পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব পার্লামেন্টে ডেপুটি স্পিকারের যে আদেশে বাতিল হয় তা ভুল ছিল বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধান বিচারপতি (সিজেপি) উমর আতা বান্ডিয়াল। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণা হবে আজই। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রায় ঘোষণার কথা রয়েছে।
গত ৩ এপ্রিল ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব ‘অসাংবিধানিক’ বলে খারিজ করে দেন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি।
এরপর ইমরান খানের পরামর্শ মেনে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। অন্যদিকে ডেপুটি স্পিকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে যান বিরোধীরা। সৃষ্ট সংকটের প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওইদিনই শুনানি গ্রহণ করেন।
ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল প্রায় সাড়ে ৯টায় প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্ডিয়ালের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারকের বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়।
প্রধান বিচারপতির পাশাপাশি এই বেঞ্চে আছেন বিচারপতি ইজাজুল আহসান, মোহাম্মদ আলী মাজহার, মুনিব আখতার ও জামাল খান মান্দোখেল।
শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বান্ডিয়াল বলেন, এখন প্রশ্ন হলো এরপর কী হবে। এ ক্ষেত্রে আদালত জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে বলেও জানান তিনি।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে দেশ শাসনে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ এনে গত ৮ মার্চ অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয় বিরোধী দলগুলো। এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও ভোটাভুটির জন্য অধিবেশন ডাকতে স্পিকার আসাদ কায়সারের প্রতি লিখিত আবেদন জানান তারা।
পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, লিখিত আবেদন জমার ১৪ দিনের মধ্যে স্পিকারকে আলোচনার জন্য অধিবেশন ডাকতে হবে। সে অনুযায়ী ২২ মার্চের মধ্যে অধিবেশন আয়োজন করার কথা ছিল। তবে ২২ মার্চ থেকে জাতীয় পরিষদে ওআইসির দুই দিনব্যাপী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শুরু হওয়ায় তা আর হয়নি। এর পরই অধিবেশনের তারিখ পেছায়।
বিরোধী পক্ষ গত ৩ এপ্রিল জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের পর ষড়যন্ত্রের কারণে এই প্রস্তাব তোলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন কাশিম সুরি। পরে অধিবেশন মুলতবি করেন তিনি। বিরোধী দলগুলোর তোপের মুখে পড়তে হয় তাকে। স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানান বিরোধীরা। হট্টগোল তৈরি হয়।
এদিকে এ রায়কে ঘিরে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের সামনে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
অনাস্থা প্রস্তাবে টিকে থাকতে হলে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ইমরান খানকে অন্তত ১৭২ সদস্যের সমর্থন পেতে হতো। এরই মধ্যে তিন জোটসঙ্গী মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম-পি), পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদ (পিএমএল-কিউ) এবং বালুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি) বিরোধী শিবিরে যোগ দেয়ার ইঙ্গিত দেয়ায় ব্যাপারটি অন্যদিকে মোড় নেয়।
এর আগে তিন বছরের মাথায় গত মার্চে অনাস্থা ভোট হয় ইমরানের বিরুদ্ধে। সেবার সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় অনায়াসেই উতরে গিয়েছিলেন তিনি।
দুর্নীতির দায়ে নওয়াজ শরিফ অভিশংসিত হওয়ার পর ২০১৮ সালে চার দলের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসেন তারকা ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ইমরান খান। ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত তার নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সরকারের মেয়াদ ছিল।
এদিকে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য এখন প্রধানমন্ত্রী খুঁজছে পাকিস্তান। এ প্রেক্ষাপটে বিদায় নিতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান একজনের নামও জমা দিয়েছেন।
গত ৪ এপ্রিল সাবেক প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী করতে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি পাঠান ইমরান। এদিন সকালেই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরিফকে চিঠি পাঠান রাষ্ট্রপতি আরিফ আলভি। এতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর জন্য নাম জমা দিতে বলেন তিনি।