বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে জবাব দিতে পারে ইরান

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২২ জুন, ২০২৫ ২২:২৮

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, মার্কিন হামলার পাল্টা জবাব দেওয়ার অধিকার রাখে ইরান। গত ১৩ জুন ইসরায়েল হঠাৎ ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় হামলা চালিয়ে বসার পরও ইরানের কর্তাব্যক্তিরা এমনটাই বলেছিলেন। এরপর সপ্তাহ খানেকের বেশি সময় ধরে তেহরান ও তেল আবিব আকাশপথে একে অপরের বিভিন্ন স্থাপনায় লাগাতার হামলা পাল্টা হামলা চালিয়ে গেছে।

ইসরায়েলের পীড়াপীড়ির পর এখন আনুষ্ঠানিকভাবে দৃশ্যপটে হাজির হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তারা ইসরায়েলের সঙ্গী হয়ে নাতানজ, ইসফাহান ও ফোরদোর পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়ে সেগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে। তিন স্থাপনায় মার্কিন হামলার কথা স্বীকার করেছে ইরানও। এর প্রতিক্রিয়ায় এখন তারা কী করবে, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রবল উদ্বেগ ও কৌতূহল চলছে।

বিবিসির নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিবেদক ফ্রাঙ্ক গার্ডনার মনে করছেন, ইরানকে এখন তিন কৌশলের মধ্যে একটিকে বেছে নিতেই হবে। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে—কিছুই না করা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে ইরান পাল্টা হামলা চালালে ‘আরও তীব্র ও শক্ত জবাবের’ হুমকি দিয়ে রেখেছেন। তেহরান যদি এখন ওয়াশিংটনের হামলার জবাবে কিছুই না করে, তাহলে ট্রাম্পের আরও হামলা থেকে মুক্তি পাবে। এই সূত্রে কূটনৈতিক চ্যানেলে আলোচনাও জোরদার হতে পারে।

কিন্তু এমন ক্ষেত্রে ইরানের শাসনব্যবস্থাকে ভয়ানক দুর্বল দেখাবে। এতদিন ধরে তারা তাদের ওপর হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে জবাব দেওয়ার যেসব হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল, সেগুলোকে মনে হবে ‘অক্ষমের আস্ফালন’; মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে তাদের প্রভাব ‘নাই’ হয়ে যাবে। দ্বিতীয় যে বিকল্প এখন ইরানি সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির হাতে আছে, তা হলো—দ্রুত ও কঠোর পাল্টা আঘাত।

ইসরায়েলের এত এত হামলার পরও ইরানের হাতে এখনো বিপুল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র থাকার কথা। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে থাকা ২০টির মতো মার্কিন ঘাঁটিকে নিশানা করতে পারে তারা। ড্রোন ও দ্রুতগতির টর্পেডো নৌযান দিয়ে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজে ‘ঝাঁক বেঁধে আক্রমণ’ চালাতে পারে তারা।

গার্ডনারের মতে, এখন শেষ যে বিকল্পের কথাও ইরান ভাবতে পারে, তা হলো সময় নেওয়া। পাল্টা আঘাত তারা করবে নিজেদের বেছে নেওয়া সময়ে। তারা এখনকার উত্তেজনা থিতিয়ে আসার জন্য অপেক্ষা করতে পারে এবং এমন এক সময়ে হামলা চলাতে পারে, যখন মার্কিন ঘাঁটিগুলো সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার কথা ভাববে না।

ইরান এবং অঞ্চলজুড়ে এর মিত্র বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী কয়েক দিন ধরে বারবার যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে বলেছিল, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে ওয়াশিংটন জড়ালে তারা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্বার্থে আঘাত হানবে। তবে অনেক বিশ্লেষকই বলছেন, মুখে ‘কড়া জবাবের’ অঙ্গীকার করলেও ইরান এবং তার তথাকথিত ‘প্রতিরোধ অক্ষের’ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে এসেছে।

ইসরায়েলের সঙ্গে ৯ দিনের যুদ্ধে ইরানের সামরিক সক্ষমতার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেই পশ্চিমা বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, এদিকে ‘প্রতিরোধ অক্ষের’ মধ্যে হামাস ও হিজবুল্লাহর অবস্থাও অনেকটাই শোচনীয়। ইয়েমেনের হুতি আর ইরাকের গোষ্ঠীগুলোর সক্ষমতা হামাস বা হিজবুল্লাহর মতো নয়।

‘দীর্ঘ সংঘাতের সূচনা’ ক্লিনটন, বুশ ও ওবামা প্রশাসনে ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করা ডেভিড ফিলিপস মনে করছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলায় ট্রাম্পের নির্দেশের ধারাবাহিকতায় ইরানও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটি ও স্বার্থে পাল্টা আঘাত হানবে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভিজিটর ফিলিপস আলজাজিরাকে বলেছেন, ‘ট্রাম্প কূটনীতিকে সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ সময় দেওয়ার কথা বলেছিলেন। মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র লাফ দিয়ে বন্দুক ধরে ট্রিগারে চাপ দেওয়ার এবং যে কোনো মূল্যে হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ওই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং মার্কিন বাহিনীর ওপর পাল্টা আঘাতের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। কাছাকাছি এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ হাজারের মতো সেনা রয়েছে।’ তার মতে, ‘পার্সিয়ান গর্বের গুরুত্বকে’ খাটো করে দেখলে ভুল করবে যুক্তরাষ্ট্র।

‘এখন ইরান আক্রান্ত হয়েছে, কেবল ইসরায়েলের হাতে নয়, যুক্তরাষ্ট্রের হাতেও। ইরান প্রতিশোধের পথ খুঁজবে এবং তাদের মনোযোগ মূলত থাকবে মধ্যপ্রাচ্য, লোহিত সাগরে থাকা মার্কিন সেনা ও অন্যান্য আমেরিকান স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়।’

মার্কিন হামলা ‘দীর্ঘ সংঘাতের সূচনা’ করল বলেই আশঙ্কা তার। ‘আমার মনে হয় না, এটা এখানেই শেষ হলো।’ বলেছেন ফিলিপস। একই মত কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপনসিবল স্টেটক্রাফটের মিডল ইস্ট প্রোগ্রামের উপপরিচালক অ্যাডাম উইনস্টেইনেরও। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখন মধ্যপ্রাচ্যে সুদীর্ঘ এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়ল।’

তিনি বলেন, ‘ইরান আগেই ঘোষণা দিয়েছে, তারা তাদের পরমাণু কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। তারা এখন এটা আরও গোপনে চালাবে। তারা হয়তো এনপিটি (পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি) থেকে বেরিয়ে যাবে, এবং এরপর তখন অবশ্যই ইসরায়েলিরা বলবে, এ জন্যই আমাদের আরও হামলা চালাতে হবে। এর পাল্টায় ইরানও কিছু মাত্রার পাল্টা হামলা চালাবে, না হলে ইরানের শাসকদের অস্তিত্ব ঝুঁকির মুখে পড়বে।’

‘এভাবেই সংঘাতের চক্রের সূচনা হয়। এ কারণেই আমি সন্দিহান যে যুক্তরাষ্ট্র কেবল এই একবারেই শেষ করতে পারবে। আমার মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্র এমন এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পথে, যা ইচ্ছাকৃত এবং যার সূচনা সে নিজেই করেছে—এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক,’ বলেছেন উইনস্টেইন।

এ বিভাগের আরো খবর