টুইটার কিনে নেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ১০ দিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পরাগ আগারওয়ালকে সতর্ক করেছিলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক।
চুক্তি অমান্য করে টুইটার কিনে নেয়া থেকে সরে আসার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার পরও আগারওয়ালের সঙ্গে বাহাস করার সুযোগ হাতছাড়া করেননি টেসলা ও স্পেসএক্সের মালিক ইলন মাস্ক।
টুইটারের সিইওর উদ্দেশে ইলন মাস্ক বলেন, ‘আপনার আইনজীবীরা আমার ও আপনার মধ্যকার আলাপ-আলোচনা নিয়েও সংকট তৈরি করার চেষ্টা করছেন।’
টুইটারে ইলন মাস্ক কীভাবে বিনিয়োগ করতে চান তা জানতে চেয়ে পাঠানো চিঠির জবাবে সিইও আগারওয়ালের উদ্দেশে এমনটি জানান তিনি। গত মাস ২৮ জুনের চিঠির জবাবে এমনটি টুইট করেন তিনি।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে গত ১২ জুলাই চুক্তি অমান্য করে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে টুইটার কিনে নেয়া থেকে সরে আসায় ইলন মাস্কের নামে মামলা করে টুইটার কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ডেলোয়্যার কোর্ট অফ চ্যান্সারিতে টুইটারের চেয়ারম্যান ব্রেট টেইলরের পক্ষে মামলাটি করা হয়।
মামলায় বলা হয়, চুক্তির শর্ত অমান্য করায় টেসলা ও স্পেসএক্সের মালিক ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ মামলায় বলা হয়, চুক্তি অনুযায়ী টুইটারের প্রতিটি শেয়ার ৫৪ দশমিক ২০ ডলারে কিনে নিয়ে গোটা প্রতিষ্ঠানের একীভূতকরণ সম্পন্ন করতে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিকে বাধ্য করাতে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন করা হয় ডেলোয়্যার আদালতে।
এর দুই দিন আগে তার নামে মামলার প্রস্তুতির কথা শুনে মজা করে টুইট করেন টেক জায়ান্ট ধনকুবের ইলন মাস্ক।
নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে একাধিক মিম টুইট করে রসিকতা করে মাস্ক বলেন, তারা আমাকে বটের (ভুয়া অ্যাকাউন্ট) তথ্য না দিয়ে আমাকে টুইটার কিনতে বাধ্য করতে চাইছে। এটি খুবই হাস্যকর বিষয়।’
গত ৮ জুলাই টুইটার কেনার জন্য ৪৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাতিল করেন ইলন মাস্ক।
এর আগে ৪ এপ্রিল জানা যায়, টুইটারের প্রায় ৯ দশমিক ২ শতাংশ শেয়ারের মালিক ইলন মাস্ক। যার জন্য তিনি খরচ করেছেন ২.৪ বিলিয়ন ডলার। সে সময় একক মালিক হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে বেশি শেয়ারের মালিক হলেও ১০ এপ্রিল টুইটার বোর্ডের মিটিংয়ে যোগ দিতে অস্বীকার করেন তিনি।
পরে ইলন মাস্ক তার পরিকল্পনা স্পষ্ট করেন যে তিনি আসলে পুরো টুইটারই চান।
১৪ এপ্রিল ইলন মাস্ক টুইটারের বাকি শেয়ারগুলোর প্রতিটি ৫৪.২০ ডলারে কিনে নেয়ার প্রস্তাব দেন, যা আগের কেনা ৯.২ শতাংশ শেয়ারের থেকে ৩৮ শতাংশ বেশি।
কেন কিনছেন না টু্ইটার
টু্ইটার কেনার আগ্রহ প্রকাশ করলেও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক আর টুইটার কিনতে চান না বলে জানিয়েছেন তিনি।
সিএনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮ জুলাই টুইটারের প্রধান আইন কর্মকর্তার কাছে ইলন মাস্কের পক্ষ থেকে এক আইনজীবীর পাঠানো চিঠিতে এমনটাই বলা হয়েছে।
যদিও টুইটারের বোর্ড চেয়ার ব্রেট টেলর জানিয়েছেন, চুক্তি কার্যকর করতে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা করছেন তারা।
টেলর বলেন, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী যে ডেলোয়্যার কোর্ট অফ চ্যান্সারিতে জয়ী হব।’
মাস্কের পক্ষ থেকে তার আইনজীবী বলেছেন, টুইটার চুক্তির বাধ্যবাধকতা মেনে চলেনি। মাস্কের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা চুক্তির জন্য প্রাসঙ্গিক ব্যাবসায়িক তথ্য তারা সরবরাহ করেনি। কখনো কখনো মাস্কের অনুরোধ তারা উপেক্ষা করেছে এবং কখনো অযৌক্তিক বলে সেগুলো সরবরাহের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইলন মাস্কের এই চিঠির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর টুইটারের শেয়ারের দাম ৬ শতাংশ কমে যায়।
এর আগে ৪৪ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে টুইটার কেনার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা স্থগিত করেছেন টেসলা ও স্পেসএক্সের মালিক ইলন মাস্ক।
মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারের স্প্যাম এবং ভুয়া অ্যাকাউন্ট নিয়ে সর্বশেষ তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য অপেক্ষা করবেন মাস্ক।
ইলন মাস্ক বলেছিলেন যে, টুইটারের দৈনিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর ৫ শতাংশ স্প্যাম অ্যাকাউন্ট।
ইলন মাস্কের বক্তব্য ছিল, কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য বাকস্বাধীনতা একটি সামাজিক বাধ্যবাধকতা। বর্তমান কাঠামোতে টুইটার তা দিতে পারবে না। পরে তিনি ‘সেরা ও চূড়ান্ত’ প্রস্তাব হিসেবে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে কোম্পানিটিকে ব্যক্তিগতভাবে কিনে ফেলার প্রস্তাব দেন।
এর আগে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে টেডের এক সাক্ষাৎকারে দেয়া বক্তব্যে মাস্ক জানান, টুইটার থেকে আয়ের কোনো লক্ষ্য নেই তার। বিশ্বব্যাপী সর্বজনীন বাকস্বাধীনতাই তার লক্ষ্য। এমনকি টুইটারের অভ্যন্তরীণ সব কিছু একজন ব্যবহারকারী যাতে জানতে পারে, তার জন্য টুইটারের অ্যালগরিদমও উন্মুক্ত করে দিতে চান তিনি।