বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছাড়ে সবচেয়ে বেশি রাশিয়ার তেল কিনেছে চীন

  •    
  • ২০ জুন, ২০২২ ১৫:১৬

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকে দ্বিধাতেই ছিল চীন। রাশিয়া নাকি ইউক্রেনের পক্ষে তাদের সমর্থন দেয়া প্রয়োজন- এ নিয়ে বেশ ভাবতে হয়েছে তাদের। ইউক্রেনের পক্ষে থাকার ইঙ্গিত দিলেও আস্তে আস্তে রাশিয়ার প্রতি দেশটির কোমল মনোভাব ফুটে উঠতে থাকে।

ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর রাশিয়ার জ্বালানি খাত বড় ধাক্কার মুখে পড়ার শঙ্কা ছিল, তাদের তেলের ওপর অনেক দেশ থেকে এসেছিল নিষেধাজ্ঞাও। এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে চীন। ছাড়ে পাওয়া উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তেল কিনে নিয়েছে এ দেশ।

সৌদি আরবকে হটিয়ে গত এক বছরে রাশিয়া চীনে সবচেয়ে বেশি তেল রপ্তানি করেছে বলে সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি

গত বছরে রাশিয়ার কাছ থেকে চীনের তেল আমদানি বেড়েছে, সংখ্যার হিসাবে আমদানি দাঁড়িয়েছে ৫৫ শতাংশ। সর্বশেষ মে মাসে চীন রাশিয়ার তেল কেনায় রেকর্ড গড়েছে। এতদিন দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশে বেশি তেল বিক্রিতে শীর্ষে ছিল সৌদি আরব।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকে দ্বিধাতেই ছিল চীন। রাশিয়া নাকি ইউক্রেনের পক্ষে তাদের সমর্থন দেয়া প্রয়োজন- এ নিয়ে বেশ ভাবতে হয়েছে তাদের। ইউক্রেনের পক্ষে থাকার ইঙ্গিত দিলেও আস্তে আস্তে রাশিয়ার প্রতি দেশটির কোমল মনোভাব ফুটে উঠতে থাকে।

পশ্চিমাসহ ইউরোপের অনেক দেশ যখন রাশিয়ার তেল কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়, তখন সেই তেল কেনার ঘোষণা দেয় ভারত ও চীনের মতো কয়েকটি দেশ। চীনের সরকারি তেল আমদানি সংস্থা সাইনোপেসের মতো প্রতিষ্ঠানও তাদের কাছ থেকে তেল নিতে শুরু করে।

চীনা প্রশাসন জানিয়েছে, মে মাসে চীন বন্দর দিয়ে ৮ দশমিক ৪২ মিলিয়ন টন ক্রুড অয়েল আমদানি করেছে রাশিয়া থেকে। একই সময়ে সৌদি থেকে আমদানি হয়েছে ৭ দশমিক ৮২ মিলিয়ন টন।

সোমবার পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত মাসে ইরান থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার ক্রুড অয়েল আমদানি করেছে চীন। রাশিয়া ও সৌদির পর এ দেশ থেকেই সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করেছে তারা।

ফিনল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিচার্স অ্যান্ড এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ) রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে গত সপ্তাহে। ওই প্রতিবেদনে যুদ্ধের প্রথম ১০০ দিনে জ্বালানি বেচে সব মিলিয়ে রাশিয়ার ৯৮ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৮০০ কোটি ডলার আয়ের তথ্য দেয়া হয়। অর্থাৎ যুদ্ধরত অবস্থায় রাশিয়া দিনে প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি রপ্তানি করেছে।

রাশিয়া এই সময়ের মধ্যে জ্বালানি বিক্রি করে যা আয় করেছে, তার একটি বড় অংশ এসেছে ইউক্রেনের বন্ধুপ্রতিম ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো থেকেই। অথচ শঙ্কা ছিল, ইউক্রেন, আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলোর আহ্বানে রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনা বন্ধ রাখবে তারা।

আল জাজিরা বলছে, যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ দেশগুলো ইউক্রেনে নগদ অর্থ ও অস্ত্র পাঠায়। একের পর এক রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞাও এসেছে এ দেশগুলোর পক্ষ থেকে। একপর্যায়ে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। তার সঙ্গে থাকার আশা দেন যুক্তরাষ্ট্র-ইইউয়ের দেশগুলোর নেতারা।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে যে পরিমাণ গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দরকার হয়, ইউক্রেন যুদ্ধের আগে তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পাঠাত রাশিয়া। গ্যাসের ৪০ ভাগ এবং জ্বালানি তেলের ২৭ ভাগ যেত এই দেশ থেকে। তবে যুদ্ধের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা এবং ইউরোপের দেশগুলো আমদানির এই মাত্রা আস্তে আস্তে কমিয়ে তিন ভাগের দুই ভাগে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করে। অবশ্য উল্টো পথেও হাঁটে কেউ কেউ।

সিআরইএর প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধের প্রথম ১০০ দিনে রাশিয়া যে জ্বালানি রপ্তানি করেছে তার ৬১ ভাগই নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। এর জন্য এসব দেশকে ব্যয় করতে হয়েছে ৬০ বিলিয়ন ডলার। তবে সব মিলিয়ে রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানিতে শীর্ষ দেশ চীন। ১৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি কিনেছে দেশটি। এরপর জার্মানি কিনেছে ১২ দশমিক ৭ বিলিয়ন, ইতালি ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন, নেদারল্যান্ড ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন আর ভারত কিনেছে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি।

যুদ্ধের ১০০ দিনে জ্বালানির মধ্যে রাশিয়া সবচেয়ে বেশি অর্থ আয় করে ক্রুড অয়েল থেকে। ৪৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে এই জ্বালানি বিক্রি করেছে তারা। গ্যাস বিক্রি হয়েছে ২৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার, তেল বিক্রি হয়েছে ১৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি বিক্রি করে ৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন এবং কয়লা বিক্রি করে দেশটির আয় হয়েছে ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।

পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থি বিদ্রোহীদের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে গত ফেব্রুয়ারিতে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ২০১৪ সাল থেকে এ অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই শুরু করেন।

এমন প্রেক্ষাপটে বেশ কিছুদিন সীমান্তে সেনা মোতায়েন রেখে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।

বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটির ৮০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। একই সঙ্গে দেশ ছেড়েছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এ যুদ্ধ বন্ধ না হলে বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের খাদ্যসংকট তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

এ বিভাগের আরো খবর