ইউক্রেনে চলছে রুশ সামরিক অভিযান। এরই মধ্যে উভয় দেশে দফায় দফায় হচ্ছে শান্তি আলোচনা। কিন্তু যুদ্ধ বন্ধের কোনো লক্ষণ নেই। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভীতি বাস্তব।
দ্য মস্কো টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ল্যাভরভ বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কির মনোনীত প্রতিনিধিদলের সঙ্গে চুক্তি স্থাপনের জন্য আলোচনায় যুক্ত থাকব।’
একই সঙ্গে ল্যাভরভ অভিযোগ করে বলেন, ‘সাবেক অভিনেতা জেলেনস্কি শান্তি স্থাপনের জন্য আলোচনার ভান ধরছেন, সে একজন ভালো অভিনেতা।’
তিনি বলেন, ‘আপনি যদি মনোযোগ দিয়ে তার বক্তব্য দেখেন ও পড়েন যে সে (ভলদিমির জেলেনস্কি) কী বলেছে, আপনি হাজারও অসংগতি পাবেন।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুমকি বাস্তব মত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইন্টারফেক্সকে তিনি বলেন, ‘বিপদ (বিশ্বযুদ্ধের হুমকি) গুরুতর, বাস্তব, আপনি একে অবজ্ঞা করতে পারেন না।’
যদিও তিনি আশা প্রকাশ করেন, বর্তমান লড়াই একটি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমেই শেষ হবে।
এর আগে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম রুশিয়া ওয়ানের উপস্থাপক ওলগা স্কাবেয়েভা মস্কভা ডুবে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ‘এর ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলা যেতে পারে। এটি একদম নিশ্চিত। আমরা ন্যাটোর প্রযুক্তির সঙ্গেই যুদ্ধ করছি।’
এদিকে হোয়াইট হাউসের সাবেক রাশিয়াবিষয়ক উপদেষ্টা ফিওনা হিলের মতে, ‘ইউক্রেনের পূর্ব ফ্রন্টে রাশিয়া যখন আক্রমণ শুরু করেছে, এতেই স্পষ্ট হয় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সমঝোতায় আগ্রহী নন।’
রেডিও ফোরকে দেয়া এক বক্তব্যে ফিওনা হিল বলেছিলেন, ‘পুতিন আসলে দেখতে চাচ্ছেন একটি সত্যিকার আপসের আগে যুদ্ধক্ষেত্রে কতটুকু অর্জন করা যায়।’
অর্থাৎ সমঝোতার আগে ইউক্রেনে রুশ সেনাদের একটি ভালো অবস্থানে দেখতে চান পুতিন।
ফিওনা বলেন, ‘আপসের ক্ষেত্রে যেকোনো সাফল্য বা অগ্রগতির সম্ভাবনা এখন খুবই ক্ষীণ, যতক্ষণ না রুশ বাহিনীর অভিযানকে প্রতিহত করা যায় এবং তারা যাতে মনে করে, তাদের পক্ষে আর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।’
কিয়েভ থেকে সরে এসে রুশ সেনারা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধ শুরু করেছে। ইউক্রেনও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ছে। এরই মধ্যে ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিওপোল নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দাবি করেছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
যদিও পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধ নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ঘোষণা দিয়েছেন, ‘সেখানে যতই রুশ সেনা থাক না কেন, আমরা লড়াই করব। আমরা নিজেদের রক্ষা করব।’
সোমবার ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক টুইট বার্তায় রুশ বাহিনীকে গণহত্যাকারী বাহিনী হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে, তারা (রুশ সেনারা) পূর্ব ইউক্রেনে আমাদের বাহিনীর দিকে মনোনিবেশ করেছে।
এই মাসের শুরুতেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও চেরনিহিভেড় আশপাশ থেকে রুশ বাহিনী সরিয়ে দেশটির পূর্বাঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে।
তুরস্কে শান্তি আলোচনার পর রাজধানী থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার লক্ষণ মনে হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন দাবি করেছিল, দোনবাস এলাকাকে লক্ষ্য করে রুশ সেনারা এই পদক্ষেপ নিয়েছিল।
এদিকে রুশ বাহিনী মারিওপোল দখলের দাবি করলেও দোনবাস অঞ্চল নিয়ে বিস্তারিত কোনো কিছু বলেনি। তবে কৃষ্ণসাগর ফ্লিটের প্রধান জাহাজ মস্কভাডুবির পর পুরো ইউক্রেনেই হামলা জোরদার করেছে রুশ বাহিনী।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।