বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পদ হারানোর আগে ইমরানের মরিয়া চেষ্টা ব্যর্থ

  •    
  • ১০ এপ্রিল, ২০২২ ১৯:২৪

বিবিসি উর্দুর খবরে বলা হয়েছে, ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে মরিয়া ছিলেন ইমরান। নাম প্রকাশ না হলেও, সেনাবাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছিলেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে সেই কর্মকর্তা সেনাপ্রধান বাজওয়া। কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সেই বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি।        

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ হারানো যখন সময়ের অপেক্ষা, সে সময় ইমরান খান মরিয়া হয়ে এমন একটি চেষ্টা করেছিলেন, যা হতে পারত যুগান্তকারী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরানের শেষ আদেশ কার্যকর হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি উর্দু জানিয়েছে, পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের আগে আগে দেশটির সেনাপ্রধান জাভেদ বাজওয়াকে বরখাস্তের আদেশ জারি করেছিলেন ইমরান। তার আশা ছিল, এই কাজটি সরকারপ্রধান হিসেবে এই যাত্রায় টিকে যেতে সহায়তা করবে।

কিন্তু সেটি হয়নি। আর ইমরানের আদেশ প্রজ্ঞাপন আকারেই জারি হয়নি। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ হারান সাবেক ক্রিকেটার।

ইমরান খান প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেয়াদ পূরণ করতে পারেন কি না, এমন আলোচনা যখন উঠতে শুরু করেছে, সে সময় হঠাৎ করেই তার গদি নড়ে যায়। এর পেছনে নানা কারণের সঙ্গে ধারণা করা হয়, সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত সাফল্য পেয়ে তার সরকারপ্রধান হওয়ার পেছনেও সেনাবাহিনীই কলকাঠি নেড়েছে বলে ধারণা করা হয়। যদিও কোনো পক্ষ কখনও বিষয়টি নিয়ে কথাও বলেনি।

পাকিস্তান জন্মের পর থেকেই রাজনীতিতে প্রভাব খাটিয়ে আসছে দেশটির সেনাবাহিনী। তিন দফায় রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে সামরিক বাহিনী।

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান হয়তো সেই ‘অপসংস্কৃতি’ থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। যদিও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ইমরানের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পেছনে সেনা সমর্থনকেই গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়।

তবে মতাদর্শের দিক থেকে সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে ইমরান খানের মতপার্থক্য অনেক। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আমেরিকাবিরোধী। অন্যদিকে বাজওয়ার আমেরিকাপ্রীতি প্রচণ্ড।

ইমরান খান যখন ক্ষমতায় আসেন তখন পাকিস্তানের অবস্থা করুণ। রিজার্ভ তলানিতে। তার ওপর আছে জঙ্গি হামলা আর উগ্রবাদীদের অর্থায়ন করার অভিযোগ।

ক্ষমতায় এসে পররাষ্ট্রনীতিতে জোর দেন ইমরান। সৌদি আরবের কাছ থেকে নিয়ে আসেন বড় অঙ্কের সহায়তা। রাশিয়া ও চীনের সঙ্গেও সখ্য গড়ে ওঠে পাকিস্তানের।

অবস্থান কিছুটা পোক্ত করে গণতন্ত্রের দিকে নজর দেয় ইমরান খান সরকার। দেশটির সামরিক গোয়েন্দা প্রধানকে সরিয়ে দেন নানা দেনদরবার করে। এতে সেনাপ্রধানের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় ইমরান সরকারের। যদিও এসব কেউ স্বীকার করতে রাজি নয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই ইমরানের সঙ্গে নানা ইস্যুতে বিরোধ চলছিল তার জোট সঙ্গীদের। আর এসব সামলাতে গিয়ে বেড়ে যায় দুর্নীতি। জনপ্রিয়তা কমতে থাকে পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়কের।

এ ছাড়া ইউক্রেন ইস্যুতে যখন পশ্চিমারা পাকিস্তানের সমর্থন চাইছিল, তখন ইমরান মস্কো সফর করেন। তার এই সফরে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে।

এই সুযোগটাই যেন খুঁজছিল বিরোধীরা। তারা পার্লামেন্টে নানা নাটকীয়তায় প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইমরানকে সরিয়ে দেয়।

বিবিসি উর্দুর খবরে বলা হয়েছে, ক্ষমতা আঁকড়ে থাকাতে মরিয়া ছিলেন ইমরান। নাম প্রকাশ না হলেও, সেনাবাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছিলেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে সেই কর্মকর্তা সেনাপ্রধান বাজওয়া। কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সেই বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আমন্ত্রিত দুই অতিথি শনিবার রাতে হেলিকপ্টারে করে প্রধানমন্ত্রী ভবনে আসেন। প্রায় ১৫ মিনিট তারা ইমরান খানের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকের এক ঘণ্টা আগে, ইমরান সেখানে উপস্থিত থাকা এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ইমরান আশা করেছিলেন, ওই হেলিকপ্টারে ‘তার নবনিযুক্ত কর্মকর্তারা’ আছেন। ইমরান আশা করেছিলেন বাজওয়া বরখাস্ত হলে অনাস্থা ভোট পার পেয়ে যেতে পারেন তিনি।

এই প্রতিবেদনকে পরদিন রোববার ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী। তারা বলছে, এসব প্রোপাগান্ডার অংশ।

সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই গল্পে নির্ভরযোগ্য, খাঁটি এবং প্রাসঙ্গিক সূত্রের অভাব রয়েছে। এটি মৌলিক সাংবাদিকতার নীতিকে লঙ্ঘন করে।’

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান শনিবার রাতে রেকর্ড গড়েছেন। তিনিই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি অনাস্থা ভোটে পদ হারিয়েছে। তার বিপক্ষে ভোট পড়ে ১৭৪টি। যদিও ভোট শুরু হওয়ার আগে পিটিআইয়ের সদস্যরা ওয়াক আউট করেন।

বিবিসি উর্দু আরও জানিয়েছে, বাজওয়াকে বরখাস্তবিষয়ক যেকোনো বিজ্ঞপ্তিকে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করে ‘অকার্যকর’ ঘোষণা করার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।

আদনান ইকবাল নামে এক আইনজীবী সেনাপ্রধানকে অপসারণের জন্য ইমরান সরকারের জারি করা যেকোনো সম্ভাব্য প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করতে হাইকোর্টে একটি জরুরি আবেদন করে রেখে ছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ শনিবার রাত ১০টায় আদালতে পৌঁছেছিলেন।

বেশ কয়েকটি পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, সাক্ষাতে ইমরানকে ভাগ্য মেনে নিয়ে অনাস্থা ভোটে আর হস্তক্ষেপ না করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন সেনাপ্রধান বাজওয়া।

এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে ইসলামাবাদে জল্পনা চলছিল, সাবেক আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়েজ হামিদ যিনি বর্তমানে পেশোয়ারভিত্তিক কোরের কমান্ডার, তাকে পরবর্তী সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দিতে আগ্রহী ছিলেন ইমরান। এ নিয়ে সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ৬৯ বছরের ইমরান খানকে।

এ বিভাগের আরো খবর