গত মাসে অনলাইনে জনপ্রিয় ক্রিপ্টো গেম এক্সি ইনফিনিটির নিজস্ব ওয়ালেট রোনিন নেটওয়ার্কে হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছিল। ৬২০ মিলিয়ন ডলার চুরি করে নিয়েছে হ্যাকাররা। ঝুঁকিতে হাজার হাজার গেমারের অর্থ। ক্রিপ্টোকারেন্সির ইতিহাসে অন্যতম বড় চুরির ঘটনা এটি।
ভিয়েতনামভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্কাই ম্যাভিসের রোনিন নেটওয়ার্ক জানিয়েছিল, তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ফরেনসিক ক্রিপ্টোগ্রাফার ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কাজ করছে, যাতে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনা যায়।
এবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এক্সি ইনফিনিটির চুরি যাওয়া ৬২০ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি ইথারিয়াম সরিয়েছে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা।
যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই বলছে, ‘অনুসন্ধানে তারা নিশ্চিত হয়েছে উত্তর কোরিয়াভিত্তিক হ্যাকিং গ্রুপ ল্যাজারাস এই চুরির জন্য দায়ী।’
বলা হচ্ছে, দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক প্রযুক্তির খরচ জোগাতেই এই ধরনের চুরিতে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে উত্তর কোরিয়া।
এর আগে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সাইবার আক্রমণ চালিয়ে চুরি করা ক্রিপ্টো সম্পদ দিয়েই ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ব্যয় মেটায় উত্তর কোরিয়া।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দেশটির হ্যাকাররা সাইবার আক্রমণ চালিয়ে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার (৫০ মিলিয়ন ডলার) ডিজিটাল সম্পদ চুরি করে। এবারের সাইবার আক্রমণের লক্ষ্য ছিল উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার তিনটি ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিময় ও কেনাবেচার প্ল্যাটফর্ম।
এ ধরনের সাইবার আক্রমণ উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ও ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পে ব্যয় করা অর্থের গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
প্রতিবেদনটি ইতোমধ্যে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
এই প্রতিবেদনের আগে ‘চেইনঅ্যানালাইসিস’ নামের একটি সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান গত মাসের এক গবেষণাপত্রে দাবি করে, ২০২১ সালে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকার (৪০০ মিলিয়ন ডলার) ডিজিটাল সম্পদ চুরি করেছে।
২০১৯ সালে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছিল, গণবিধ্বংসী অস্ত্র নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় করা ১৮ হাজার কোটি টাকা (২ বিলিয়ন ডলার) দেশটি জোগাড় করেছে সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে।
যদিও নিউক্লিয়ার টেস্ট ও ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জন্য উত্তর কোরিয়া ইতোমধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই রয়েছে, দেশটি নিউক্লিয়ার ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি পরিত্যাগ করেনি।
হ্যাকিংয়ের শিকার জনপ্রিয় ক্রিপ্টোগেম এক্সি ইনফিনিটি
যে অবস্থায় পড়েছে এক্সি ইনফিনিটি
এরই মধ্যে নেতিবাচক মন্তব্যের কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্সি ইনফিনিটির প্ল্যাটফর্মে মন্তব্য করার অপশন বন্ধ করে দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।
এক্সি ইনফিনিটি খেলেন এমন একজন ব্যক্তি ড্যান, যিনি এরই মধ্যে তার অর্থ হারিয়েছেন রোনিন ওয়ালেট থেকে। তিনি বলেন, ‘আমি রোনিনের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করিনি। কারণ আমি জানি, কোনো লাভ হবে না।
‘আমি শুধু আশা করতে পারি তারা সবকিছু ঠিক করবে ও আমি আমার ইথারিয়াম (ক্রিপ্টোকারেন্সি) ফেরত পাব।’
রোনিন নেটওয়ার্ক এখনও জানায়নি গ্রাহকের অর্থের আসলে কী হয়েছে এবং তারা কখন ক্রিপ্টোকারেন্সি ফেরত পাবে।
এক্সি ইনিফিনিটি কী
এক্সি ইনফিনিটি মূলত ব্লকচেইন প্রযুক্তিনির্ভর একটি অনলাইন গেম। যেখানে একজন খেলোয়াড় বেশ কয়েকটি উপায়ে টোকেন অর্জন করতে পারেন। তবে এই গেম খেলার শুরুতে একজন গেমারকে এনএফটি পেট (কারেক্টার) কিনতে হয়। এগুলোকে এক্সি বলা হয়। এনএফটি হলো নন-ফাঞ্জিবল টোকেন। অর্থাৎ এর প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র। গেম খেলে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে কিংবা এক্সি কেনাবেচা ও ব্রিডিং করেও গেমাররা এখানে এসএলপি টোকেন জোগাড় করে, যা পরে চাইলে একজন গেমার ক্রিপ্টোকারেন্সি ইথারিয়ামে বদলে নিতে পারে। এক্সি ইনফিনিটির নিজস্ব অনলাইন ওয়ালেটই রোনিন ওয়ালেট।