সাউথ ক্যালিফোর্নিয়ার একটি গির্জায় একাধিক গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত একজন নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন। নিউ ইয়র্ক রাজ্যের বাফেলো শহরের একটি সুপারশপে একজন শ্বেতাঙ্গ বন্দুকধারীর হামলায় ১০ জন নিহত হওয়ার ঘটনার এক দিন পরই ক্যালিফোর্নিয়ায় গোলাগুলিতে নিহতের ঘটনা ঘটল।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বিভাগের টুইটার বার্তায় বলা হয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলসের প্রায় ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে লেগুনা উডস শহরে অবস্থিত জেনেভা প্রেসবাইটেরিয়ান গির্জায় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের কিছু আগে গুলির ঘটনা ঘটে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গুলির ঘটনায় এক ব্যক্তি মারা গেছেন, ৪ জন গুরুতর আহত হয়েছেন এবং ১ জন সামান্য আহত হয়েছেন। হতাহত সবাই প্রাপ্তবয়স্ক।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকে আটক করা হয়েছে এবং ঘটনাস্থল থেকে একটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তবে গির্জার ঠিক কোন স্থানে গুলির ঘটনা ঘটেছে, তা স্পষ্ট নয়।
স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বিভাগের মুখপাত্র ক্যারি ব্রাউন জানিয়েছেন, গোলাগুলির সময় সেখানে প্রায় ৩০ জন উপস্থিত ছিলেন। গির্জার ভেতরে থাকা বেশির ভাগই তাইওয়ানি বংশোদ্ভূত।
সন্দেহভাজন একজনকে এরই মধ্যে আটক করেছে পুলিশ
এটি কোনো বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধ কি না এবং বন্দুকধারী চার্চ কমিউনিটির কাছে পরিচিত কি না- এসব বিষয় ছাড়াও আরও অনেক কারণের দিকে নজর রাখছেন তদন্তকারীরা। এরই মধ্যে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বিভাগকে এ ঘটনায় সহায়তা করার জন্য ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এজেন্ট পাঠিয়েছে।
স্থানীয় অগ্নিনির্বাপক বিভাগ টুইটারে জানিয়েছে, প্যারামেডিকরা ঘটনাস্থল থেকে একাধিক আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসা ও পরিবহন করেছেন।
গোলাগুলির ঘটনা এমন একটি এলাকায় ঘটেছে যেখানে ক্যাথলিক, লুথারান, মেথডিস্ট গির্জা ও ইহুদি উপাসনালয় রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ছবিতে দেখা যায় গির্জার বাইরে জরুরি যানবাহন সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
রাজ্যের গভর্নর গ্যাভিন নিউজমের অফিস থেকে এক টুইট বার্তায় জানানো হয়েছে, গভর্নর পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
গভর্নর অফিসের টুইট বার্তায় বলা হয়েছে, ‘কাউকে তাদের উপাসনালয়ে যেতে ভয় পাওয়ার দরকার নেই।’
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের একটি সুপার মার্কেটে এক শ্বেতাঙ্গ যুবকের বন্দুক হামলায় নিহত হয়েছেন ১০ জন। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে চালানো ওই হামলায় আহত হয়েছেন আরও তিনজন। হতাহতের অধিকাংশই কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক।
নিউ ইয়র্কে হামলার পর সামরিক পোশাক পরা শ্বেতাঙ্গ যুবককে আটক করে পুলিশ
হতাহতদের মধ্যে রয়েছেন ১১ কৃষ্ণাঙ্গ ও দুই শ্বেতাঙ্গ। টপস ফ্রেন্ডলি মার্কেটের এই হামলার পেছনে বর্ণবিদ্বেষী ও সহিংস চরমপন্থী মনোভাবকে দুষছেন স্থানীয় প্রশাসন।
দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের বাফেলো ফিল্ড অফিসে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্পেশাল এজেন্ট স্টিফেন বেলঙ্গিয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “এই গুলির ঘটনাকে ‘ঘৃণাজনিত অপরাধ এবং জাতিগতভাবে সহিংস চরমপন্থি মামলা’ হিসেবে তদন্ত করা হচ্ছে।’’
বাফেলোর পুলিশ কমিশনার জোসেফ গ্রামাগলিয়া বলেন, ‘ওই সন্দেহভাজনের হামলায় ৯ ক্রেতা এবং সুপার মার্কেটে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
‘সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী ওই পুলিশকর্তা বন্দুকধারীকে লক্ষ্য করে একাধিক গুলি চালিয়েছিলেন। তবে বন্দুকধারীর গুলিতে তিনি নিহত হন।’
একটি দোকানের ভেতরে ওই নিরাপত্তারক্ষীর মুখোমুখি অবস্থানে এলে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ১৮ বছর বয়সের এক শ্বেতাঙ্গ যুবক নিজের গলায় বন্দুক তাক করেন। এ সময় পুলিশ তাকে অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণ করতে বলে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জ্যঁ পিয়েরে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই ঘটনা ও এর তদন্তের বিষয়ে নিয়মিত খবর নিচ্ছেন। এই ঘটনায় জো বাইডেন ফার্স্ট লেডিকে সঙ্গে নিয়ে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা ও তাদের প্রিয়জনদের জন্য প্রার্থনা করেছেন।’