রাশিয়ার পরাক্রমশালী সম্রাট ‘পিটার দ্য গ্রেট’ এর প্রশংসা প্রায়ই করেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন; তবে এবার নিজেকে তার মতোই ভাবছেন তিনি।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রুশ সাম্রাজ্যের জার পিটারের ৩৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
ইউক্রেনে হামলা চালানোর সাফাই গেয়ে পুতিন দাবি করেন, ১৮ শতকের শুরুর দিকে পিটার দ্য গ্রেট যেমন করেছিলেন, একইভাবে তিনিও রাশিয়ার আদি ভূখণ্ডই ফিরিয়ে আনছেন।
প্রদর্শনীতে আসা তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তোমাদের কেউ কেউ ভাবতে পারো, পিটার দ্য সুইডেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের ভূমি ছিনিয়ে আনেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি কিছু ছিনিয়ে আনেননি, বরং রাশিয়ার ভূমিই তিনি ফিরিয়ে এনেছেন।’
ইউক্রেনে তার চালানো হামলার সঙ্গে পিটার দ্য গ্রেটের অভিযানের তুলনা করেন পুতিন। বলেন, ‘রাশিয়ার অনেক কিছু ফিরিয়ে আনা এবং দেশকে শক্তিশালী করার দায়িত্ব রয়েছে। মৌলিক মূল্যবোধ অনুযায়ী এগোলে আমরা সব সমস্যা নিশ্চিতভাবেই সমাধান করতে পারব।’
পুতিন বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব এগুলো পুনরুদ্ধার ও রক্ষা করা।’
১৮ শতকে সুইডেনের বিপক্ষে ইতিহাস খ্যাত যুদ্ধ ‘দ্য গ্রেট নর্দান ওয়ার’ জয়ী হয়ে বাল্টিক সাগর অঞ্চলে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পিটার। পুতিনও বাল্টিক সাগর অঞ্চলে রাশিয়ার হারানো সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারের ঘোষণা দেন।
পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থি বিদ্রোহীদের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে গত ফেব্রুয়ারিতে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। ২০১৪ সাল থেকে এ অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই শুরু করেন।
বেশ কিছুদিন সীমান্তে সেনা মোতায়েন রেখে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর এখন পর্যন্ত দেশটির ৮০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। একই সঙ্গে দেশ ছেড়েছেন প্রায় ৫০ লাখ মানুষ।
যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এ যুদ্ধ বন্ধ না হলে বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের খাদ্যসংকট তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।