ইউক্রেনে হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম পাঠানোর খবরে যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র সমালোচনা করেছে রাশিয়া। মস্কো বলছে, ওয়াশিংটনের এ পদক্ষেপ হবে ‘আগুনে ঘি ঢালার সামিল।’
হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, এম১৪২ হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম- এইচআইএমএআরএস যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেনে পাঠনো হবে।
মাঝারি-পাল্লার রকেট সিস্টেমগুলো দীর্ঘদিন ধরে কিয়েভের চাহিদার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পূর্বাঞ্চলে কোনঠাসা ইউক্রেনীয় সেনারা এ ধরনের অস্ত্র ছাড়া প্রতিরোধের বিকল্প দেখছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, সিস্টেমগুলো ইউক্রেনের জন্য একটি নতুন ৭০০ মিলিয়ন ডলারের নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজের অংশ হবে। এগুলোর মধ্যে আছে হেলিকপ্টার, জ্যাভলিন অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক অস্ত্র সিস্টেম, কৌশলগত যানবাহন এবং খুচরা যন্ত্রাংশ।
নিউইয়র্ক টাইমসে এক কলামে মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লেখেন, ‘ইউক্রেনীয়দের আরও উন্নত রকেট সিস্টেম এবং যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করবে ওয়াশিংটন। এগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে মূল লক্ষ্যবস্তুতে আরও সুনির্দিষ্টভাবে আঘাত হানতে সক্ষম করবে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে। তবে তিনি সিস্টেমের নাম উল্লেখ করেননি।’
তিনি বলেছিলেন, “অস্ত্রগুলো ইউক্রেনকে ‘যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করতে এবং আলোচনার টেবিলে সম্ভাব্য শক্তিশালী অবস্থানে থাকতে’ সহায়তা করার জন্য।”
ইউক্রেনে নতুন সামরিক প্যাকেজ স্থানীয় সময় বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়ান আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার একাদশ চালান হতে যাচ্ছে এটি।
সব মিলিয়ে ইউক্রেন আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যার মধ্যে হাউইটজারগুলো এপ্রিলে অনুমোদন পায়।
যুক্তরাষ্ট্র নতুন সিস্টেম কি দিচ্ছে?
এইচআইএমএআরএস হলো উচ্চ-প্রযুক্তির হালকা রকেট লঞ্চার। এটি যুদ্ধক্ষেত্রে দারুণ কার্যকর। প্রতিটি ইউনিট ৬টি জিপিএস গাইডেড রকেট বহন করতে পারে। এগুলো মাত্র একজন ক্রু এক মিনিটের মধ্যে পুনরায় লোড করতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীর ব্যবহার করা অন্যান্য রকেট সিস্টেমের তুলনায় সিস্টেমটি অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। ওয়াশিংটনের এই সিস্টেমের পাল্লা প্রায় ৮০কিমি (৫০ মাইল), যা মে মাসে ইউক্রেনে পাঠানো এম৭৭৭ হাউইৎজারের রেঞ্জের প্রায় দ্বিগুণ।
তবে ইউক্রেনে ঠিক কতগুলো সিস্টেম পাঠাবে তা স্পষ্ট করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
কেন এই সিস্টেম তাৎপর্যপূর্ণ?
পূর্বাঞ্চলে রুশ অগ্রযাত্রা ঠেকাতে দীর্ঘদিন ধরেই দূর-পাল্লার আর্টিলারি সিস্টেম পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আকুতি জানিয়ে আসছিল ইউক্রেন সরকার।
রাশিয়ান বাহিনী কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর সেভেরোডোনেটস্ক দখলের কাছাকাছি চলে আসায় গত শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা এবং মধ্যস্ততাকারী মাইখাইলো পোডোলিয়াক ফের এই আহ্বান জানান।
পোডোলিয়াক টুইটে বলেছিলেন, ‘৭০ কি.মি দূরে থেকে যখন আপনি আক্রমণ করেন, তখন লড়াই করা কঠিন। ইউক্রেন রুশ বাহিনীকে পরাস্ত করতে পারবে। তবে এর জন্য প্রয়োজন কার্যকর অস্ত্র।’
বলা হচ্ছে, এইচআইএমএআরএস ইউক্রেনের বাহিনীকে জোর হামলার ক্ষমতা দেবে। তারা আরও সুরক্ষিত দূরত্ব থেকে আক্রমণ চালাতে সক্ষম হবে।
রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের গবেষণা বিশ্লেষক স্যামুয়েল ক্র্যানি-ইভান্স বলেন, ‘ অস্ত্র আপগ্রেড করা হলে রাশিয়ার ব্যবহৃত সিস্টেমগুলো বিশেষ করে বিএম-৩০ সিমার্চকে ধ্বংস করা সহজ হবে, যেগুলো ইউক্রেনীয় সেনাদের অবস্থান থেকে ৯০-১২০ কি.মি দূরে অবস্থান করছে। এইচআইএমএআরএস-এর সহায়তায় ইউক্রেন এই সিস্টেমগুলোতে পৌঁছাতে পারবে।’
কেন যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে?
যুদ্ধ যেন ইউক্রেনের বাইরে ছড়িয়ে যেতে না পারে সে বিষয়ে ভীষণ সতর্ক যুক্তরাষ্ট্র। তাই তারা এমন অস্ত্র সরবরাহ করতে চাইছে না যা ওয়াশিংটন- মস্কোকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে।
যদিও এইচআইএমএআরএস-এর সহায়তায় সীমান্তের কাছাকাছি থেকে রাশিয়া সহজেই হামলা চালানো যাবে।
আমেরিকান এক কর্মকর্তা মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ইউক্রেনীয়রা আশ্বাস দিয়েছে তারা রাশিয়ার ভূখণ্ডের বিরুদ্ধে এই সিস্টেমগুলো ব্যবহার করবে না।’
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা ইউক্রেনকে এমন আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম সরবরাহ করবে না, যার রেঞ্জ ৩০০ কিলোমিটার (১৮৬ মাইল)।