মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির জেরে ভারতের সঙ্গে আরব বিশ্বের টানাপড়েনের মধ্যেই দিল্লির সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেছে কুয়েত সিটি। জয়পুরভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান দেশটিতে দেশি গোবর রপ্তানি করছে।
ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোয় বলা হয়, কুয়েতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান লামোর ১৯২ টন গোবর আমদানির অর্ডার দিয়েছে। ভারতের জৈব কৃষক প্রযোজক সমিতির জাতীয় সভাপতি অতুল গুপ্ত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘জয়পুরের সানরাইজ এগ্রিল্যান্ড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ প্রাইভেট লিমিটেড এ আদেশ পেয়েছে।’
ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা মহানবীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করার পর কুয়েতসহ অন্তত ১৫ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিল। কুয়েতবাসীও ভারতীয় পণ্য বয়কটের দাবি জানায়। কিছু সুপার মার্কেটের তাক থেকে সরিয়ে দেয়া হয় ভারতীয় পণ্য।
বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভের পর নূপুর শর্মাকে বরখাস্ত করেছে বিজেপি। আর এমন প্রেক্ষাপটেই এলো কুয়েতে গোরব রপ্তানির খবর।
- আরও পড়ুন: ইসলামোফোবিয়া প্রভাব ফেলছে ভারতের কূটনীতিতে
- আরও পড়ুন: মহানবীকে কটূক্তি: কুয়েতে বিক্ষোভ করে বিপাকে প্রবাসীরা
- আরও পড়ুন: কে এই নূপুর শর্মা
সানরাইজ এগ্রিল্যান্ড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক প্রশান্ত চতুর্বেদী বলেন, ‘সম্ভবত এই প্রথম ভারত থেকে দেশি গরুর গোবর আমদানি করছে কুয়েত। জয়পুরের টঙ্ক রোডের শ্রীপিঞ্জরাপোল গোশালায় অবস্থিত সানরাইজ অর্গানিক পার্কে শুল্ক দপ্তরের তত্ত্বাবধানে কনটেইনারে গোবর প্যাক করার কাজ চলছে।
‘প্রথম চালানটি ১৫ জুন কনাকাপুরা রেলওয়ে স্টেশন থেকে পাঠানো হয়েছে।’
অতুল গুপ্ত বলেন, ‘২০২০-২১ অর্থবছরে ভারত থেকে পশু পণ্যের রপ্তানি হয়েছিল ২৭ কোটি ১ লাখ ৫৫ হাজার রুপির। প্রতিনিয়ত বাড়ছে জৈব সারের চাহিদা। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি কেবল ফসলের উৎপাদন বাড়ায় না, এর থেকে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার করলে মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।’
দেশি গোবরে বাড়ছে আগ্রহ
জৈব সারের উপকারিতার কারণে দিনে দিনে বাড়ছে চাহিদা। ভারত থেকে জৈব সারসহ দেশি গোবর আমদানি শুরু করেছে অনেক দেশ।
অতুল গুপ্ত বলেন, ‘কুয়েতের কৃষিবিজ্ঞানীরা ব্যাপক গবেষণার পর খেজুর ফসলে গুঁড়া আকারে দেশি গোবর ব্যবহারের উপকারিতা খুঁজে পেয়েছেন। এটির ব্যবহারে ফলের আকার বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদনও আশানুরূপ বেড়েছে।
জৈব চাষে কুয়েতের বাজি
জলবায়ু ও পানির সংকটে কুয়েতের কৃষিকাজ প্রায় অসম্ভব। উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) অন্যান্য দেশের মতো তাই কুয়েতকেও খাদ্য চাহিদা মেটাতে আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করতে হয়।
তবে বাস্তবতা বুঝতে পেরেছে কুয়েত সরকার। আগে যেখানে কুয়েতে কৃষিকাজকে শখের কাজ হিসেবে দেখা হতো, সেই কুয়েত গত কয়েক বছরে বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে দেখছে।
কৃষিবিষয়ক এবং মৎস্য সম্পদের জন্য পাবলিক অথরিটির জৈব কৃষি বিভাগের ব্যবস্থাপক আব্দুল রহমান আল-ফ্রাইহ বলেন, ‘দেশের আবহাওয়ায় চাষাবাদের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে কৌশল শেখা হচ্ছে।’