ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় লুহানস্ক অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এখন রুশ বাহিনীর হাতে। সেখান থেকে সেনাবাহিনী সরিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করেছে ইউক্রেন।
রোববার রাশিয়া সমর্থিত বিদ্রোহী অধ্যুষিত এই অঞ্চলের লিসিচানস্ক শহর দখল নেয়ার মধ্য দিয়ে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এখন রুশ বাহিনীর।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সার্জেই সোইগু রোববার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জানিয়েছেন তাদের সেনাবাহিনী লিসিচানস্ক ও এর আশপাশে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পুরো দখলে নিয়েছে।
সেনা সরিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করে সন্ধ্যায় ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র নিশ্চিত করেন, বহু হতাহত এড়াতে লিসিচানস্ক শহর থেকে সেনাদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের রক্ষক ও যোদ্ধাদের জীবন রক্ষায় অনেককে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।’
গত ২১ ফেব্রুয়ারি এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহী অধ্যুষিত দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এর তিন দিন পর ইউক্রেনে অভিযান চালায় রুশ বাহিনী।
২০১৪ সালের ১১ মে পূর্বাঞ্চলীয় লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক অঞ্চল ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে গণভোটের আয়োজন করে। এতে স্বাধীনতার পক্ষে রায় হলেও তা মেনে নেয়নি ইউক্রেন। এর প্রায় আট বছর পর ২১ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের ওই দুই অঞ্চলকে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। এই আট বছরে ওই অঞ্চলে সংঘাতে মারা পড়েছেন ১৪ হাজারের বেশি মানুষ।
গত সপ্তাহজুড়ে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ দাবি করে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে লিসিচানস্কে ব্যাপক হামলার শিকার হচ্ছে তারা। কিন্তু শহরটি তাদের দখলেই রয়েছে। আর রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বলছে, তারা সফলভাবে শহরে প্রবেশ করেছে এবং কেন্দ্রে অবস্থান নিয়ে আছে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর লিসিচানস্ক এ সময় প্রতিযোগিতার কেন্দ্রে ছিল। রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই দেশই এ শহর দখলের দাবি করে।
ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ বলে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে লিসিচানস্কে ব্যাপক হামলার শিকার হচ্ছে তারা। কিন্তু শহরটি তাদের দখলেই রয়েছে।
আর রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বলে, তারা সফলভাবে শহরে প্রবেশ করেছে এবং কেন্দ্রে অবস্থান নিয়ে আছে।
লিসিচানস্ক ছিল ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া লুহানস্ক অঞ্চলের ভেতরে ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত শেষ শহর। দোনবাস অঞ্চলের একাংশে অবস্থিত এটি।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর এখন পর্যন্ত দেশটির ৮০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। একই সঙ্গে দেশ ছেড়েছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ।
যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এ যুদ্ধ বন্ধ না হলে বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের খাদ্যসংকট তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।