যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্দি বিনিময়বিষয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে রাশিয়া।
শুক্রবার কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনটি জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ। সেখানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হান সেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ল্যাভরভ।
মাদকের মামলায় রুশ আদালতে যুক্তরাষ্ট্রের নারী বাস্কেটবল তারকা ব্রিটনি গ্রিনারকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দেয়ার ঘটনায় তাকে ফেরত পাওয়ার বিষয়ে ওয়াশিংটনের তোড়জোড়ের মধ্যে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান ল্যাভরভ।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আরআইএ নভোস্তির বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম সিএনএন এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
গ্রিনারের দোষী সাব্যস্ত হওয়া ও তাকে ফিরিয়ে নেয়ার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ল্যাভরভ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্দি বিনিময় নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে রাশিয়া। উভয় দেশের সম্মতিতে কূটনৈতিকভাবে হবে এমন সংলাপ। (রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন) উভয় প্রেসিডেন্ট যেভাবে সম্মত হবেন সে অনুযায়ীই এগুবে সংলাপ। কেউ কিভাবে মন্তব্য করছে তা বিষয় নয়। আলোচনার এই পথ সবসময় চালু থাকবে।’
ব্রিটনি গ্রিনার (ডানে) মাদকের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলেও ইচ্ছাকৃতভাবে আইন ভঙ্গ করার কথা অস্বীকার করেছেন। ছবি: সংগৃহীত
‘আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত, তবে উভর প্রেসিডেন্টের সম্মতি অনুযায়ী প্রস্তাবিত কাঠামো মতে,’ যোগ করেন তিনি।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার মাদকের মামলায় বাস্কেটবল তারকা ব্রিটনি গ্রিনারকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দেয় মস্কোর একটি আদালত।
৩১ বছর বয়সী গ্রিনার গাঁজার তেল রাখার কথা স্বীকার করলেও, আদালতকে বলেছিলেন, তিনি সরল মনে ভুলটি করেছেন।
তবে আদালত এতে সন্তুস্ত হতে পারেনি। চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য রাখার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে সর্বোচ্চ সাজা দেন বিচারক।
গ্রিনার দুইবার অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতেন। তাকে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন বলে মনে করা হয়।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মস্কোর কাছে একটি বিমানবন্দরে তাকে আটক করা হয়। সে সময় তার লাগেজে গাঁজার তেলযুক্ত ভ্যাপ কার্তুজ পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের অফ-সিজনে ক্লাব বাস্কেটবল খেলতে রাশিয়া এসেছিলেন তিনি।
কয়েকদিনের মধ্যেই ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এখন মামলাটি যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে হাই-প্রোফাইল কূটনীতির বিষয় হয়ে উঠেছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক গিনিপিগ’ হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে গ্রিনারকে।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই রায়কে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘রাশিয়া বা অন্য যে কোনো দেশ অন্যায়ভাবে কাউকে আটকে রাখার এমন ঘটনা বিদেশে বসবাসকারী প্রত্যেকের নিরাপত্তার জন্য হুমকির প্রতিনিধিত্ব করে।’
গ্রিনারকে যখন আদালত থেকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি আমার পরিবারকে ভালোবাসি।’
এটা স্পষ্ট নয় যে তিনি আসলে কতদিন কারাগারে কাটাবেন।
কারণ যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া এখন কার্যত বন্দি বিনিময় নিয়ে আলোচনা শুরু করতে পারেনি।
এদিকে, কারাবন্দি রুশ অস্ত্র পাচারকারী ভিক্টর বাউটকে চুক্তির অংশ হিসেবে রুশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারে ওয়াশিংটন। ভিক্টর ‘ডেথ অফ মার্চেন্ট’ হিসেবে পরিচিত।