ভারতের ১৬তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে ১৫ জুন। ১৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নির্বাচন। ২১ জুলাই ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের মেয়াদ ২৪ জুলাই শেষ হতে যাচ্ছে।
ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করেন না, তবে সমস্ত নির্বাহী সিদ্ধান্ত তার নামেই পরিচালিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি সরকারকে পদক্ষেপ পুনর্বিবেচনা করতে এবং পরামর্শ দিতে বলতে পারেন।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটার ৪ হাজার ৮০৯ জন, যার মধ্যে ৭৭৬ জন সংসদ সদস্য এবং ৪ হাজার ৩৩ জন রাজ্য বিধানসভার সদস্য।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে ২২টি বিরোধী দলকে এক বৈঠকে ডেকেছিলেন আলোচনা করতে, যাতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধীরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে একজন প্রার্থী দিতে পারে কি না।
সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিরোধীরা একজন প্রার্থীই দাঁড় করাবে।
মমতার আহ্বানে অনুষ্ঠিত হওয়া এই বৈঠকে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি, ওয়াই এস আর কংগ্রেস পার্টি, বিজু জনতা দল, আম আদমি পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টি অংশ নেয়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর বড় একটি অংশ বিজেপিকেই সমর্থন করবে।
বিজেপি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাদের প্রার্থী ঠিক করতে দলের সভাপতি জেপি নাড্ডা, কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংকে এনডিএ ও ইউপিএসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি স্বতন্ত্র সদস্যের সঙ্গে পরামর্শ করার দায়িত্ব দিয়েছে।
দায়িত্ব পেয়েই জেপি নাড্ডা, রাজনাথ সিং-রা ময়দানে নেমে পড়েছেন। রাজনাথ সিং বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে কথা বলছেন একটি ঐকমত্যে প্রার্থী দেয়া যায় কি না তা নিয়ে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কোনো ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। কারণ বিগত ৮ বছর দেশের সরকার ও সরকারি দল যেভাবে শাসনক্ষমতা পরিচালনা করছে, তাতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এমনটা নয়।
অন্যদিকে বিরোধী ১৭ দলের বৈঠকে শারদ পাওয়ার, মল্লিকার্জুন খাড়গে ও মমতা ব্যানার্জিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থী ঠিক করতে।
বিরোধী দলগুলোর বৈঠকে শারদ পাওয়ার রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হতে রাজি না হওয়ায় মমতা ব্যানার্জি পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল এবং মহাত্মা গান্ধীর নাতি, গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর নাম প্রস্তাব করেছেন।
অন্যদিকে, এনডিএ শিবিরে ঘোরাফেরা করছে যেসব নাম তার মধ্যে আছে কেরলের রাজ্যপাল মোহাম্মদ আরিফ খান, ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন রাজ্যপাল এবং ওড়িশার আদিবাসী নেতা দ্রৌপদী মুর্মু, ছত্তিশগড়ের রাজ্যপাল এবং উপজাতি নেতা অনুসুইয়া উইকে, তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল তামিলসাই সুন্দররাজন,কর্ণাটকের গভর্নর এবং দলিত নেতা থাবর চাঁদ গেহলট, লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সুমিত্রা মহাজন এবং ওড়িশার আদিবাসী নেতা জুয়াল ওঁরাও।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবার রাষ্ট্রপতি বা উপরাষ্ট্রপতি পদের কোনো একটি নির্দিষ্ট করা আছে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য। এর কারণ দুটি, একদিকে ২০২৪-এ মুসলিম ভোটে থাবা বসানো, আর অন্যদিকে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রশ্নে বিগড়ে যাওয়া ছবিটাকে কিছুটা মেরামত করা।
এরই মধ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার প্রথম দিনেই ১১ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনের কাগজপত্র যথাযথ নথির অভাবে বাতিল করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সংসদীয় সূত্র জানিয়েছে যে বিহারের সারণ থেকে লালু প্রসাদ যাদব নামে এক ব্যক্তি তাদের কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। তবে ইনি বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব নন।