বড় কোনো দুর্ঘটনায় শরীরের কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্লাস্টিক সার্জারির প্রয়োজন হয়। শরীরের চামড়া কেটে বা কৃত্রিম চামড়া দিয়ে তা করা হয়। তবে শরীরের চামড়া কাটার ধকল অনেক সময় রোগী নিতে পারে না। কৃত্রিম চামড়ার ক্ষেত্রে আবার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই সমস্যা সমাধানে যুগান্তকারী সাফল্য পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের একদল চিকিৎসক ও গবেষক। ছাগলের কান দিয়ে মানুষের কান এবং নাকের প্লাস্টিক সার্জারি করে সাফল্য পেয়েছেন তারা।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল চিকিৎসক গবেষক এই সার্জারি করেছেন।
২০ জন কম খরচের এই অস্ত্রোপচারে সুফল পেয়েছেন বলে দুই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক রেডিওলজিস্ট চিকিৎসক শমিত কুমার নন্দী বলেন, ‘ছাগলের কান সাধারণত ফেলে দেয়া হয়। ছাগলের কানের কার্টিলেজ বা তরুণাস্থি বের করে কোষগুলো মেরে ফেলে বিশেষ রাসায়নিক পদ্ধতিতে শোধন করা হয়। তৈরি হয় নতুন ভিন্ন ধর্মের কার্টিলেজ। নতুন এই কার্টিলেজগুলো অন্য প্রাণীর দেহে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে কিনা তা দেখার জন্য খরগোশের ওপর প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু কোনো বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।’
এরপর আরজি কর হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান রূপায়ণ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ২০ জনের অস্ত্রোপচার করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান সিদ্ধার্থ জোয়ারদার বলেন, ‘বহু ক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মানুষের নাক, কান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ছাগলের কানের তরুণাস্থি দিয়ে কয়েক জনের প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়েছে। তিন বছর ধরে দেখা গেছে, সবাই সুস্থ।’
চিকিৎসক শমিত নন্দী বলেন, ‘কৃত্রিম প্রতিস্থাপনে দাম বেশি। এটার দাম কম। ফেলে দেয়া জিনিস দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে।’
ভবিষ্যতে এই বায়োলজিক্যাল ইমপ্ল্যান্টের প্রবণতা আরও বাড়বে বলে আশাবাদী চিকিত্সকরা।
ছাগলের কানের কার্টিলেজের সফল প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ পদ্ধতির জন্য ভারত সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব বায়োটেকনোলজির পক্ষ থেকে এই দুই প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক ও গবেষকদের স্বত্ব দেয়া হয়েছে।