বাগদত্তার মরদেহ ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারের জন্য ছয় ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিলেন আবির হারব। গত জুনে ইসমাইল ডুইকের সঙ্গে বাগদান হয়েছিল ২৪ বছরের আবিরের। শিগগিরই ঠিক হবে বিয়ের দিন। কেনাকাটায় ব্যস্ত দিন কাটছিল এ যুগলের। তবে সব শেষ হয়ে যায় বিমান হামলায়। দক্ষিণ গাজা উপত্যকায় ইসমাইলের বাড়ি গুড়িয়ে দেয় ইসরায়েলি সেনারা।
দিনটি ছিল ৬ আগস্ট। একদিন আগে এই এলাকায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা। একটি বোমা আঘাত হানে ৩০ বছরের ইসমাইলের বাড়িতে। মুহূর্তেই ধংসস্তূপে পরিণত হয় বাড়িটি। সেই সঙ্গে চাপা পড়ে একটি স্বপ্ন।
টানা তিনদিন চলে ইসরায়েলি হামলা। তেল আবিবের দাবি, সশস্ত্র গোষ্ঠী প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। সংগঠনটি ইসরায়েলে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তবে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ জানায়, নিহতদের প্রায় অর্ধেকই বেসামরিক নাগরিক।
আবির বলেন, ‘সেদিন ওর বাড়িতে আমাদের নিমন্ত্রণ ছিল। বোমা হামলার কারণে যেতে পারিনি। ইসমাইল আমাকে বলেছিল, সব ঠিক হয়ে যাবে, শিগগিরই আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে। তবে এটা আমার ভাগ্যে ছিল না।
‘আল-শাউত ক্যাম্পের একটি বাড়িতে বোমা হামলার খবর পাই। ওখানেই ইসমাইল থাকত। খবরটা শুনেই ওকে ফোন করি। ফোন ধরল না। ভয় পেয়ে গেলাম, জোরে কাঁদতে লাগলাম।’
ইসমাইলের পরিবার জানায়, বোমা হামলার কিছুক্ষণ আগে বাড়ি ফিরেছিল ইসমাইল। বোমায় ইসমাইলের মা-ও নিহত হন। দক্ষিণ গাজায় ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের কমান্ডার খালেদ মনসুরের বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে।
আবির বলেন, ‘ ধ্বংসস্তূপ থেকে হতাহতের বের করার প্রক্রিয়া দেখে সারা রাত চোখ বন্ধ করতে পারিনি। আল্লাহর কাছে দোয়া করছিলাম যেন ইসমাইলের বেঁচে থাকার খবর পাই। নিজেকে বলেছিলাম, পা কেটে ফেলা বা অন্য কিছু হলেও আমি খুশি। শুধু ওর প্রাণটা যেন থাকে।
‘খবরটা শুনে মনে হচ্ছিল জীবন আমার কাছ থেকে চুরি হয়ে গেছে। ও খুব দয়ালু এবং উদার ছিল। বিয়ের পর আমাদের থাকার জন্য একটি বাড়িও তৈরি করেছিল।’
আবির এবং ইসমাইলের গল্প গাজার দৈনন্দিন জীবনে সংঘাতের প্রভাবকে তুলে ধরে। যেখানে জীবনের গতিপথ বদলে যায় চোখের পলকে।
আবির বলেন, ‘এখনও মনে হয় দুঃস্বপ্নের মধ্যে আছি। যা ঘটেছে বিশ্বাস করতে চাই না। ইসরায়েল আমার স্বপ্ন ধ্বংস করেছে। আমার বাগদত্তার সঙ্গে আমার জীবনও কেড়ে নিয়েছে।’