রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ক্রিমিয়া যুক্ত হওয়ার পর রুশদের প্রধান অবকাশ যাপনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে স্থানটি। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর ইউক্রেনের ভেতর সেনা পাঠাতে ট্রানজিট হিসেবে ক্রিমিয়াকে ব্যবহার করে রুশ সেনারা। এরপরেও ক্রিমিয়ার ভেতরে সেই অর্থে কখনও হামলা চালায়নি ইউক্রেনীয় সেনারা।
এবার ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রিমিয়ার নভোফেদোরিভকাতে ধারাবাহিকভাবে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় অঞ্চলটি ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে রুশ পর্যটকরা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এরই মধ্যে পালাতে থাকা রুশদের গাড়ির যানজটে থাকার ছবি প্রকাশ পেয়েছে
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ক্রিমিয়ার নভোফেদোরিভকাতে কমপক্ষে ১৫ বার আলাদা বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছে।
বিস্ফোরণগুলো হয়েছে ক্রিমিয়ায় অবস্থিত রাশিয়ার একটি বিমান ঘাঁটিতে। যেই বিমান ঘাঁটি থেকে ইউক্রেনের অভ্যন্তরেও হামলা পরিচালনা করা হতো। সেই বিমান ঘাঁটিতে বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধবিমান, ফ্রিগেট বিমান রয়েছে।
ক্রিমিয়া থেকে পালানো রুশদের গাড়ির দীর্ঘ সারি
ঘাঁটিটির অবস্থান ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ১৩০ মাইল দূরে।
কিয়েভ এই ঘটনার কোনো দায়ভার স্বীকার না করলেও ঘটনার পরপরই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের সুত্রপাত ক্রিমিয়া থেকে এবং ক্রিমিয়া স্বাধীনের মাধ্যমেই এই যুদ্ধের সমাপ্তি হবে।
এদিকে ইউক্রেনের একজন সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ইউক্রেনের হামলার কারণেই এই বিস্ফোরণ।
তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, বিস্ফোরক ধ্বংস করার কারণেই এই বিস্ফোরণ। যদিও ক্রিমিয়ার রুশ কর্মকর্তারাই বলছেন, বিস্ফোরণে ১ জন মারা গেছেন এবং শিশুসহ আহত হয়েছেন ৫ জন।
ধারণা করা হচ্ছে, এই বিস্ফোরণ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত আটাকমস ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে। তবে বাইডেন প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনকে এই ধরনের কোনো অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে জানায়নি।
২০১৪ সালে ইউক্রেনে এক অভ্যুত্থানে মস্কোপন্থি সরকারের পতন হলে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করে ক্রিমিয়া দখল করে নেয়। পরে এক গণভোটে ক্রিমিয়ার জনগণ রাশিয়ার সঙ্গে যোগদানের পক্ষে ভোট দেয়। ক্রিমিয়াতে মূলত রুশভাষীদেরই বসবাস।
প্রত্যক্ষদর্শীরা প্রায় ১৫টি আলাদা বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন
যদিও ইউক্রেন এই গণভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে এবং ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রাশিয়া-দখলকৃত অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করে।
সম্প্রতি ইউক্রেনীয় সেনাদের ভারী অস্ত্র সরবরাহ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। তবে শর্ত এই যে এসব ভারী অস্ত্র দিয়ে রুশ ভূখণ্ডে আঘাত করা যাবে না। শুধু ইউক্রেনে অনুপ্রবেশ করা রুশ সেনাদের ওপর হামলার ক্ষেত্রে এসব অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে।
ইউক্রেন দাবি করে আসছে, ক্রিমিয়া হলো রাশিয়ার দখলকৃত অঞ্চল। রুশ ভূখণ্ডে পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি ক্রিমিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।