বহুতল ভবনের ছাদে গাড়ি পার্কিং সিঙ্গাপুরের শহরগুলোতে প্রচলিত। যানযট দূর করতে অনেক ভবনের ছাদকে গাড়ি পার্কিং এর জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে অনেকেই গাড়ি পার্কের এই জায়গাগুলোকে খামার হিসেবে ব্যবহার করছেন।
আইলিন গোহ নােেম এক নারী সিঙ্গাপুরের একটি গাড়ি পার্কের উপরের ডেক থেকে একটি সবজির খামার চালান।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, তিনি এটি বেশ বড় পরিসরে করেছেন। যেখান থেকে আশেপাশের খুচরা বিক্রেতাদের দিনে চার’শ কেজি পর্যন্ত সবজি সরবরাহ করেন।
আইলিন বলেন, ‘সিঙ্গাপুর বেশ ছোট। তবে আমাদের অনেক গাড়ি পার্ক আছে। এখানকার বাসিন্দাদের চাহিদা পূরণের জন্য খামার করাটা অনেকটাই স্বপ্ন।
সরকার স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২০ সালে অব্যবহৃত প্লটগুলো লিজ দেওয়া শুরু করে। ৫.৫ মিলিয়ন লোক বাস করা দেশটি এখন খাদ্যের ৯০ শতাংশেরও বেশি আমদানি করে।
তবে এই ঘনবসতিপূর্ণ দ্বীপরাষ্ট্রে জায়গার অভাব রয়েছে। তার মানে এখানে জমির দাম কম নয়। তাছাড়া সিঙ্গাপুরে বিশ্বের সবচেয়ে দামি কিছু সম্পদ রয়েছে।
একজন কৃষক বিবিসিকে বলেন, যে তার প্রথম গাড়ি পার্কিং প্লটের দাম বেশি। এর মানে হল এটি তাকে ছেড়ে দিয়ে কোন সস্তা জায়গায় চলে যেতে হবে।
বিবিসি নিউজ আইলিন গোহের খামার পরিদর্শন করে দেখে, এটি একটি ফুটবল মাঠের আয়তনের প্রায় তিন গুন। সেখানে শ্রমিকরা চাইনিজ রান্নায় ব্যবহৃত সবুজ শাক-সবজি বাছাই করে প্যাকিং করছিলেন।
গোহ বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন ফসল কাটাই। এটি প্রতিদিন একশ কেজি থেকে ৪০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এটি আমরা যে পরিমাণ সবজি চাষ করি তার উপর নির্ভর করে।’
তিনি বলেন, খামারটি শুরু করতে প্রায় এক মিলিয়ন খরচ হয়েছে। যার বেশিরভাগ অর্থ চাষাবাদ বাড়ানো জন্য সরঞ্জাম কিনতে ব্যয় করা হয়েছে।
‘আমাদের সেট আপ কোভিড চলাকালীন খামারের কাজ শুরু করেছি। তাই সরঞ্জাম অনেক বেশি ব্যয়বহুল ছিল। পাশাপাশি বেশ সময়ও লেগেছে।’
তিনি আরও বলেন, সরকারের দেয়া ছাদের গাড়ি পার্কের প্রথম দরপত্র। তাই এটি সবার জন্য নতুন একটি বিষয় হিসেবে আলোচিত হয়।’
এতে সিঙ্গাপুরের ছাদকৃষি যারা করছেন তারা অর্থ উপার্জনের অন্য উপায় খুঁজে পাচ্ছেন।
তবে ছাদের খামারগুলোই সিঙ্গাপুরের লক্ষ্যমাত্রায় খাদ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করার একমাত্র উপায় নয়।
দেশের বেশিরভাগ উৎপাদিত পণ্য উচ্চ প্রযুক্তির কল্যাণে পাওয়া। যাতে সরকার প্রচুর ভর্তুকি দেয়। সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২০ সালে ২৩৮টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত খামার ছিল।
সিঙ্গাপুর ফুড এজেন্সি (এসএফএ) বলছে, কিছু খামার ইতিমধ্যেই লাভজনক ব্যবসা করছে। লাভ বৃদ্ধি করতে তারা উৎপাদন আরও বাড়াতে পারে।
এসএফএ’র মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা সিঙ্গাপুরের জন্য একটি অস্তিত্বের সমস্যা। একটি ছোট শহর-রাজ্য হিসেবে সিঙ্গাপুর খাদ্য সরবরাহ কম হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ কারণেই আমরা আমাদের সম্পদকে সুরক্ষিত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রোগ্রামের একজন পরিচালক অধ্যাপক চেন বলেছেন, ‘এসএফএ থেকে অনুদান এবং ভোক্তাদের আরও স্থানীয় পণ্য কিনতে উত্সাহিত করার জন্য নিয়মিত কৃষকের বাজারের মতো ব্যবস্থা রয়েছে।"
যাইহোক, লি কুয়ান ইউ স্কুল অফ পাবলিক পলিসির সহকারী অধ্যাপক সোনিয়া আক্তার বিশ্বাস করেন যে উচ্চ পরিচালন খরচ শহুরে কৃষকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
"সিঙ্গাপুর এই স্পেসে কাজ করা উদ্যোক্তাদের প্রচুর ভর্তুকি এবং আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে," সে বলে৷
"প্রশ্ন হল এই খামারগুলি পরিচালনা করতে এবং বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর হবে কিনা যখন সরকারী সহায়তা প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে।"
সিঙ্গাপুরের শহুরে ছাদে মাঝখানে টাওয়ার ব্লক করে গোহের এই কৃষিকাজ সাধারণ কৃষি ঐতিহ্য আলাদা মনে হতে পারে।
তবে যাই হোক, তিনি তার আগে আসা কৃষকদের প্রজন্মকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। হাল ছেড়ে দেওয়া কোনও সমাধান নয়। এটি যেমন চ্যালেঞ্জিং, তত বেশি ফলপ্রসূ।