ভারতের সামরিক বাহিনীতে নিয়োগের জন্য সরকারের সদ্য ঘোষিত অগ্নিপথ প্রকল্পের প্রতিবাদকারী যুবকদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে রোববার দিল্লির যন্তর মন্তরে সত্যাগ্রহে বসেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ এবং নেতারা।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা দাবি করেছেন, অগ্নিপথ প্রকল্পটি দেশের যুবকদের জন্য উপকারী নয় এবং জাতীয় নিরাপত্তাকেও এটি বিপন্ন করে তুলবে।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবং দলের নেতা জয় রাম রমেশ, রাজীব শুক্লা, শচীন পাইলট, সালমান খুরশিদ এবং অলকা লাম্বা ‘সত্যাগ্রহে’ অংশ নিয়েছিলেন।
শচীন পাইলট বলেন, ‘প্রকল্পটি অবিলম্বে ফিরিয়ে নেয়া উচিত।’
এ সময় তিনি যুবকদের সহিংস না হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান।
অন্যদিকে, কংগ্রেসের সত্যাগ্রহ স্থল থেকে ৩-৪ কিলোমিটার দূরে একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘আমাদের দেশে ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো কাজ করতে গেলে তাতে রাজনীতির রঙ লেগে যায়। আদালতের দরজা নাড়ার লোকের অভাব নেই। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’
তিনি বলেন, ‘এটা নতুন ভারত। এই ভারত সমস্যার সমাধান করতে পারে।’
মোদির এমন মন্তব্যের পরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তিনি কি তাহলে অগ্নিপথ নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ককেই নিশানা করলেন?
কারণ ইতোমধ্যেই কেন্দ্রের এই প্রকল্প নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়ে গেছে। এমনকি সিএএ বা কৃষি আইন নিয়েও কেন্দ্রকে পিছু হটতে হয়েছে এর আগে।
এদিকে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত যুবকদের হুঁশিয়ার করে প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময়সূচি ঘোষণা করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রতিবাদ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ায়, সামরিক নেতারা হুঁশিয়ার করেছেন, অগ্নিপথ প্রকল্পের জন্য আবেদনকারীদের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে, তারা এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে কোনো অগ্নিসংযোগ বা আন্দোলনে অংশ নেননি।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামরিক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব লেফটেন্যান্ট জেনারেল অনিল পুরি রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভিত্তি হল শৃঙ্খলা। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের কোনো স্থান নেই। অগ্নিপথ প্রকল্পের জন্য আবেদনকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে একটি শংসাপত্র দিতে হবে যে, তারা প্রতিবাদ বা ভাঙচুরে ছিল না। শতভাগ পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং শংসাপত্র ছাড়া কেউ যোগ দিতে পারবে না।’
রোববার নতুন সেনা নিয়োগ প্রকল্প ‘অগ্নিপথ’ সম্পর্কে সন্দেহ দূর করতে এবং সশস্ত্র বাহিনীতে গণপ্রবেশের জন্য কেন দেশটির এই নীতির প্রয়োজন তা ব্যাখ্যা করতে স্থল, বায়ু ও নৌসেনা বাহিনীর পক্ষ থেকে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পুরী বলেন, ‘কীভাবে আমাদের বাহিনীকে তরুণ করা যায় সে বিষয়ে আমরা দীর্ঘ আলোচনা করেছি। আমরা বিদেশি বাহিনী নিয়েও পড়াশোনা করেছি। আমরা তরুণদের চাই। যুবকরা ঝুঁকি গ্রহণকারী। তাদের আবেগ আছে। তাদের মধ্যে জোশ এবং হোশ সমান অনুপাতে।’
এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে অগ্নিপথ প্রকল্পে নিয়োগের সময়সূচি ঘোষণা করা হয়। লেফটেন্যান্ট জেনারেল সি বাঁশি পোনপ্পা বলেছেন, ‘সেনা নিয়োগের জন্য পরীক্ষাগুলো আগস্টের প্রথমার্ধে শুরু হবে এবং অগ্নিবীরদের প্রথম গোষ্ঠী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বাহিনীতে যোগ দেবে। দ্বিতীয় গোষ্ঠী আসবে ফেব্রুয়ারির মধ্যে।’
পোনপ্পা জানান, সেনাবাহিনী ৮৩টি নিয়োগ সমাবেশ করবে এবং দেশের প্রতিটি গ্রাম স্পর্শ করবে। নৌবাহিনীর জন্য, অগ্নিবীরদের প্রথম গোষ্ঠী ২১ নভেম্বরের মধ্যে প্রশিক্ষণের জন্য ওড়িশার আইএনএস চিল্কায় পৌঁছাবে। আর বিমান বাহিনী চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে অগ্নিবীরদের প্রথম ব্যাচকে নথিভুক্ত করবে এবং একই মাসে প্রশিক্ষণ শুরু হবে।
অগ্নিপথ প্রকল্পের অধীনে যে কোনও ভারতীয় যুবক, যার বয়স ১৭.৫ থেকে ২১ বছরের মধ্যে আবেদন করতে পারে৷ তাদের একটি পূর্বনির্ধারিত মেডিক্যাল টেস্টের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। অগ্নিবীর অন্যান্য বায়ুসেনা কর্মীদের দেয়া পদক এবং পুরস্কারের জন্যও যোগ্য হবেন।
এ ছাড়াও তারা বছরে ৩০ দিন সবেতন ছুটি পাবেন। চিকিৎসার পরামর্শ অনুযায়ী, অসুস্থতাজনিত ছুটিও দেয়া হবে। প্রশিক্ষণকালীন সময়ে তারা সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। তবে বিশেষ পরিস্থিতি ব্যতীত প্রশিক্ষণের মাঝামাঝি সময়ে তাদের চাকরি ছাড়তে দেয়া হবে না।
অগ্নিপথ স্কিমের অধীনে, চাকরির প্রথম বছরের জন্য অগ্নিবীররা বেতন হিসাবে ৩০ হাজার রুপি পাবেন। এর মধ্যে ২১ হাজার রুপি সরাসরি প্রার্থীর অ্যাকাউন্টে যাবে এবং ৯ হাজার যাবে অগ্নিবীর কর্পস ফান্ডে। প্রতি বছর বেতন বাড়বে। প্রশিক্ষণের শেষ বছরে অগ্নিবীরের বেতন হবে ৪০ হাজার টাকা।
চার বছর প্রশিক্ষণের পর ৭৫ শতাংশ অগ্নিবীর অবসরে গেলে সেবা তহবিলের আওতায় তাদের দেয়া হবে ১০ লাখ চার হাজার টাকা। যার মধ্যে পাঁচ লাখ দুই হাজার টাকা তাদের নিজেদের অর্জিত।
এ ছাড়া তারা সরকারের কাছ থেকে কোনো ধরনের গ্র্যাচুইটি বা অন্য কোনো তহবিল পাবেন না। তবে, সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন তিনি ৪৮ লাখ টাকার জীবন বীমা পাবেন।