বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শীর্ষ ধনী দেশ থেকে পথের ভিখারি  

  •    
  • ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ১৭:২১

অল্প সময়ের মধ্যে ধনী দেশ থেকে ভিখারি দেশে পরিণত হওয়ার জলজ্যান্ত উদহারণ হয়ে আছে নাউরু। ফসফেট নামক খনিজ সম্পদ বিক্রি করে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এ দ্বীপদেশটি দুই দশক আগেও বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী দেশে পরিণত হয়েছিল। এখন দেশটি চলে অন্যের কাছে হাত পেতে। কীভাবে এটি ঘটল?

শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ লেবানন ও শ্রীলঙ্কা সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। মুদ্রার মান পড়ে যাওয়া এবং বিদেশি ঋণে দেশ দুটির এমন দশা। এ জন্য অনেকেই দুষছে অপরিকল্পিত সরকার পরিচালনাকে। একসময়ে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী দেশ নাউরুর বর্তমান অবস্থান থেকে শিক্ষা নেয়নি কেউ।

ওশেনিয়া অঞ্চলের দ্বীপদেশ নাউরু ভ্যাটিকান সিটি এবং মোনাকোর পর বিশ্বের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ। ২১ দশমিক ৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশটিতে ১৯৭০ থেকে ১৯৮০-এর দশকে ছিল ফসফেট খনির রমরমা ব্যবসা।

তবে ব্যাপক দুর্নীতি আর ফসফেটের মজুত কমে যাওয়ায় নাউরুর অর্থনীতি ধসে পড়ে। দেশজুড়ে খনিজ সম্পদ তুলতে গিয়ে দেশটিতে এখন কোনো আবাদি জমি অবশিষ্ট নেই। মাত্র দুই দশকে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী দেশ থেকে ভাড়াটে দেশে পরিণত হয়েছে নাউরু। দেশটি চলছে এখন অন্যদের কাছে হাত পেতে।

কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক পাখির অভরায়ণ্য ছিল নাউরু। তাদের বর্জ্যে জমতে জমতে উৎকৃষ্টমানের ফসফেটের টিলা গড়ে ওঠে। একসময় এই ফসফেটের টিলা নাউরুর জন্য আশীর্বাদ হয়ে ওঠে।

কৃষিতে ব্যবহার্য রাসায়নিক সারের জন্য ফসফেট প্রয়োজনীয় উপাদান। নাউরুর এই ফসফেট ছিল উৎকৃষ্টমানের। ১৯০৬ সালে জার্মানরা প্রথম নাউরুর এই ফসফেট খনির সন্ধান পায়। ‘প্যাসিফিক ফসফেট কোম্পানি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে তারা এখান থেকে ফসফেট উত্তোলন শুরু করে।

এ অবস্থা চলতে থাকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত। যুদ্ধে জার্মানরা পরাজিত হলে ‘ব্রিটিশ ফসফেট কমিশন’-এর নামে নাউরু থেকে ফসফেট উত্তোলন চলতে থাকে। আর এর সুবিধা নেয় ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও একই অবস্থা ছিল।

দৃশ্যপট পাল্টে যায় ১৯৬৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর। ‘ব্রিটিশ ফসফেট কমিশন’ কিনে নিয়ে ‘নাউরু ফসফেট করপোরেশন’ নামে তারা পুরোদমে ফসফেট উত্তোলন করতে থাকে। আর সেই ফসফেটের প্রধান ক্রেতা ছিল পশ্চিমারা। সহজেই নাউরু সরকারের হাতে আসতে থাকে বিপুল অর্থ।

১৯৭৫ সালে নাউরুর সরকারি ব্যাংকে রিজার্ভ ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার। সে সময় নাউরুর জনসংখ্যা ছিল সাত হাজারের কাছাকাছি। মাথাপিছু আয়ের হিসাবে সে সময় কুয়েতের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হয় নাউরু।

হাতে নগদ অর্থ পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে দেশটির সরকার। নাগরিকদের উন্নত চিকিৎসা, উচ্চশিক্ষা, মানসম্মত বাসস্থানের দিকে না ঝুঁকে মনোযোগী হয় দামি বাড়ি, বিলাসবহুল হোটেল আর গলফ কোর্ট নির্মাণে। নিজেরা খাদ্য উৎপাদনের দিকে না ঝুঁকে আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে তারা।

সরকারি কর্মকর্তারা দেশের অর্থে বিদেশে বিলাসী জীবনযাপন করতে শুরু করেন। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফিজির মতো দেশগুলোয় বিলাসবহুল হোটেল নির্মাণে তারা পাচার করতে থাকেন বিপুল অর্থ। অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অবাস্তব পরিকল্পনা– সবকিছু নাউরুকে নিঃস্ব করে দিতে শুরু করে।

একসময় ফসফেটের মজুত ফুরিয়ে আসে। এই খনিজ ছাড়া আয়ের অন্য উপায় না থাকায় কমতে থাকে সরকারের আয়। চলতে থাকে বিভিন্ন দেশ থেকে ধারদেনা। আর এই দেনা পরিশোধের জন্য অদ্ভুত এক পরিকল্পনা আঁটে দেশটির সরকার। লন্ডনে কনসার্টের আয়োজন করে রাষ্ট্র চালানোর অর্থ উপার্জনের উদ্যোগ নেয় তারা। তবে সে উদ্যোগ ভেস্তে যায় অল্পদিনে। উল্টো ঘাড়ে চাপে আরও ৭ মিলিয়ন ডলারের ঋণ।

কনসার্ট আয়োজনের জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান অর্থ দিয়েছিল তারা চেপে ধরে নাউরু সরকারকে। একসময় তারা নাউরুর সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নেয়।

এদিকে ফসফেটের লোভে মাত্রাতিরিক্ত খোঁড়াখুঁড়ির ফলে আবাদি জমি বরবাদ হয়েছে নাউরুতে। পানি হয়ে পড়েছে দূষিত।

উদ্ধার পেতে নাউরু সরকার ঘোষণা দেয়, ২০ হাজার ডলার খরচ করে যে কেউ নাউরুতে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। সুযোগটা লুফে নেয় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মাফিয়ারা। বলা হয়ে থাকে, বিপুল অর্থ পাচার করে বসে তারা।

এখানেই শেষ নয়। অস্ট্রেলিয়া সরকার ২০০১ সালে নাউরুতে ভাড়ায় উদ্বাস্তু শিবির প্রতিষ্ঠা করে। অপরাধীদের এখানে পাঠাতে শুরু করে তারা। এতে দেশটির পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

সাম্প্রতিক সময়ে নাউরুর অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। অফশোর ব্যাংকিং, মৎস্য শিকার ও বৈদেশিক সহায়তার পাশাপাশি দ্বিতীয় স্তরের ফসফেটের মজুত আবিষ্কৃত হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা সচ্ছল হয়ে উঠছে একসময়ের ধনী দেশটি।

এ বিভাগের আরো খবর