বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রুশদি ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তানে নীরবতা

  •    
  • ১৪ আগস্ট, ২০২২ ১৮:৩২

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানে শুক্রবার সকালে সালমান রুশদি ছুরি হামলার শিকার হন। অস্ত্রোপচারের পর তার অবস্থা এখন কিছুটা উন্নতির দিকে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত রুশদির ওপর হামলা নিয়ে নীরবতা পালন করছেন ভারত ও পাকিস্তানের বিশিষ্টজনরা।

ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক সালমান রুশদির ওপর সন্ত্রাসী হামলায় গোটা বিশ্বের বুদ্ধিজীবী-লেখকরা যখন স্তম্ভিত, তখন প্রায় নিরুত্তাপ ভারতীয় উপমহাদেশ।

যুক্তরাজ্যের সংবাদ মাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত রুশদির ওপর হামলা নিয়ে নীরবতা পালন করছেন পাকিস্তানের বিশিষ্টজনরা।

রুশদির জন্ম ভারতের মুম্বাইয়ে হলেও দেশটির রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানে শুক্রবার সকালে সালমান রুশদি ছুরি হামলার শিকার হন। অস্ত্রোপচারের পর তার অবস্থা এখন কিছুটা উন্নতির দিকে।

৭৫ বছর বয়সী রুশদি তার উপন্যাস দ্য স্যাটানিক ভার্সেসের জন্য হত্যার হুমকি মাথায় নিয়ে ঘুরছিলেন। বইটির বিরুদ্ধে মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি অবমাননার অভিযোগ রয়েছে।

স্যাটানিক ভার্সেস লেখার জন্য ৩৩ বছর আগে ইরানের তৎকালীন প্রধান ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি তার ও তার বইয়ের প্রকাশকদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। রুশদির ওপর শুক্রবার হামলার প্রশংসা করেছেন খামেনি।

গার্ডিয়ান লিখেছে, পাকিস্তানে ধর্মীয় অবমাননা খুব সংবেদনশীল ইস্যু। অনেক সময় এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণ না হলেও বড় ধরনের সহিংসতা ঘটে।

পাঞ্জাবের গভর্নর সালমান তাসির ২০১১ সালে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে তার নিরাপত্তারক্ষীর হাতে নিহত হন। তাসির ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে আইন সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি আসিয়া বিবি নামে একজন খ্রিস্টান নারীকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

একজন মুসলিম নারীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আসিয়া আঘাত করেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছিল।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুশদির ওপর হামলার প্রতিবাদ করলে বা এ ইস্যুতে কথা বললে পাকিস্তানে হত্যার হুমকির আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে কেউ কথা বলছেন না।

পাকিস্তানের লেখক ও ঔপন্যাসিকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছে গার্ডিয়ান, তবে কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি।

অলাভজনক সংবাদ সংস্থা রাইজ নিউজের প্রতিষ্ঠাতা ভ্যানগাস একটি টুইটে লিখেছেন, ‘কেউ কেউ এখনও সালমান রুশদির উপর টুইট করবেন কিনা তা নিয়ে ভাবছেন। আপনি নিজেকে একজন লেখক, সাংবাদিক এবং কর্মী বলছেন, অথচ সহিংসতার নিন্দা করার সাহস আপনার নেই। আপনার নীরবতাই সবকিছু বলে দিচ্ছে। আপনি যেই হোন না কেন বিবেকবান হলে আপনি সহিংসতাকে কখনও উৎসাহ জোগাবেন না।’

সিরিল আলমেদা নামের একজন সাংবাদিক বলেছেন, ‘ইরানি ফতোয়ার ধোঁয়াশার মধ্যে অনেকেই ভুলে গেছেন, রুশদির বিরুদ্ধে প্রথম বিক্ষোভগুলোর কিছু হয়েছিল পাকিস্তানে। তবে সালমান তাসিরের হত্যাকাণ্ড সেই বিষয়টিকে বহুগুণে ছাড়িয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘আসিয়া বিবির ঘটনা ধর্মান্ধতার একটি ঢেউ তুলেছে। এটি সমাজকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে, আজ (পাকিস্তানের) ভোটের বিচারে সবচেয়ে বড় দলগুলোর মধ্যে একটি দল ব্লাসফেমি আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের এজেন্ডা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অল্পসংখ্যক কর্মী বা লেখক কথা বলার সাহস রাখেন।’

রুশদির ওপর হামলা নিয়ে পাকিস্তানের মতোই নীরব ভারত। ভারতই প্রথম দেশ হিসেবে ১৯৮৮ সালে দ্য স্যাটানিক ভার্সেস নিষিদ্ধ করে।

রুশদির ওপর হামলার ঘটনায় ভারত সরকার বা দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি।

স্যাটানিক ভার্সেস বইটি বের হওয়ার সময় কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল। তারা দ্রুত বইটি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন নটবর সিং। রুশদির ওপর হামলার পর শনিবার তিনি বইটির ওপর নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কারণে সে সময় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।’

নটবর সিং ভারতীয় বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়াকে বলেন, “তখনকার প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী বইটি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আমার মতামত জানতে চেয়েছিলেন। আমি বলেছিলাম, ‘সারা জীবন আমি বই নিষিদ্ধ করার বিরোধিতা করে এসেছি। তবে যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কথা আসে, তখন রুশদির মতো একজন মহান লেখকের বইও নিষিদ্ধ করা উচিৎ।”

রাজীব গান্ধী সরকারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে নটবর সিং বলেন, ‘পুরো মুসলিম বিশ্ব তখন জ্বলে উঠছিল। আমাদের বিপুল সংখ্যক মুসলিম নাগরিক রয়েছে। তা ছাড়া এই সময়ে বইটিতে যা আছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। রক্ষণশীল মুসলিম গোষ্ঠী এবং আলেমরা বইটি না পড়া সত্ত্বেও ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তারা বই নিষিদ্ধের দাবিতে রাস্তায় প্রতিবাদের অংশ হিসাবে কপিগুলো পুড়িয়ে দিয়েছিলেন।’

বর্তমান ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি সে সময় ওই সিদ্ধান্তের কারণে রাজীব গান্ধীকে অভিযুক্ত করেছিল। দলটি বলেছিল, মত প্রকাশের স্বাধীনতার তোয়াক্কা না করে মুসলিম ভোটের জন্য কংগ্রেস সরকার বইটি নিষিদ্ধ করেছে।

রুশদি ক্ষুব্ধ হয়ে রাজীব গান্ধীকে চিঠি লিখেছিলেন।

কয়েক দশক পরে এখন ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। সে সময় প্রতিবাদ করলেও এই সময়ে এসে বিজেপি সরকার রুশদির ওপর হামলা নিয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি।

কিছু রক্ষণশীল মুসলিম গোষ্ঠীও রুশদির উপর হামলার বিষয়ে বিবৃতি না দেয়াকে বেছে নিয়েছে। বিজেপি সহিংস কর্মকাণ্ডকে সমর্থনের অভিযোগ তুলে তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করতে পারে এমন আশঙ্কায় গোষ্ঠীগুলো চুপ থাকছে।

রুশদি ১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ উপন্যাস দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল।

১৯৮৮ সালে দ্য স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাস লেখার পর থেকে বছরের পর বছর ধরে প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছিলেন এই লেখক।

দ্য স্যাটানিক ভার্সেস রুশদির চতুর্থ উপন্যাস। এই বই লেখার কারণে রুশদিকে ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়েছিল।

দ্য স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশের পর সহিংসতায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন, যার উপন্যাসটির জাপানি ভাষায় অনুবাদকও রয়েছেন।

এ বিভাগের আরো খবর