ইউক্রেনে চলছে রুশ সামরিক অভিযান। রাজধানী কিয়েভের কাছ থেকে সেনা সরিয়ে পূর্ব ইউরোপের দোনবাস ও মারিওপোলের দিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে ক্রেমলিন। এরই মধ্যে মারিওপোলের সর্বশেষ ইউক্রেনীয় সেনাদের অবস্থান অ্যাজোভস্টাল স্টিল কারখানায় অভিযান চালাচ্ছে রুশ সেনারা। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, দোনবাসে ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়েছে রাশিয়ার সেনারা।
দুই দেশের শান্তি আলোচনা এরই মধ্যে থেমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের সিইও কাউন্সিল সামিটে বক্তব্য দিতে গিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তার দেশ মস্কোর সঙ্গে এমন কোনো চুক্তি মেনে নিতে পারে না, যে চুক্তিতে রুশ সেনারা ইউক্রেনের দখলকৃত এলাকায় থাকতে পারবে।
শুধু চুক্তির বিষয়েই নয়, ইউক্রেনের সামরিক লক্ষ্যের বিষয়ে তিনি বলেছেন, যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে ইউক্রেনীয় বাহিনী রুশ সেনাদের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে, ইউক্রেন তার ভূখণ্ড থেকে রুশ সেনাদের বিতাড়িত করবে এবং তৃতীয় ধাপে তার আঞ্চলিক অখণ্ডতা সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করতে এগিয়ে যাবে।
২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে এবং পূর্ব ইউক্রেনের দোনবাসের বিদ্রোহীদেরও সমর্থন জানায়। ২০১৫ সালে এসব বিষয় নিয়ে জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যস্ততায় রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ইউক্রেন বলে আসছে, এই চুক্তিতে কোনো লাভ হয়নি তাদের। বরঞ্চ এই চুক্তির ফলে দেশটি ‘কূটনৈতিক স্থবিরতার’ মধ্যে পড়েছে।
জেলেনস্কি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, ২০১৫ সালে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যস্ততায় পূর্ব ইউক্রেনের বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে হওয়া শান্তিচুক্তির মতো ‘কূটনৈতিক স্থবিরতায়’ আবারও পড়তে পারে ইউক্রেন।
এর আগে ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিওপোল শহরের স্টিল কারখানা রক্ষাকারী কোনো সেনাকে যদি রুশ বাহিনী হত্যা করে বা দখলকৃত খেরসন শহরে স্বাধীনতার বিষয়ে গণভোট আয়োজন করে তবে মস্কোর সঙ্গে শান্তি আলোচনা বাতিলের হুঁশিয়ারি দেন প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি।
যদিও জেলেনস্কি বরাবরই বলে আসছেন, শান্তি আলোচনার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করার মত রয়েছে তার।
কিয়েভ থেকে সরে গিয়ে রুশ বাহিনীর হামলার লক্ষ্য হয়ে উঠেছে কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিওপোল ও দোনবাস শহর।
এর আগে গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৯ মে রাশিয়ার বিজয় দিবসকে সামনে রেখে ইউক্রেনে বড় ধরনের সামরিক সফলতা দেখাতে চাইছে দেশটি।
১৯৪৫ সালে নাৎসি জার্মানিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পরাজিত করার বিষয়টিকে স্মরণ করেই ৯ মে বিজয় দিবস পালন করা হয়। ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্বের ধারণা, দিনটিকে সামনে রেখেই যুদ্ধকে আরও এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্য স্থির করতে পারেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।