উত্তর আমেরিকার একটি উন্নত দেশ কানাডা। এর অভিবাসন প্রক্রিয়া খুব সহজ হওয়ায় যোগ্য যেকোনো ব্যক্তি খুব স্বল্প সময়ে সপরিবারে দেশটিতে পাড়ি জমাতে পারে। বাংলাদেশ থেকে যারা নিজের জীবনকে নতুন করে অন্য কোনো দেশে শুরু করতে চান, তাদের পছন্দের তালিকার অন্যতম দেশ থাকে কানাডা। এ প্রবণতা শুধু বাংলাদেশিদের জন্য নয়। অন্যান্য এশীয় ও আফ্রিকার দেশগুলো, এমনকি ইউরোপের দেশগুলো থেকেও কানাডায় অভিবাসী হচ্ছে অনেকে, যা দেশটিকে একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ স্থানে পরিণত করেছে।
কিন্তু কানাডার সিটিভি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক জরিপে দেখা গেছে, দেশটির নতুন অভিবাসীদের মধ্যে যারা তরুণ রয়েছে, তাদের ৩০ শতাংশ আগামী দুই বছরে দেশটি থেকে চলে যেতে পারে।
ইনস্টিটিউট ফর কানাডিয়ান সিটিজেনশিপ (আইসিসি) দ্বারা পরিচালিত একটি জাতীয় সমীক্ষা অনুসারে নতুন কানাডীয়দের মধ্যে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ৩০ শতাংশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করা নতুন স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে ২৩ শতাংশ বলছে যে, সামনের ২ বছরের মধ্যে তাদের অন্য দেশে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যদিও জরিপে ফুটে উঠেছে, দেশটির প্রাপ্তবয়স্করা ও নতুন বাসিন্দারা মনে করেন, কানাডা অভিবাসীদের ভালোমানের জীবনযাপনের সুযোগ দিচ্ছে, এমনকি নতুন অভিবাসীদের দেশটি স্বাগতও জানাচ্ছে।
ইনস্টিটিউট ফর কানাডিয়ান সিটিজেনশিপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড্যানিয়েল বার্নহার্ড এক বিবৃতিতে বলেন, ‘কানাডা হলো অভিবাসীদের দেশ। আমরা নিজেদের বিষয়ে যে গল্পগুলো বলি তার মধ্যে একটি হলো নতুন অভিবাসীরা যেখান থেকেই আসুক না কেন আমরা তাদের স্বাগত জানাই।’
একই সঙ্গে তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, নতুন কানাডীয়দের কানাডার বিষয়ে আস্থার সংকট রয়েছে। এই জন্য অটোয়াজুড়ে বিপদের ঘণ্টা বাজানো উচিত।
যে কারণে কানাডা ছাড়তে চাইছে তরুণরা
আইসিসির জরিপে দেখা গেছে, অভিবাসীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো দেশটিতে বসবাসের খরচ। জরিপ অনুসারে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সের মধ্যে ৭৫ শতাংশ নতুন কানাডীয় বলেছেন, তারা বিশ্বাস করেন জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়তে থাকলে অভিবাসীদের দেশটিতে থাকার সম্ভাবনা কম। একই বয়সের ৪৬ শতাংশ পুরাতন কানাডীয়ও একই মত পোষণ করেছে।
গত ৩০ বছরের হিসাবে দেশটিতে এখন বসবাসের খরচ খুব দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদরাও সতর্ক করেছেন যে মুদ্রাস্ফীতির আরও বেশি হতে পারে। আবাসন এরই মধ্যে দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে। বাসস্থানের দাম ও ভাড়া উভয়ই উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।
গ্লোবাল প্রোপার্টি গাইডের তথ্যমতে ২০১৯-এর তুলনায় ২০২০ সালেই কানাডায় বাসস্থানের দাম বেড়েছে অটোয়াতে ১৯.৬৯ শতাংশ, হেলিফ্যাক্সে বেড়েছে ১৬.৩২ শতাংশ, মন্ট্রিলে ১৫.২৪ শতাংশ, হামিল্টনে ১৫.০৬ শতাংশ, টরেন্টোতে ১০.২৭ শতাংশ, ভিক্টোরিয়াতে ৭.৫৬ শতাংশ এবং ভ্যানকুভারে বেড়েছে ৭.০৬ শতাংশ।
নতুন কানাডীয়দের মধ্যে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিই একমাত্র চ্যালেঞ্জ নয়, তাদের অনেকেই ন্যায্য ও ভালোভাবে বাস করা যায়- এমন মজুরিতে সেখানে কাজ পাছে না। বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিধারী নতুন কানাডীয়দের মাত্র ২৯ শতাংশ মনে করে, দেশটিতে অভিবাসীদের তাদের কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে ন্যায্যমূল্য দেয়া হয়।
নতুন অভিবাসীরা যদি সম্ভাব্য অভিবাসীদের দেশটিতে আসতে নিরুৎসাহিত করে, তার কারণ বর্তমান নেতৃত্ব ও জীবনযাত্রার ব্যয়।
এদিকে কানাডার কেন্দ্রীয় সরকার স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মতো খাতে যে কর্মজীবী সংকট রয়েছে তা কাটাতে আগামী তিন বছরে নতুন স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এমন পরিস্থিতিতে আইসিসির নতুন জরিপ, বর্তমান পরিস্থিতিতে কানাডার দুর্বলতার জায়গাটি দেখিয়ে দিয়েছে।