সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ দেশের মানুষের নজর ঘোরাতে বিজেপি পরিকল্পনা করে ঘৃণা ছড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার রাজ্যের সদর দপ্তর নবান্নে সংবাদ সম্মেলনে মমতা এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘এটা আসলে একটা প্ল্যান। দেশের অর্থনীতি তলানিতে। মূল্যবৃদ্ধিতে নাজেহাল গোটা দেশ। এসব থেকে নজর ঘোরাতে, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করে দেশটাকে ভাঙতে চাইছে বিজেপি সরকার।’
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেত্রীর অবমাননা করার অভিযোগ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘যারা এসব করছে তাদের গ্রেপ্তার করা হোক। এদের জন্য দেশের বদনাম হয়েছে। বিজেপি দেশটাকে শেষ করার চেষ্টা করছে। বাংলায় যদি এসব বলত, সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হতো।’
বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার মন্তব্যের জন্য যারা পশ্চিমবঙ্গে রাস্তা অবরোধ করছেন, তাদের রাস্তা অবরোধ না করে শান্তিপূর্ণ মিছিল করার পরামর্শ দেন মমতা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পদত্যাগ দাবির পাশাপাশি রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লেখারও কথা বলেন তিনি। একই সঙ্গে বিজেপিকে কোণঠাসা করতে তিনি দেশজুড়ে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোয় আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
বিজেপি নেত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদে টুইটারেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘আমি বিজেপির কিছু সর্বনাশা, দায়িত্বজ্ঞানহীন নেতানেত্রীর সাম্প্রতিক জঘন্য প্ররোচনামূলক, বিভেদমূলক, ঘৃণাসর্বস্ব মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করছি। এমন মন্তব্য ও আচরণের ফলে শুধু হিংসা ছড়ায় না, দেশের মানুষের মন বিভক্ত হয়। দেশের শান্তি ও সংহতি নষ্ট হয়। এই ঘৃণ্য প্ররোচনা সত্ত্বেও আমি সব জাতি-ধর্ম-সম্প্রদায়ের ভাইবোনদের কাছে সাধারণ মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানাচ্ছি।’
জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে ভারতের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে নূপুর মহানবীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন।
ইসলাম সম্পর্কেও তার কিছু মন্তব্যের জেরে দেশটিতে মুসলিম সমাজে ক্ষোভ দানা বাঁধছিল। নূপুরের বক্তব্যের প্রতিবাদে গত শুক্রবার কানপুরে বনধ পালনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন রাজ্যে এরই মধ্যে নূপুরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
শুধু নূপুরই নন, মহানবীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন বিজেপি নেতা নবীন কুমার জিন্দালও।
এ ইস্যুতে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করায় বিজেপির পক্ষ থেকে রোববার নূপুর ও নবীনকে ছয় বছরের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে।
মহানবীকে নিয়ে বিজেপির দুই নেতার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে দলটি। অন্তত ১৫টি দেশ এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। ব্যাপক প্রতিক্রিয়া এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। এসব দেশে ভারতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম এবং পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, সেসব দেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ঘোষণাও দিয়েছে মুসলমানরা।
এ ঘটনার পর দলের নেতা ও মুখপাত্রদের টিভি বিতর্কে অংশ নেয়ার ব্যাপারে নতুন নিয়ম করেছে বিজেপি। এখন থেকে কেবল দলটির অনুমোদিত মুখপাত্র এবং প্যানেলিস্টরা টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নিতে পারবেন। টিভি বিতর্কে অংশ নিতে মুখপাত্র এবং প্যানেলিস্ট নির্ধারণ করে দেবে দলটির মিডিয়া সেল।