ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিওপোলের নিয়ন্ত্রণ এরই মধ্যে রুশ সেনাদের হাতে। শহরের অ্যাজোভস্টাল স্টিল কারখানার নিয়ন্ত্রণ শুধু ইউক্রেনীয় সেনাদের হাতে। সেখানে ইউক্রেনীয় মেরিন ও অ্যাজোভ ব্যাটালিয়নের সেনা ছাড়াও নারী ও শিশুসহ বেসামরিক নাগরিকদের অবস্থান রয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেশ কয়েক দিন অবরোধের পর অবশেষে রুশ সেনারা অ্যাজোভস্টাল স্টিল কারখানায় সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করেছে। কারখানার ভেতরে থাকা ইউক্রেনীয় যোদ্ধারা কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছে।
টেলিগ্রামের ভিডিও বার্তায় অ্যাজোভ কমান্ডার ডেনিস প্রোকোপেঙ্কো বলেন, ‘আমি আমার সেনাদের নিয়ে গর্বিত, যারা শত্রুদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে অতিমানবিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পরিস্থিতি খুবই কঠিন।’
এরই মধ্যে রুশ সেনারা স্টিল কারখানাটিতে ঢুকে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নারী-শিশুসহ প্রায় ২০০ বেসামরিক মানুষ কারখানার ভেতরে রয়ে গেছে।
যদিও বিবিসির পক্ষ থেকে রাশিয়ার আক্রমণের বিষয়টি যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি, অ্যাজোভস্টাল কারখানায় অবস্থান করা ইউক্রেনীয়দের জীবন বাঁচাতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
জেলেনস্কি বলেন, ‘প্রত্যেকটা মানুষ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তাদের রক্ষা করতে আপনাদের (জাতিসংঘ) সাহায্য চাই।’
এ সময় তিনি জাতিসংঘ ও রেডক্রসের তত্ত্বাবধানে অ্যাজোভস্টাল থেকে ১০০ জন বেসামরিক মানুষকে বের করে আনায় জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
রাশিয়া বলছে, বৃহস্পতিবারও অ্যাজোভস্টালে অস্ত্রবিরতি দেবে রাশিয়া, যাতে আরও বেসামরিক মানুষ স্টিল কারখানাটি ত্যাগ করতে পারে। এ সময় রুশ সেনারা নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করবে এবং তাদের সামরিক কার্যক্রম স্থগিত রাখবে।
এর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অ্যাজোভস্টাল স্টিল কারখানায় সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা বাতিলের নির্দেশ দিয়ে স্টিল কারখানায় অবরোধ চালিয়ে যেতে বলেছিলেন।
পুতিন এক টেলিভিশন আলোচনায় তার বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, স্টিল কারখানাটি এমনভাবে অবরোধ করার, একটি মাছিও যাতে সেখান থেকে বেরোতে না পারে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু জানিয়েছিলেন, প্রায় ২ হাজারের বেশি ইউক্রেনীয় যোদ্ধা এখনও কারখানাটিতে রয়েছেন এবং সেখানে বিশাল ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার রয়েছে। এসব ইউক্রেনীয় যোদ্ধার মধ্যে মেরিন ও দেশটির জাতীয়তাবাদী আজভ ব্যাটালিয়নের সদস্য রয়েছেন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।