পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজনীতিবিদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের জেরে গ্রেপ্তার প্যারোডি গায়ক, ইউটিউবার রোদ্দুর রায়ের ভয়ে ভীত দক্ষিণ কলকাতার স্বঘোষিত ডন বিশ্বজিৎ পোদ্দার ওরফে পাপ্পু সোনা ও তার সঙ্গীরা।
রোদ্দুরের ‘অশ্লীল গানের অত্যাচারে’ কারাগারে একসঙ্গে থাকতে পারছেন না অভিযোগ করে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে আলাদা কক্ষে থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
গত ৭ জুন গোয়া থেকে রোদ্দুর রায়কে গ্রেপ্তার করে কলকাতায় আনা হয়। ওই একই সময়ে দক্ষিণ কলকাতার ত্রাস পাপ্পু সোনাকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ।
লালবাজার সন্ত্রাস দমন শাখায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোদ্দুর রায় এবং পাপ্পু ও তার ছয় সঙ্গীকে একই সঙ্গে বসান গোয়েন্দারা। সেখানে ইউটিউবার রোদ্দুরের কীর্তি শুনে তাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করেন পাপ্পু ও তার সঙ্গীরা। কিন্তু কাজটা যে ঠিক হয়নি, তা বুঝতে পারেন মাঝরাতে।
সন্ধ্যার পর, রোদ্দুর ও পাপ্পুদের লালবাজারের কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। রোদ্দুর ও পাপ্পুদের সেখানে রাখা হয় এক কক্ষে। এরপরই পাপ্পুরা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে তাদের অন্য কক্ষে রাখার অনুরোধ জানান।
দক্ষিণ কলকাতার আলোচিত পাপ্পু ও তার সঙ্গীরা রোদ্দুরকে ভয় পাচ্ছেন কেন- সে প্রশ্নের উত্তরে তারা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, খাওয়া-দাওয়ার পর সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়েন, তখন হঠাৎ মাঝরাতে রোদ্দুর পাপ্পুকে ডাকতে থাকেন। পাপ্পু সোনা চোখ মেলতেই রোদ্দুরের হাসিভরা দাড়ি মুখ।
তারা জানান, এরই মধ্যে রোদ্দুর অন্যদেরও ডেকে তুলতে শুরু করেন। কেউ কেউ তাকে ধমক দিলে রোদ্দুর তাদের বলেন, ‘রাতটা ঘুমাবার সময় নয়। রাত জাগার সময়। রাত মানে গান গাওয়ার সময়। আনন্দ করার সময়।’
এরপর ইউটিউবার রোদ্দুর রায় চিৎকার করে হাততালি দিয়ে ভোররাত পর্যন্ত অশ্লীল ভাষায় খেউড় গান গেয়ে যান। স্বাভাবিকভাবে সারা রাত ঘুমুতে পারেননি পাপ্পু ও তার সঙ্গীরা। তারা গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, প্রথম রাতটা গানের অত্যাচারে ঘুম না হলেও পরের রাতে সেই অশ্লীল গানের সঙ্গে যুক্ত হয় মোক্সা চর্চার আলোচনা ।
সারা রাত বিরামহীন অশ্লীল গান আর মোক্সা নিয়ে রোদ্দুরের ভাষণে অতিষ্ঠ হয়ে পাপ্পু ও তার সঙ্গীরা গোয়েন্দা আধিকারিকদের কাছে তাদেরকে অন্য ঘরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন জানান।
পাপ্পু সোনা ও তার সঙ্গীদের কাছে লালবাজারের কারাগার নতুন কিছু নয়, কিন্তু নতুন এই রোদ্দুরের নাম শুনলে কানে হাত দিয়ে তারা নাকি বলছেন, ‘বাপরে, বাপ!’
সম্প্রতি একটি ফেসবুক লাইভে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অভিযোগ ওঠে রোদ্দুর রায়ের বিরুদ্ধে। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
একটি মামলায় রোদ্দুর রায় জামিন পেলেও অন্য একটি মামলার জন্য তাকে পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা ব্যাঙ্কশাল কোর্ট।
দিল্লির বাসিন্দা রোদ্দুর রায় গত কয়েক বছরে সামাজিকমাধ্যমে জনপ্রিয় চরিত্র হয়ে ওঠেন। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার এই কর্মী গান, কবিতা, আবৃত্তি ও বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক নেতাসহ সমাজব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা করে চলেছেন।