ভারতে দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং ঘৃণামূলক বক্তব্যের সাম্প্রতিক ঘটনার বিরুদ্ধে যৌথ বিবৃতি দিলেন সে দেশের ১৩টি প্রধান বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারা।
বিবৃতিতে তারা বলেছেন, ‘যারা ধর্মান্ধতা প্রচার করে’ এবং ‘কথা ও কাজের’ মাধ্যমে সমাজকে সহিংসতায় উসকানি দেয়, তাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার সরকারের ‘নীরবতা’ এই সত্যটির একটি স্পষ্ট প্রমাণ যে এই ধরনের ব্যক্তিগত সশস্ত্র জনতা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও বিলাসিতা উপভোগ করে।
কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জি, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ও ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিন, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ও জেএমএম প্রধান হেমন্ত সোরেন, আরজেডি প্রধান তেজস্বী যাদব এবং জম্মু-কাশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্স প্রধান ফারুক আবদুল্লাহ যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।
অন্য স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা, ফরওয়ার্ড ব্লকের দেবব্রত বিশ্বাস, আরএসপির মনোজ ভট্টাচার্য, মুসলিম লিগের পি কে কুনহালিকুট্টি এবং সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের দীপঙ্কর ভট্টাচার্য।
শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অপরাধীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে বিরোধী দলের নেতারা তাদের বিবৃতিতে বলেন, ‘শাসক দলের একাংশ যেভাবে খাদ্য, পোশাক, বিশ্বাস, উৎসব ও ভাষাসংক্রান্ত বিষয়গুলোকে আমাদের সমাজের মেরুকরণের জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহার করছে, তাতে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা দেশে এমন ব্যক্তিদের দ্বারা ঘৃণাত্মক বক্তব্যের ক্রমবর্ধমান ঘটনা নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন, যাদের প্রতি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে এবং যাদের বিরুদ্ধে কোনো অর্থবহ এবং শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। আমরা দেশের বিভিন্ন রাজ্যজুড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, কারণ সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনাগুলো ইঙ্গিত করে যে এই ঘটনাগুলো যেখানে ঘটেছে, সেখানে এক অভিন্ন অশুভ প্যাটার্ন রয়েছে৷ আগ্রাসী সশস্ত্র ধর্মীয় মিছিলের আগে উসকানিমূলক ঘৃণাত্মক বক্তৃতা সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় উৎসাহ জোগাচ্ছে।’
নেতারা উল্লেখ করেছেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়া এবং অডিও-ভিজুয়াল প্ল্যাটফর্মগুলো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ঘৃণা ও কুসংস্কার ছড়ানোর জন্য অপব্যবহার করা হচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নেতারা। তারা বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর নীরবতায় মর্মাহত।’
বিরোধী নেতারা ঘোষণা করেন, ‘যে সামাজিক সম্প্রীতির বন্ধন শতাব্দী ধরে ভারতকে সংজ্ঞায়িত এবং সমৃদ্ধ করেছে, তা শক্তিশালী করার জন্য একত্রে কাজ করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আমাদের সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টাকারী বিষাক্ত মতাদর্শগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই এবং মোকাবিলা করতে দায়বদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আমাদের দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করি যে আমাদের দেশ তখনই সমৃদ্ধ হবে, যখন এটি পরিপূর্ণভাবে তার বৈচিত্র্যকে সম্মান করে, স্থান দেয় এবং উদযাপন করে। আমরা শান্তি বজায় রাখার জন্য এবং যারা সাম্প্রদায়িক মেরুকরণকে তীক্ষ্ণ করতে চায়, তাদের অশুভ উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করার জন্য জনগণের সকল অংশের কাছে আবেদন করছি। আমরা সারা দেশে আমাদের দলের সকল ইউনিটকে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য স্বাধীনভাবে এবং যৌথভাবে কাজ করার আহ্বান জানাই।’