বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নতুন বৈশ্বিক শক্তি প্রদর্শনের মহড়া চীনের

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৭ আগস্ট, ২০২৫ ১২:১৩

চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং আগামী সপ্তাহে চীনে একটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা ফোরামে ২০-এর বেশি বিশ্বনেতাকে একত্র করবেন। এটি হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ‘গ্লোবাল সাউথ’–এর শক্তি প্রদর্শনের একটি বড় মহড়া। একই সঙ্গে তা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার শিকার রাশিয়াকে আরেকটি কূটনৈতিক সাফল্য অর্জনেও সাহায্য করবে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ছাড়াও মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নেতাদের সাংহাই কো–অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সম্মেলনটি উত্তর চীনের বন্দর শহর তিয়ানজিনে ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।

এর মাধ্যমে সাত বছরের বেশি সময় পর চীনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হবে প্রথম সফর। দুই দেশ ২০২০ সালের প্রাণঘাতী সীমান্ত সংঘর্ষের পর উত্তেজনা কমানোর দিকে কাজ করছে।

শেষবার শি চিন পিং ও পুতিনের সঙ্গে মোদির একই মঞ্চে দেখা হয় গত বছরের ব্রিকস সম্মেলনে রাশিয়ার কাজানে। তখন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা নেতারা রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে উপেক্ষা করেছিলেন। নয়াদিল্লিতে রুশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে জানিয়েছিলেন যে মস্কো আশা করছে, শিগগিরই চীন ও ভারতের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা হবে।

‘শি চিন পিং এ সম্মেলনকে ব্যবহার করতে চাইবেন একটি নতুন ও মার্কিন-নেতৃত্বাধীন নয় এমন এক বৈশ্বিক ব্যবস্থার চিত্র হিসেবে। তা ছাড়া, জানুয়ারি থেকে হোয়াইট হাউসের যেসব চেষ্টা চীন, ইরান, রাশিয়া এবং এখন ভারতকে মোকাবিলা করার জন্য করা হয়েছে, সেগুলো কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আনতে পারেনি’, বলেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান দ্য চায়না-গ্লোবাল সাউথ প্রজেক্টের প্রধান সম্পাদক এরিক ওল্যান্ডার।

‘ব্রিকস ট্রাম্পকে কতটা চমকে দিয়েছে, তা দেখুন—এটি করার জন্যই মূলত এ ধরনের জোট করা হয়েছে’, বলেন এরিক ওল্যান্ডার।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা গত সপ্তাহে বলেছেন, এ বছরের এসসিও সম্মেলন ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবচেয়ে বড় হবে। তিনি বলেন, এই ব্লক একটি ‘নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ার গুরুত্বপূর্ণ শক্তি’।

প্রাথমিকভাবে নিরাপত্তাভিত্তিক এ ব্লক ছয়টি ইউরেশীয় দেশের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ১০টি স্থায়ী সদস্য এবং ১৬টি সংলাপ সহযোগী ও পর্যবেক্ষক দেশে সম্প্রসারিত হয়েছে। কার্যপরিধিও নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপ থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক এবং সামরিক সহযোগিতায় বিস্তৃত হয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ সম্মেলনে ‘সম্প্রসারণ’ অনেক দেশের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে তাঁরা একমত যে বছরের পর বছর এই ব্লক সরাসরি ফলপ্রসূ সহযোগিতা দিতে পারেনি। তা ছাড়া, চীন মূলত যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে সাউথ ব্লকের শক্তি প্রদর্শনের দৃশ্যমান অবস্থা দেখতে চায়, বিশেষ করে বর্তমানে যখন বিশ্ব রাজনীতি অস্থিতিশীল।

‘এসসিও ঠিক কোন লক্ষ্য নির্দেশ করে এবং এর বাস্তবায়ন কেমন—তা বেশ অস্পষ্ট। এটি একটি প্ল্যাটফর্ম, যা বড় নেতাদের একত্র করতে পারে এবং তারা নিজেদের অবস্থান ও বার্তা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারেন’, বলছেন বেঙ্গালুরুর গবেষণাপ্রতিষ্ঠান তক্ষশীলা ইনস্টিটিউটের ইন্দো-প্যাসিফিক রিসার্চ প্রোগ্রামের চেয়ারপারসন মনোজ কেওয়ালরামানি। তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সমস্যার সমাধানে এসসিওর কার্যকারিতা খুব সীমিত।’

প্রধান সদস্য দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্ব এখনো রয়েছে। গত জুনে এসসিও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সভায় যৌথ বিবৃতি গৃহীত হয়নি। কারণ, ভারত আপত্তি তুলেছিল যে এতে কাশ্মিরে হিন্দু পর্যটকদের ওপর ২২ এপ্রিলের হামলার উল্লেখ নেই। ওই হামলা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দশকের সবচেয়ে বড় সীমান্ত সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যায়। সভায় ইসরায়েলের ইরান আক্রমণের ঘটনায় এসসিওর নিন্দাতেও যোগ দেয়নি নয়াদিল্লি।

তবে সীমান্তে পাঁচ বছর ধরে চলা উত্তেজনার পর ভারত ও চীন সম্প্রতি কিছুটা নমনীয় হয়েছে। এর সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্ক চাপের প্রেক্ষাপটে, সম্মেলনের ফাঁকে সি ও মোদির মধ্যে ইতিবাচক বৈঠকের আশা তৈরি হয়েছে।

এরিক ওল্যান্ডার বলেন, ‘ভারত সম্ভবত তার অহংকার চেপে রেখে ও এবারের এসসিও-সংক্রান্ত সমস্যাগুলো ভুলে গিয়ে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে এগোবে। এখন মোদির জন্য এটাই বড় অগ্রাধিকার।’

বিশ্লেষকেরা আশা করছেন, চীন–ভারত উভয় পক্ষ সীমান্তে আরও কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করতে পারে। যেমন, সৈন্য প্রত্যাহার, বাণিজ্য ও ভিসা সীমাবদ্ধতা শিথিল, জলবায়ুর মতো নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং সরকারি পর্যায়ে ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন।

যদিও ওই সম্মেলন থেকে বড় কোনো নীতির ঘোষণা আসার কথা নয়, তবু বিশেষজ্ঞরা বলছেন—দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য এ জোটকে হালকাভাবে নেওয়া ঠিক হবে না। ওল্যান্ডারের মতে, এই সম্মেলনের আসল গুরুত্ব হলো—এর দৃশ্যমানতা (বিশ্বমঞ্চে নিজেদের উপস্থিতি ও শক্তির প্রদর্শন)। এটি প্রকৃতপক্ষেই গুরুত্বপূর্ণ।

সম্মেলনের পর চীন থেকে মোদির দেশে ফেরার আশা করা হচ্ছে। আর পুতিন বেইজিংয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সামরিক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য অবস্থান করবেন। রাশিয়ার বাইরে এটি হবে তার জন্য সচরাচর দৃশ্যমান নয়—এমন দীর্ঘ সময় কাটানো।

সূত্র: রয়টার্স

এ বিভাগের আরো খবর