ইসরায়েলের অভিযানের সময় গত মাসে অধীকৃত পশ্চিম তীরে আল জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহের মাথায় বিদ্ধ গুলিটি যুক্তরাষ্ট্রকে দেবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
এর আগে পরীক্ষার পর প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, বিশেষ এই গুলিটি ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ব্যবহার করে এবং এই ধরনের গুলির নকশা ও প্রস্তুতকারক দেশ হচ্ছে তেল আবিবকে অস্ত্র সরবরাহকারী যুক্তরাষ্ট্র।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের জেনারেল প্রসিকিউটর আকরাম আল-খাতিব শনিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমরা পরীক্ষার জন্য গুলিটি যুক্তরাষ্ট্রকে দিতে একমত হয়েছি।’ এর বেশি তথ্য দিতে রাজি হননি তিনি।
একাধিক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং গণমাধ্যম এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সাংবাদিক শিরিন।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা গত মাসে জানিয়েছে, সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী, ১১ মে শিরিন আবু আকলেহর শরীরে বিদ্ধ গুলিটি ছুড়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী।
বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, জেরুজালেমে জন্ম নেয়া আবু আকলেহকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
ব্যালিস্টিক ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সবুজ টিপযুক্ত গুলিটি সুরক্ষাসামগ্রী ভেস্ট ভেদ করার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়েছিল এবং এটি এম৪ রাইফেলে ব্যবহৃত হয়।
তার মাথা থেকে বের করা গুলিটি ট্রি-ডি মডেল ব্যবহার করে পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ৫.৫৬ মিলিমিটার ক্যালিবারের ছিল। বিশেষ এই বুলেট শুধু ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনী ব্যবহার করে। গুলিটি যুক্তরাষ্ট্রে ডিজাইন এবং তৈরি করা হয়েছিল, বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে দাবি করেছিল ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা আবু আকলেহকে হত্যা করতে পারে।
গত ১১ মে পশ্চিম তীরের জেনিন শহরের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর তল্লাশির খবর সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন ৫১ বছর বয়সী শিরিন আকলেহ। ওই সময় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
জেনিনের এক বাসিন্দা ভিডিও ধারণ করেছেন; যার সত্যতা যাচাই করেছে আল জাজিরা। এতে দেখা গেছে, এলাকাটি খুবই শান্ত অবস্থায় রয়েছে। ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলিদের মধ্যে কোনো সংঘর্ষের ঘটনাও নেই সেখানে।
ভিডিওতে কিছু লোককে কথা বলতে এবং হাসতে দেখা যায়। এ সময় আকলেহ এবং তার সহকর্মীরা প্রেস লেখা জ্যাকেট পরা অবস্থায় ছিলেন।
গুলি শুরুর পর লোকজন দিগবিদিক দৌড়াতে শুরু করে। এরই একপর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সাংবাদিক আকলেহ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০০ সালে ফিলিস্তিনে দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরুর সময় থেকে আল জাজিরার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শিরিন আকলেহ। খুন হওয়ার সময় তার মাথায় ছিল হেলমেট, গায়ে ছিল ভেস্ট।
গুলি হেলমেট ও ভেস্টের ঠিক মাঝখান দিয়ে শিরিনের ঘাড়ে বিদ্ধ হয়। এ সময় শিরিনের সহকর্মীরা এবং পথচারীরা তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করলে গুলি চলতে থাকে। তাই তারা এগিয়ে আসতে পারেননি। নিথর পড়ে ছিল শিরিনের দেহ।
শুরুতে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা এই মৃত্যুর জন্য দায়ী। বিষয়টি প্রমাণে একটি ভিডিও প্রকাশ করে তেল আবিব। যেখানে দেখা যায়, একদল ফিলিস্তিনি গুলি ছুড়তে ছুড়তে একটি সরু গলি পার হচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রভাবশালী মানবাধিকার সংস্থা- বিটস্লেম ওই ভিডিও ধারণের স্থানটি খুঁজে পেয়েছে। তারা বলছে, ওই ভিডিওটি শিরিন হত্যাকাণ্ডের স্থান থেকে ৩০০ মিটার (৯৮৫ ফুট) দূরের একটি স্থান।
শিরিনের কর্মস্থল আল জাজিরার সানাদ নিউজ ভেরিফিকেশন অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিটও বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে। তারাও দাবি করেছেন ভিডিওটি ভুয়া।
প্রপাগান্ডায় কাজ না হওয়ায় আগের অবস্থান থেকে সরে আসে ইসরায়েল সরকার। তারা এই হত্যার তদন্ত করার আশ্বাস দেয়। তবে শেষমেশ আগের রূপেই ফিরেছে ইসরায়েল সরকার। তদন্ত না করার ইঙ্গিত দিয়েছে তেল আবিব। অতীতে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে ফিলিস্তিনি নিহতের ঘটনায় তদন্ত করে নিজ দেশে সমালোচিত হয়েছিল দেশটির সরকার।
শিরিনের শরীর থেকে বের করা বুলেটের অংশ প্রমাণ হিসেবে রেখেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।