ইরানের আপত্তি পাশ কাটিয়ে সৌদি আরব ও কুয়েত গ্যাসক্ষেত্র তৈরি করতে চাইছে। আর এ জন্য প্রয়োজন আলোচনা। তাই ইরানকে ডেকেছে দেশ দুটি। কারণ এই অঞ্চলের মালিকানার অন্যতম দাবিদার ইরান।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার এক বিবৃতিতে জানায়, আরাশ/ডোরা সামুদ্রিক গ্যাসক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য উপসাগরীয় মিত্ররা তাদের পুরোনো চুক্তিকে সম্মান জানাবে, যেটিকে ইরান ‘অবৈধ’ বলে দাবি করেছে।
‘সৌদি আরব ও কুয়েত এই এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনে নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করবে। তাই যে বিষয়ে সমঝোতা হয়েছিল, তা বহাল থাকবে।’
এই বিবৃতির পাশাপাশি সমুদ্র সীমানা নিয়ে আলোচনার জন্য ইরানকে নতুন করে আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে। সীমান্তসংক্রান্ত এই জটিলতা কয়েক দশকের।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সৌদি আরব ও কুয়েত এখানে একপক্ষ। চুক্তি পুনর্বহালে আলোচনার জন্য ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।
চলতি বছরের মার্চের শেষদিকে তেহরান জানিয়েছিল, চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে। তাই ওই অঞ্চলের অধিকার তাদেরই থাকবে।
ব্যর্থ আলোচনা
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এই পরিস্থিতে বিভিন্ন দেশ জ্বালানির ভিন্ন ক্ষেত্র খুঁজছে। দূরদর্শিতার অভাবে ইউরোপের দেশগুলোর যে এখন ধুঁকছে, তা থেকে শিক্ষা নিয়েছে অনেকেই।
এই অঞ্চলের সীমানা নিয়ে বৈরিতার শুরু ষাটের দশকে। সে সময় ইরান ও কুয়েত সমঝোতার ভিত্তিতে অঞ্চলের একটি অংশকে সাবেক অ্যাংলো-ইরানীয় তেল কোম্পানিকে অন্যটি রয়্যাল ডাচ শেলকে দিয়েছিল।
অঞ্চলের উত্তর অংশ তখন অগোচরে থেকে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে পুনরুদ্ধারযোগ্য মজুত প্রায় ২২০ বিলিয়ন ঘনমিটার (সাত ট্রিলিয়ন ঘনফুট)।
ইরান ও কুয়েত বিতর্কিত সামুদ্রিক সীমান্ত এলাকা (প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ অঞ্চল) নিয়ে বহু বছর ধরে আলোচনা করেও সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি।
২০০১ সালে সেখানে খনন শুরু করে ইরান। সে সময় তারা কুয়েত এবং সৌদি আরবকে একটি সামুদ্রিক সীমান্ত চুক্তিতে ডেকে আনে। চুক্তি অনুযায়ী, ওই অঞ্চলে প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান করতে পারবে সৌদি আরব ও কুয়েত।
কুয়েত চলতি বছরের মার্চে জানিয়েছিল, এই ক্ষেত্র থেকে দিনে ৮৪ হাজার ব্যারেল কনডেনসেটসহ এক বিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
ইরান-সৌদি আলোচনা
ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এসএনএসসি) একটি সংবাদ আউটলেট গত মার্চে একটি প্রতিবেদন ছেপেছিল। সেখানে বলা হয়, ইরান কারণ উল্লেখ না করেই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবের সঙ্গে একতরফাভাবে আলোচনা স্থগিত করেছে।
রিয়াদ ও তেহরানের আশা, কেবল আলোচনাই পারে বছরের পর বছর ধরে চলা উত্তেজনা কমাতে। যদিও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রত্যাশা কমে গেছে।
প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবসান ঘটে ২০১৬ সালে। সে বছর রিয়াদে এক শিয়া আধ্যাত্মিক নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রতিবাদে তেহরানে সৌদি দূতাবাসে বিক্ষুব্ধরা হামলা চালিয়ে বসে।
ইরানের ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে বিশ্বনেতাদের যখন চাপ দিচ্ছিলেন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, সে সময় ওয়াশিংটনকে সরাসরি সমর্থন জানিয়েছিল সৌদি আরব। এ ছাড়া ২০১৯ সালে সৌদির একটি তেল স্থাপনায় হামলার জন্য তেহরানকে দায়ী করে আসছে রিয়াদ।
ইয়েমেন ইস্যুতেও দেশ দুটির অবস্থান বিপরীত। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের দমনে ২০১৫ সাল থেকে বিমান হামলা চালাচ্ছে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। অন্যদিকে অস্ত্র ও অর্থ নিয়ে হুতিদের পাশে দাঁড়িয়েছে ইরান।