অর্থনৈতিক মন্দায় ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কাকে বাঁচাতে এবার এগিয়ে এলো দেশটির সেনাবাহিনী। ১ হাজার ৫০০ একরের বেশি অনুর্বর বা পরিত্যক্ত রাষ্ট্রীয় জমিতে কৃষিকাজ করবে তারা। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ভবিষ্যতে ঘাটতি এড়াতে এ পদক্ষেপ বলে জানিয়েছে লঙ্কান সেনাবাহিনী।
ব্রিটেন থেকে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর সবচেয়ে বাজে অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটি। এই অবস্থায় খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির সম্পূরক ও প্রচারের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবার গ্রিন অ্যাগ্রিকালচার স্টেয়ারিং কমিটি (জিএএসসি) প্রতিষ্ঠা করেছে।
অর্থনৈতিক সংকটের কারণে খাদ্য, ওষুধ, রান্নার গ্যাস, জ্বালানি এবং টয়লেট পেপারের মতো নিত্যপণ্যের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জ্বালানি ও রান্নার গ্যাস কেনার জন্য দোকানের বাইরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছে দেশটির সাধারণ নাগরিকরা।
সরকারের চাষাবাদ অভিযানের সহায়ক প্রক্রিয়া হিসেবে জুলাইয়ের প্রথম দিকে শুরু হওয়া জরুরি প্রকল্পটির নেতৃত্বে আছেন সেনাবাহিনীর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভিকুম লিয়ানাগে। চিফ অফ স্টাফ মেজর জেনারেল জগথ কোডিথুওয়াক্কু পুরো প্রকল্পের তত্ত্বাবধান করবেন।
সেনাবাহিনী শুক্রবার নিউজফার্স্ট ডট এলকে জানায়, কৃষি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে নির্বাচিত বীজের জাত চাষের জন্য সেনারা কাজ করবে। দেশজুড়ে সব নিরাপত্তা বাহিনীর সদর দপ্তর এখন আঞ্চলিকভাবে চাষাবাদের সম্ভাবনাগুলো পরীক্ষা করছে৷
প্রতিবেদনে বলা হয়, আঞ্চলিক স্তরে জমিগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোকে চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত করে তোলা হবে। তার আগে সংশ্লিষ্ট গভর্নর, জেলা ও বিভাগীয় সচিবালয়, ভূমি কর্মকর্তা এবং গ্রাম সেবা আধিকারিকদের কাছ থেকে নেয়া হবে পরামর্শ।
শ্রীলঙ্কায় চালের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঠেকাতে ভারতীয় ক্রেডিট লাইনের আওতায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিউজ পোর্টাল ইকোনমি নেক্সট বলছে, ভারতীয় ঋণ সহায়তা কর্মসূচির অধীনে স্টেট ট্রেডিং করপোরেশনকে তহবিল বরাদ্দ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
অর্থনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলার জন্য মার্চে শ্রীলঙ্কা সরকারকে দেয়া এক বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়েছে ভারত। সময় বাড়ানোর বিষয়ে চুক্তি হওয়ার পর শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছিলেন, ‘ভারত সব সময় শ্রীলঙ্কার জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখবে।’
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ২০২১ সালের এপ্রিলে রাসায়নিক সারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। এতে চাল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটেছিল।
এই নিষেধাজ্ঞার আগে ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল শ্রীলঙ্কা। পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে ২০২০ সালে মহামারি শুরুর পর থেকে। লকডাউনে বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম খাত পর্যটনশিল্প ধসে পড়ে।
প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহে সম্প্রতি পার্লামেন্টে বলেছেন, ‘আগামী ছয় মাসের জন্য মানুষের দৈনন্দিন জীবন যেন ব্যাহত না হয়, তা নিশ্চিত করতে শ্রীলঙ্কার ৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।’
প্রায় দেউলিয়া দেশটি এখন বৈদেশিক ঋণখেলাপি। শ্রীলঙ্কার এখন মোট বৈদেশিক ঋণ ৫১ বিলিয়ন ডলার।
এপ্রিলে রাজাপাকসে সরকার জানিয়েছিল, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হবে শ্রীলঙ্কাকে। তবে চলতি বছর প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ স্থগিত করছে তারা।