বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইউক্রেনের ভূখণ্ড রাশিয়াকে ছেড়ে দেয়া উচিত: কিসিঞ্জার

  •    
  • ২৬ মে, ২০২২ ০২:০৭

ডেইলি টেলিগ্রাফকে কিসিঞ্জার বলেছেন, ‘দুই মাসের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু করতে হবে। এই অস্থিরতা ও উত্তেজনা সহজে কাটিয়ে ওঠা যাবে না। আগের অবস্থায় সবাইকে ফিরে যেতে হবে। ফিরে আসা উচিত। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া মানে ইউক্রেনের স্বাধীনতা নয়, বরং রাশিয়ার বিরুদ্ধেই একটি নতুন যুদ্ধ।’

রাশিয়ার দাবি করা ইউক্রেনের ভূখণ্ড পুতিনের কাছে হস্তান্তর করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সেক্রেটারি অফ স্টেট হেনরি এ কিসিঞ্জার।

সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের উচিত আগ্রাসন শেষ করতে রাশিয়াকে ভূখণ্ড অর্পণ করে দেয়া।’

ইউক্রেনে কিসিঞ্জার রাশিয়ার জন্য বিব্রতকর পরাজয় না চাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সতর্ক করেছেন এই পদক্ষেপ ইউরোপে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতায় আঘাত হানতে পারে।

ইউরোপের ওপর রাশিয়ার প্রভাবকে অগ্রাহ্য না করার বিষয়ে সতর্ক করেছেন কিসিঞ্জার। মস্কোর সঙ্গে বিবাদে না জড়ানোর আহ্বান জানান বিজ্ঞ এ কূটনীতিক। আগের পররাষ্ট্রনীতিতে ফিরে যেতে কিয়েভ শাসকদের পরামর্শ দেন তিনি।

ডেইলি টেলিগ্রাফকে কিসিঞ্জার বলেছেন, ‘দুই মাসের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু করতে হবে। এই অস্থিরতা ও উত্তেজনা সহজে কাটিয়ে ওঠা যাবে না। আগের অবস্থায় সবাইকে ফিরে যেতে হবে। ফিরে আসা উচিত। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া মানে ইউক্রেনের স্বাধীনতা নয়, বরং রাশিয়ার বিরুদ্ধেই একটি নতুন যুদ্ধ।’

প্রেসিডেন্ট রিচার্ড এম নিক্সন এবং জেরাল্ড ফোর্ডের আমলে সেক্রেটারি অব স্টেটের দায়িত্বে থাকা কিসিঞ্জার বলেছেন, ক্রিমিয়া এবং পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে রাশিয়া। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি জোর গলায় বলেছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় আসার মূল শর্ত থাকবে পূর্ববর্তী সীমানা পুনরুদ্ধার করা

কিসিঞ্জারের মন্তব্য এমন সময়ে এসেছে যখন বিশ্ব নেতারা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ‘ পুরো আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে’। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন ডাভোসে বিশ্বনেতাদের বলেছেন, যুদ্ধ শুধুই ‘ইউক্রেনের বেঁচে থাকার বিষয়’ বা ‘ইউরোপীয় নিরাপত্তার সমস্যা’ নয় বরং ‘বিশ্ব সম্প্রদায়ের হুমকি’।

শান্তির বিনিময়ে জমি না দেয়ার বিষয়ে ইউক্রেনের বেশির ভাগ জনগণ তাদের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে একমত। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সোসিওলজি চলতি মাসে একটি জরিপ চালিয়ে দেখেছে, ৮২ শতাংশ ইউক্রেনীয় জমি ছাড়তে রাজি নন। যুদ্ধ চললেও না। গত দুই মাসে পরিচালিত আরেকটি জরিপ বলছে, কেবল ১০ শতাংশ ইউক্রেনীয় জিম্মির বিনিময়ে যুদ্ধ বন্ধ চান। ৮ শতাংশ সিদ্ধান্তহীনতায় ছিল।

এসব জরিপে তাদের নেয়া হয়নি, যারা গত ২৪ ফেব্রুয়ারির (যুদ্ধ শুরুর দিন) আগে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল যেমন: ক্রিমিয়া, সেভাস্তোপল, দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলের বাসিন্দা।

