জাতিসংঘের পরমাণু প্রকল্প পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ)-এর সঙ্গে স্বাক্ষরিত সহযোগিতা চুক্তি স্থগিত করেছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাঘচি রোববার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।আরাঘচি বলেন, ‘আমরা আইএইএ-এর সঙ্গে পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি স্থগিত করেছি। জাতিসংঘ যদি এমন কোনো প্রস্তাব দেয়, যা ইরানের অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সহায়ক হয়— আমরা আবার চুক্তিতে ফিরে যাব।’ইরান ১৯৬৮ সালে আইএইএ’র সঙ্গে নন-প্রোলিফারেশন অ্যাক্ট (এনপিটি) চুক্তি করে। তখন ইরানের রাজা রেজা পাহলভী দেশটির রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান ছিলেন। এই চুক্তির মাধ্যমে ইরান প্রতিশ্রুতি দেয় যে তারা কখনও পরমাণু অস্ত্র তৈরি করবে না এবং আইএইএ’র সঙ্গে সহযোগিতা করবে।গত জুনে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতের পর আইএইএ’র সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে। ৬ জুন আইএইএ এক বিবৃতিতে জানায়, ইরানের কাছে বর্তমানে ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম মজুত আছে, যার বিশুদ্ধতা ৬০ শতাংশ। বিশুদ্ধতার মান ৯০ শতাংশে উন্নীত করা গেলে তা দিয়ে পরমাণু অস্ত্র তৈরি সম্ভব।আইএইএ’র ওই বিবৃতির এক সপ্তাহ পর ১২ জুন রাতে ইসরায়েল ইরানে বিমান অভিযান ‘দ্য রাইজিং লায়ন’ শুরু করে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই এ অভিযান চালানো হয়েছে।
১২ দিনব্যাপী সংঘাতে ইরানের সেনাপ্রধান, সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও অন্তত ১২ জন জ্যেষ্ঠ পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোরও। তবে এখনো সেই ৪০০ কেজি ইউরেনিয়ামের কোনো হদিস মেলেনি বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।
সংঘাত শেষে আইএইএ তেহরান সফরের আগ্রহ জানালেও ইরান জানায়, সংলাপের জন্য তারা প্রস্তুত, তবে পরমাণু স্থাপনা দেখানোর বাধ্যবাধকতা তাদের নেই।
এরপর সেপ্টেম্বরে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আব্বাস আরাঘচি। কিন্তু জাতিসংঘের প্রস্তাব মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় সেই বৈঠক ব্যর্থ হয়। পরে জাতিসংঘ ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
রোববারের সাক্ষাৎকারে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে ফের আলোচনায় বসা হবে কি না— জানতে চাইলে আরাঘচি বলেন, ‘আমরা তার প্রয়োজন দেখছি না। ইউরোপের সঙ্গে বৈঠকের আর কোনো ভিত্তি নেই।’