে।
গ্যাজপ্রমের পক্ষ থেকে গ্যাস সরবরাহ কমানো হলে শীতের আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত গ্যাসের মজুত করা আরও কঠিন হবে। শীতকালে ইউরোপে গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কারণ নাগরিকদের আবাসনগুলো গরম রাখার জন্য বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়।
রাশিয়া এরই মধ্যে রুবলে অর্থ পরিশোধ করতে রাজি না হওয়ায় পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, ফিনল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসে পুরোপুরি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।
ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার ওপর একের পর এক অবরোধ আরোপের জবাবে প্রাকৃতিক গ্যাসকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়া।
রাশিয়ার গ্যাস উত্তোলন ও বিতরণকারী সরকারি কোম্পানি গ্যাজপ্রমের একটি প্রকল্প নর্ড স্ট্রিম এজি পাইপলাইন। এ পাইপলাইনের মাধ্যমে বাল্টিক সাগরের তলদেশ দিয়ে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ করে রাশিয়া; পরে জার্মানির কাছ থেকে সেই গ্যাস ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। ২০০৫ সাল থেকে চালু হয় এই প্রকল্প।