ইউক্রেনে চলমান রাশিয়ার সামরিক অভিযানের শুরুর দিকেই জাপোরিজ্জা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল রুশ সেনারা। সে সময় ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, আরেকটি চেরনোবিল পরিস্থিতি হতে যাচ্ছে জাপোরিজ্জা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ঘিরে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেছেন, রুশ দখলে থাকা ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপোরিজ্জা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
তিনি আরও বলেছেন, দ্রুত জাপোরিজ্জায় পরিদর্শন ও মেরামত প্রয়োজন। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাটালগে এমন কিছু বস্তু আছে, যা কখনোই একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে থাকা উচিত নয়।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে রাফায়েল গ্রোসি বলেন, ‘জাপোরিজ্জার পরিস্থিতি খুবই নাজুক। সেখানে পারমাণবিক নিরাপত্তার প্রতিটি নীতিই লঙ্ঘন করা হয়েছে। আমরা কোনোভাবেই তা চলতে দিতে পারি না।’
তিনি জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই আইএইএ ইউক্রেন ও রাশিয়ার অনুমতি নিয়ে সেখানে মিশন পাঠাবে। তবে যেহেতু এটি যুদ্ধক্ষেত্র, সেখানে পাঠাতে জাতিসংঘেরও অনুমোদন লাগবে।
যদিও এর আগে ইউক্রেনই আইএইএর পরিদর্শক দলকে জাপোরিজ্জা পরিদর্শনে অনুমোদন দেয়নি। ইউক্রেন বলছিল, এমন অনুমোদনের ফলে রুশ হামলা বৈধতা পেয়ে যেতে পারে।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, দেশটির দক্ষিণে দিনিপ্রো নদীর কাছে অবস্থিত এই পাওয়ার স্টেশনে রুশ সেনারা অবস্থান করছে এবং সেখানে তারা সামরিক সরঞ্জামাদি সংরক্ষণ করছেন।
জাপোরিজ্জা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পাহারা দিচ্ছে রুশ সেনা
জাপোরিজ্জা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবস্থানও যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি। পশ্চিমারা বলছে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে সামরিক ঘাটি হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর জন্য এই প্ল্যান্টটিকে নিরাপদ সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে।
ব্লিঙ্কেনের অভিযোগ, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়া। কারণ ইউক্রেনে সেনারা সেখানে গুলিবর্ষণ করতে পারবে না, যদি সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষতি হয়।
তবে জাপোরিজ্জায় থাকা একজন রুশ কর্মকর্তা ইয়েভজেনি বালিতস্কি পাল্টা অভিযোগ করে বলেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী প্লান্টে হামলা করার জন্য পশ্চিমা সরবরাহকৃৎ অস্ত্র ব্যবহার করছে।
বালিতস্কি আরও দাবি করেন যে আণবিক শক্তি সংস্থাকে তারা দেখাতে প্রস্তুত যে কীভাবে রুশ সেনারা পারমাণবিক স্থাপনাটি পাহারা দিচ্ছে, যখন ইউক্রেনীয়রা এটি আক্রমণ করছে।
রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে ইউক্রেনীয় কর্মী ও রুশরা এখনও প্ল্যান্টটির বিদ্যুৎ উৎপাদন চালু রেখেছে।
গত মার্চে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের মধ্যেই দেশটিতে অবস্থিত ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপোরিজ্জাতে হামলা চালায় রুশ সেনারা। ইউক্রেন সে সময় দাবি করে, রুশ গোলার আঘাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে আগুন ধরে যায়।
জাপোরিজ্জায় পরিস্থিতি খুবই নাজুক। সেখানে পারমাণবিক নিরাপত্তার প্রতিটি নীতিই লঙ্ঘন করা হয়েছে। আমরা কোনোভাবেই তা চলতে দিতে পারি না।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা জানিয়েছিলেন, এই কেন্দ্রের চুল্লি গলে যাওয়া চেরনোবিলের থেকে ১০ গুণ বেশি ভয়াবহ হতে পারে।
এর আগে ১৯৮৬ সালে ইউক্রেনের চেরনোবিলে সোভিয়েত আমলে এক পারমাণবিক দুর্ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পারমাণবিক প্রযুক্তির ইতিহাসে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা।
২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর ২০ বছরে তেজস্ক্রিয়তার পরোক্ষ প্রভাবে প্রায় ৪ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।