কিসিঞ্জারের মন্তব্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় বোর্ডের সাম্প্রতিক সম্পাদকীয় অনুসরণ করে যুক্তি দিয়েছিল যে, শান্তি অর্জনের জন্য ইউক্রেনকে ‘বেদনাদায়ক আঞ্চলিক সিদ্ধান্ত’ নিতে হবে।

টাইমস সম্পাদকীয় পর্ষদ লিখেছে, শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনীয়দেরই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে: তারাই রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, মারা যাচ্ছে। বাড়ি-ঘর হারাচ্ছে। কীভাবে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে সে সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে।

পর্ষদ আরও লিখেছে, যদি সংঘর্ষটি সত্যিকারের আলোচনার দিকে যায়, তবে সেই ইউক্রেনের নেতাদেরই নিতে হবে। সমঝোতার যেকোনো ‘বেদনাদায়ক’ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে।

সম্পাদকীয়টি কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির উপদেষ্টা মাইখাইলো পোডোলিয়াক বলেছেন, ‘রাশিয়াকে কোনো ছাড় দেয়ায় শান্তি আসবে না, কেবল কয়েক বছরের জন্য যুদ্ধ বন্ধ হবে।’

Today, any concession to Russia is not a path to peace, but a war postponed for several years. Ukraine trades neither its sovereignty, nor territories and Ukrainians living on them. It's a pity that we have to explain such simple things to such reputable media as @nytimes. pic.twitter.com/NJdLm7fWOV

— Михайло Подоляк (@Podolyak_M) May 21, 2022

প্রবীণ রাজনীতিক ও কূটনীতিক কিসিঞ্জার তার মন্তব্যে বলেন, কোনো জাতি তাদের বাস্তব লক্ষ্যগুলোর চেয়ে নৈতিকতা এবং নীতিকে গুরুত্ব দেয়। ইউরোপীয় নেতাদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান, ইউরোপে রাশিয়ার অবস্থান যেন না হারায়। সেই সঙ্গে চীনের সঙ্গে স্থায়ী জোট গঠনের ঝুঁকি যেন কেউ না নেয়।

‘আশা করি, ইউক্রেনীয়রা যে বীরত্ব দেখিয়েছে, তা তারা প্রজ্ঞার সঙ্গে দেখাবে।’

সমালোচকরা কিসিঞ্জারের মন্তব্যকে অবশ্য ‘দুর্ভাগ্যজনক হস্তক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করেছেন। ইউক্রেনের পার্লামেন্টের সদস্য ইন্না সোভসুন কিসিঞ্জারের অবস্থানকে ‘সত্যিই লজ্জাজনক’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন।

টুইটে তিনি লেখেন, ‘এটি দুঃখের বিষয় যে আমেরিকার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্বাস করেন যে সার্বভৌম ভূখণ্ডের অংশ ছেড়ে দেয়া যেকোনো দেশের শান্তি স্থাপনের উপায়!'

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলনস্কির উপদেষ্টা মিইখাইলো পোডোলিয়াক বলেছেন, সার্বভৌমত্বের জন্য কারও মানিব্যাগ ভর্তি করার ব্যবসা তারা করে না।

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে কিসিঞ্জারের করমর্দনের একটি পুরনো ছবি দিয়ে টুইটে পোডোলিয়াক লেখেন, তিনি কৃতজ্ঞ যে যুদ্ধে জড়িত ইউক্রেনীয়রা কূটনীতিকের পরামর্শ শোনেনি।

As easily as Mr. #Kissinger proposes to give 🇷🇺 part of 🇺🇦 to stop the war, he would allow to take Poland or Lithuania away. It's good that Ukrainians in the trenches do not have time for listening to “Davos panickers". They’re a little bit busy defending Freedom and Democracy. pic.twitter.com/2zraPDummx

— Михайло Подоляк (@Podolyak_M) May 24, 2022

‘মি. কিসিঞ্জার যত সহজে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য রাশিয়াকে ইউক্রেনের অংশ দেয়ার প্রস্তাব করেছেন, তিনি কি পোল্যান্ড বা লিথুয়ানিয়ার ক্ষেত্রেও তা-ই বলবেন? এটা ভালো যে ট্রেঞ্চে থাকা ইউক্রেনীয়রা স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় একটু ব্যস্ত।’

এ বিভাগের আরো খবর